‘তানজিন তিশাকে ক্ষমা চাইতে হবে’

তানজিন তিশাফেসবুক থেকে

টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পী তানজিন তিশা কিছুদিন ধরে অভিনয়ের বাইরের নানা ঘটনায় আলোচিত। এসব ঘটনা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও জানান তিনি। একই সময়ে তিশার বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগও করেন বিনোদন অঙ্গনের সাংবাদিকেরা। এর মধ্যে গতকাল সোমবার বিকেলে পরিবার ও কাছের মানুষদের পরামর্শে আইনি সহায়তা নিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান তিশা। এরপর তাঁকে ঘিরে আলোচনা আরও চাঙা হয়। গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিককের প্রশ্ন করার ধরন ও অডিও রেকর্ড ফাঁসের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন। এদিকে তিশা যেসব কথা বলেছেন, তা অপেশাদার আচরণ বলে মনে করেছেন সাংবাদিকেরা। এমন আচরণের প্রতিবাদে বিনোদন সাংবাদিকেরা আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় ঢাকার কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও রেডিওতে কর্মরত বিনোদন বিভাগের সংবাদকর্মীরা এতে অংশ নেন।

জানা গেছে, গত কয়েক দিনে তানজিন তিশা তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার কথা ডিবি কর্মকর্তাদের জানান। সেই সঙ্গে তাঁদের পরামর্শও চান। সম্প্রতি একটি ফোনালাপ ফাঁস হয় অভিনেত্রীর, সেটি কীভাবে এবং কার মাধ্যমে ছড়িয়েছে, সে ব্যাপারেও লিখিত অভিযোগ করেন তিশা।

কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিনোদন সংবাদকর্মীরা।
ছবি : প্রথম আলো

ঘুমের ওষুধ খেয়ে গত বুধবার রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিশা, পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, অভিনেতা মুশফিক আর ফারহানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করায় মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিশা।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তানভীর তারেক বলেন, তানজিন তিশার এমন অপেশাদার আচরণ মোটেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি যা করেছেন, তার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে, অনুতপ্ত হতে হবে।

তানজিন তিশা

প্রতিবাদ সমাবেশে একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ বলেন, একজন সাংবাদিক কোনো তথ্য পেলে সেটি যাচাই-বাছাই করবেন এবং সেই তথ্যের সত্যতা জানতে চাইবেন সংশ্লিষ্ট শিল্পী-কুশলীদের কাছ থেকে। এটাই সাংবাদিকতার প্রথম সূত্র। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম তামিমও একই কাজ করেছেন। তিনি একটি তথ্য পেয়ে সেটি এসএমএস পাঠিয়ে তিশার কাছে জানতে চেয়েছেন। এরপর তিশা ফোন করে তামিমসহ সাংবাদিকদের একচেটিয়া হুমকি-ধমকি দিলেন। উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এমনকি পরে উল্টো তিশা ডিবি অফিসে গিয়ে তামিমের নামে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘তানজিন তিশা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা না চাইলে আমরা তার সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকব। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক নাজমুল আলম রানা বলেন, ‘তিশার যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তবে সে আমাদের জানাতে পারত। কিন্তু সেটা না করে সে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। পাশাপাশি ডিবি অফিসে গিয়ে অভিযোগ করেছে। আমি মনে করি, তার এমন আচরণ অপেশাদার। সে যদি তার অপেশাদার আচরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করে, তবে আমরা যে যার জায়গা থেকে সাংবাদিকেরা তার সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকব।’

তানজিন তিশার অপেশাদার আচরণের প্রতিবাদে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিনোদন সংবাদকর্মীরা।

গতকাল বিকেলে ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিশা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। এ জন্য ডিবি কার্যালয়ে এসেছি। আমার মনে হয়, ডিবি অফিস একটা আস্থার জায়গা। আমরা শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিসহ সব প্ল্যাটফর্মের যারা বিপদে পড়ি, বিশেষ করে যারা সাইবার বুলিং বা হ্যারাসমেন্টের শিকার হই, তারা এখানে আসে, হারুন স্যারের হেল্প নেয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি যদি স্ট্যাটাস দিয়ে কোনো বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, তাহলেও আমাকে বুলিং করা হচ্ছে। এ জন্য আমার কাছে মনে হয়েছে, হারুন স্যারের কাছে এলে, স্পেশালি ডিবি অফিসে এলে আমি তাদের সহযোগিতা পাব। তাদের সহযোগিতায় আপনাদের বিষয়টি কিছুটা স্পষ্ট করতে পারব।’

তানজিন তিশা। ফেসবুক থেকে

সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে তখন তিশা বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট একজন সাংবাদিককে এ কথা বলেছি, সবাইকে নয়। সেদিন মানসিক ও শারীরিকভাবে আমি সুস্থ ছিলাম না। ফলে কারও ফোন রিসিভ করতে পারিনি। কিন্তু তামিম নামের একজন সাংবাদিকের মেসেজ পেয়ে তাকে ফোন ব্যাক করি। মেসেজটা এমন ছিল যে একজন নারী হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক সেনসেটিভ। আমার মনে হয়েছে, কোনো নারীকেই সে এই প্রশ্নটা করতে পারে না, যেটা সে আমাকে করেছে। সেই টেক্সট আমি সবার সামনে প্রকাশ করতে পারব না। যদি কেউ দেখতে চান, আমি পারসোনালি দেখাব। এরপর আমি হাইপার হয়ে যাই। তখন তাকে বলি, এমন সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে যদি লেখেন, তাহলে আমি মামলা করব, উড়িয়ে দেব। এরপর সে অডিও রেকর্ডটি ফাঁস করে দেয়। সেখানে কিন্তু একবারও সে বলেনি আমাকে কী প্রশ্ন করা হয়েছে। সেই বিষয়ে অভিযোগ জানাতেই এখানে আসা।’

এদিকে ক্ষমা চেয়ে লেখা পোস্টটি ডিলিট করা প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘পোস্ট দেওয়ার পর দেখলাম, সেটা নিয়েও অনেক বুলিং হচ্ছিল। আমার মনে হয়েছে, এই একটা স্ট্যাটাস পর্যাপ্ত নয়। এ কারণেই ডিলিট করা।’

উল্লেখ্য, ১৬ নভেম্বর রাতে অসুস্থ হয়ে মধ্যরাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। তখন খবর বের হয়, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তিনি। যদিও এক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। পরে ফেসবুক পোস্ট ও লাইভে এসে জানান, তিনি ফুড পয়জনিংয়ের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তানজিন তিশা সর্বশেষ ২০ নভেম্বর ডিবি অফিসে গিয়ে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ তোলেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম তামিমের বিরুদ্ধে। এর আগে তিশা সাংবাদিকদের ‘উড়িয়ে’ দেওয়ার হুমকি দেন, আবার সোশ্যাল হ্যান্ডেলে এর জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেন। যদিও সেই ক্ষমা চাওয়ার পোস্ট পরে মুছেও ফেলেন তিনি।