‘হাসপাতালের ৬০ দিন ছিল আমার জন্য একটা রণক্ষেত্র’

শারমিন আঁখি। ছবি: ফেসবুক

নিয়মিত অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। একটু একটু করে সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছিলেন। হঠাৎ দুই বছর আগে একটি শুটিংয়ে মেকআপ রুমে বিস্ফোরণ জীবনটাই বদলে দেয় এই অভিনেত্রীর। সেদিন দগ্ধ হন অভিনেত্রী শারমিন আঁখি।

সেই থেকে তাঁর জীবনটাই যেন এলোমেলো হয়ে যায়। সেই হাসপাতালে থাকা সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে আঁখি বলেন, ‘হাসপাতালের ৬০ দিন ছিল আমার জন্য একটা রণক্ষেত্র।’

দুই বছর আগে ঠিক আজকের দিনে শুটিং বাড়িতে বিস্ফোরণে এই অভিনেত্রীর শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তারপর দীর্ঘ দুই মাসের মতো তিনি ভর্তি ছিলেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। পরবর্তী সময়েও বাসায় ফিরে তাঁকে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়েছে। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে কাজেও নাম লেখান আঁখি। দুই বছরের সেই ট্রমা যেন এখনো কাটেনি।

শারমিন আঁখি। ছবি: ফেসবুক

অতীতের কথা স্মরণ করে আঁখি বলেন, ‘আমি অসুস্থ হওয়ার আজ ৭৩০তম দিন। বেঁচে ফেরার দুই বছর হলো। হাসপাতালের ৬০ দিন ছিল আমার জন্য একটা রণক্ষেত্র। ওই রণাঙ্গনের মুহূর্তগুলো কখনো শেয়ার করা হয়নি। এই প্রতিটি মুহূর্ত আমার বেস্ট গিফট অব লাইফ। আমার অনুপ্রেরণা, শক্তি, উৎসাহ আর উদ্দীপনা। জীবনকে নতুন করে জানতে শেখা। নিজেকে নতুন করে ভালোবাসতে শেখা। পৃথিবীকে নতুন চোখে দেখতে শেখা।’
অসুস্থ হওয়ার পরে জীবনকে নতুন করে আবিষ্কার করেন আঁখি। এই সময়ে নিয়ম মেনে তাঁকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। কাজে ফিরতে উৎসাহ জুগিয়েছেন কাছের মানুষেরা। ‘দোয়া তো দেখা যায় না, অনুভব করা যায়। আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমাকে খুব ভালোবাসেন আর অনুভব করি শুধু কাছের মানুষ না, দূর থেকে দূরের মানুষদেরও আমার জন্য মন উজাড় করা দোয়া ছিল। না হলে আজ আমার এই লেখার হাতটাও চলত না। পৃথিবীটা সত্যিই সুন্দর। আর তার চাইতেও সুন্দর পৃথিবীর মানুষগুলো। আমার সব সহকর্মী, বন্ধু, আত্মীয় পরিজন সবার জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, সুস্থ আছি, সুন্দর আছি।’—বলেন আঁখি।

গত বছরের একটি ছবিতে শারমিন আঁখি। ছবি: ফেসবুক

দুই বছর আগে শুটিং রুম বিস্ফোরণে জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েন শারমিন আঁখি। সেই সময়ের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে তাঁর স্বামী নাট্য নির্মাতা রাহাত কবির তখন বলেছিলেন, ‘আঁখির হাত, পা ও মুখ ঝলসে গিয়েছিল। পোড়া চামড়ার কিছু অংশ খুলে পড়ছিল। প্রথম দিনেই চিকিৎসকেরা আঁখির হাতের কনুই পর্যন্ত চামড়া কেটে ফেলেছেন, ঊরুর চামড়াও কাটতে হয়েছে। মুখের কিছু অংশ পুড়েছে। তাঁর দুই হাত-পা মুড়িয়ে গেছে। কথা বলতে পারলেও আঁখি মানসিকভাবে কিছুটা চিন্তা করছে।’

শারমিন আঁখি প্রথম আলোকে আরও জানান, এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়ম মানতে হয়। রোদে একদমই যাওয়া নিষেধ। পুরো সেরে উঠতে আরেকটু সময় দরকার। পরে তিনি আবার কাজে নিয়মিত হতে চান।

আগের একটি ছবিতে শারমিন আঁখি। ছবি: ফেসবুক

‘ভালোবাসা দিবসের কাজে কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। পরে চিকিৎসক জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শুটিং করতে না করে দেয়। এখনো বিশ্রামেই আছি। দোয়া করবেন, যেন দ্রুত সেরে উঠতে পারি। বেঁচে থাকলে কাজ করা যাবে।’—বলেন আঁখি।  

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন শারমিন আঁখি। শুরুতে বেশ কিছু কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১০ সালে নার্গিস আক্তারের ‘ভালোবাসা কি করে ভালো হয়’ নাটকের অভিনয়। পরে নাটক, বিজ্ঞাপন, স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ও মডেলিং শুরু করেন। পরে ২০১৮ সালে নাম লেখান সিনেমায়। প্রথম সিনেমা ছিল ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’।

আরও পড়ুন