আগে বাবার সঙ্গে বাজারের ব্যাগ টানতাম, এখন নিজেই ব্যাগ টানি: খায়রুল বাসার

অভিনেতা খায়রুল বাসার। ছবি: ফেসবুক

বুধবার দুপুরে কথা হয় অভিনেতা খায়রুল বাসারের সঙ্গে। কথার শুরুতেই জানতে চাইলাম শুটিংয়ে কি না? ফোনের ওপাশ থেকে হেসে অভিনেতা খায়রুল বাসার বললেন, ‘আমি ঈদের দু–তিন দিন আগেই সব সময় বাড়ি চলে আসি। চাঁদ রাত পর্যন্ত শুটিং করি না। এই সময়টা পরিবারের সঙ্গেই কাটাই।’
তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ শহরের সানকিপাড়া। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে ছুটে গেছেন। ফিরেই বাজার সদাইসহ নানা কাজে লেগে পড়েছেন। তবে বাজারে গিয়ে খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বাসারকে। তাঁকে দেখে অনেকে ভিড় করেন, ফলে বাজারেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কেটে যায় বলে জানালেন এই অভিনেতা। যে কারণে মাথায় ক্যাপ ও মুখে মাস্ক পরে বাইরে বের হন।

খায়রুল বাসার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিবার চাইত, খায়রুল বাসা চাকরি করুন। তবে অভিনয়কেই ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছেন তিনি।

অভিনেতা খায়রুল বাসার। ছবি: ফেসবুক

‘সেই সময়টা অন্য রকমভাবে কাটলেও এখন পরিবারের জন্য কিছু করতে পারছি—এটাই সব চেয়ে ভালো লাগে। আর এই যে বাজার করা, কেনাকাটা করা—এগুলো শৈশব থেকেই আমার অনেক ভালো লাগে।’ প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন খায়রুল বাসার।

শৈশবে বাবার হাত ধরে বাজারে যেতেন এই অভিনেতা। সেই দিনগুলো এখনো অনুভব করেন। ঘুরে ঘুরে বাবার সঙ্গে বাজার করছেন। আর বাবা মিষ্টির দোকানে বা কিছু কিনে দিতে চাইলেই বলতেন, ‘না’। লাজুক বাসারের কোনো কিছুই লাগবে না।

অভিনেতা খায়রুল বাসার। ছবি: ফেসবুক

বাসার বলেন, ‘মিষ্টি বা জামাকাপড় যা–ই বাবা কিনে দিতে চাইতেন, আমি লজ্জায় বলতাম না। বাবা আবার বাসায় এসে এগুলো মাকে বলতেন। কেন আমি কিছুই নিতে চাই না। ঈদ বা পরবর্তী সময়গুলো এভাবেই কাটত। পরে একটু বড় হওয়ার পর বাবার বাজারের ব্যাগ টানতাম। আর এখন আমি নিজেই ব্যাগ টানি।’ হেসেই কথাগুলো বললেন তিনি।

বাজারে গেলে বাবা কী কিনতেন সেগুলো সব সময় মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। সেই চর্চাগুলো এখন নিজেই করেন। বাসার বলেন, ‘বাবা বাজার থেকে অনেক কিছু কিনতেন। অতিরিক্ত বাজার করতেন। অভ্যাসটা বাবার কাছ থেকে আমিও পেয়েছি। বাজার সদাই করতে গেলে কেনা শেষ হয় না। যা পাই নিয়ে নিই। এ জন্য পরিবার থেকে শুনতে হয় বাবার মতোই।’

অভিনেতা খায়রুল বাসার। ছবি: ফেসবুক

কথা বলতে বলতে ফিরে গেলেন শৈশবের ঈদের দিনগুলোতে। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম ঈদের আগের দিন কেমন কাটত? খায়রুল বাসার জানান, পোশাক নিয়েই সবচেয়ে বেশি মজার ঘটনা ঘটত। চাইতেন নিজের পোশাক কাউকে না দেখাতে। এই জন্য চাঁদ রাতে ঈদের পোশাক চালের ড্রামে লুকিয়ে রাখতেন। পরের দিন চালের মধ্যে থেকে চাঁদ বের করার মতো আনন্দ হতো। সেই পোশাক পরে নামাজে যেতেন। সারা দিন কাটিয়ে দিতেন।

এই অভিনেতা বলেন, ‘এখনো ঈদটা অনেক ভালো কাটে। এটাই ভাবতে ভালো লাগে সবার জন্য কিছু করতে পারছি। কিন্তু দেখা যায়, আশপাশে অনেকের হয়তো অনেক প্রত্যাশা থাকে, সেগুলো পূরণের চেষ্টা করি। না পারলে নিজেরও কষ্ট লাগে। আবার অনেকেই হয়তো ভাবে আমি এখন আগের মতো কন্টাক্ট করি না বা তাদের জন্য কিছু করতে পারছি না। এটা নিয়ে ভুল বোঝেন। আবার দেখা যায় শুটিং শেষ করে হয়তো অনেকের সঙ্গে কথা হচ্ছে না। তারা হয়তো ভাবছে আমি তাদের একজন না, আসলে আমি সবার। দেখা যায় শুটিং শেষে একটু অলসতা চলে আসে, বিশ্রাম নিই। পরে আবার ব্যস্ত হয়ে যাই। এ জন্য অনেকেই ভুল বোঝেন। তাঁরা আমার মতো করে ভাবেন না বলেই ভুল বোঝেন। আমি সবার মাঝেই আছি।’

খায়রুল বাসার। ছবি: সংগৃহীত

এবার ঈদে খায়রুল বাসার অভিনীত ১৫টির বেশি নাটক প্রচারিত হবে। কিছু নাটক অনেক আগেই শুটিং করেছেন। নাটকের মধ্যে রয়েছে, ‘অ-প্রেমের কবিতা’, ‘ভালোবেসে’, ‘ফিরব বলে’, ‘শেফালী ফুলের নামে’, ‘ভালো মানুষ’, ‘চাবিওয়ালা’সহ একাধিক নাটক।

এ ছাড়া এই অভিনেতাকে দেখা যাবে সিনেমা ‘কাজলরেখা’য়। কাজগুলো নিয়ে কতটা আশাবাদী জানতে চাইলে বাসার বলেন, ‘আমি তো নায়কোচিত ভঙ্গিটা কখনোই পছন্দ করি না। আমি যেমন পছন্দ, তেমনই কাজগুলো করি। আমাদের কাজের মধ্যে শৈল্পিক দিকটাকে গুরুত্ব দিই। ট্রেন্ডের বাইরে সমসাময়িক গল্পগুলো আমার ভালো লাগে।’

ঈদ নাটকের পোস্টারে বাসার ও তানজিন তিশা
ছবি: সংগৃহীত