নাট্যপরিচালকদের সংগঠনে কী হচ্ছে

নির্বাচিত স অনন্ত হিরা ও কামরুজ্জামান সাগর
ছবি: ফেসবুক

গত মার্চে অনুষ্ঠিত হয় ছোট পর্দার নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন অনন্ত হিরা ও কামরুজ্জামান সাগর। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাঁদের নিয়ে অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করেন নির্বাচিত সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়। সংগঠনের ২১ সদস্যের মধ্যে ১৭ জন প্রধান দুই নেতার কার্যক্রমের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে চিঠি দেন। নির্বাচিত পক্ষ সেটা আমলে নেয়নি। পরে ১৭ জন সদস্য মিলে ডিরেক্টরস গিল্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কায়সার আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফিরোজ খানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন।

গত ৩০ অক্টোবর ডিরেক্টরস গিল্ডের অফিসে বর্তমান নির্বাচিত কমিটির ওপর অনাস্থা প্রকাশ করা ১৭ জন মিটিং করে এ সিদ্ধান্ত নেন। সেই মিটিংয়ে উঠে আসে, সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। তাঁরা ‘একনায়কতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। নির্বাচনের পর প্রতি মাসে একবার ইসি মিটিং করার কথা থাকলেও সেখানে ১৭ জনের কেউ ডাক পাচ্ছেন না। সভাগুলো হচ্ছে কি না, সেটাও তাঁরা জানেন না।

পরিচালক কায়সার আহমেদের ওপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পড়েছে। তিনি মানিকগঞ্জে শুটিংয়ে ব্যস্ত। সেখান থেকে গত সোমবার বলেন, ‘নিয়মিত মিটিংগুলো না হওয়ায় সদস্য দু–চারজন কথা বলছিলেন। সেটা নিয়ে সবার সঙ্গেই কথা হচ্ছিল। আমরা চাইছিলাম বিষয়টার সুরাহা হোক। কথা বলতে গিয়ে দেখলাম, ১৬ জন এক হয়েছেন। তাঁদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর আস্থা নেই। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু লাভ হলো না। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী, ১৬ জন অনাস্থা প্রকাশ করলে পরিস্থিতি ভিন্ন হয়। আমরা চাইছিলাম, কোনো ঝামেলা না হোক, কিন্তু হয়ে গেল।’

পরিচালক কায়সার আহমেদের ওপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পড়েছে
ছবি: ফেসবুক

সমিতির একাধিক সদস্য জানান, অনাস্থা আনার চিঠি দেওয়ার পর হঠাৎ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেখানে নির্বাচিত এই ১৭ সদস্যকে ‘অবৈধ’, ‘তথাকথিত’, ‘ষড়যন্ত্রকারী, ‘দুষ্কৃতকারী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এতে তাঁরা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হন। কায়সার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দুষ্কৃতকারী তাঁরা কীভাবে বলেন। এটা তাঁরা বলতে পারেন না। তাঁরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে পারতেন, সেটাই সবাই আশা করেছিলেন। কিন্তু অসম্মানজনক কথা বলার কারণে ১৬ জন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা অনাস্থা এনে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে আমি আগে নির্বাচিত সহসভাপতি থাকায় সাংগঠনিক নিয়মে আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে।’

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান জানান, প্রথমে অনাস্থা আনার বিষয়টি জানিয়ে সমিতিতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেটা সদস্যদের তখনো জানানো হয়নি। সেখানে সংগঠন থেকে সাত দিনেও এর কোনো উত্তর দেওয়া হয় না। বরং সেই চিঠি পেয়ে তাঁদের কেউ কেউ ফেসবুকে উসকানিমূলক কথা লিখতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ চিঠি পেয়ে ফেসবুকে এমনভাবে লিখেছেন, সেটা দেখলে মনে হয়, আমরা সমিতির কেউ নয়। সুরাহা চেয়ে কোনো লাভ হবে না টাইপের নেতিবাচক মনোভাব ছিল। পরবর্তী সময়ে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ, ১৭ জন সদস্য না থাকলে সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। কিন্তু সংগঠনের দিকে তো অনেকেই চেয়ে থাকেন, তাঁদের প্রয়োজন আছে। যে কারণে এর গতিশীলতা আনতে কার্যনির্বাহী সদস্যদের নিয়ে কাজ শুরু হবে। শিগগির সাধারণ সভা করব। সেখানে যে দিকনির্দেশনা নিয়ে কথা হবে, সেভাবেই সংগঠন চলবে।’

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান
ছবি: ফেসবুক

কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গত বৃহস্পতিবার কায়সার আহমেদ ও ফিরোজ খান সদস্যদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল কার্যনির্বাহী সভা করেন। সাংগঠনিক সংকট বিবেচনায় রেখে ২৪ নভেম্বর সাড়ে তিনটায় সাধারণ সভার আহ্বান করেছেন। সেদিন নির্মাতাদের শুটিং না রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে নির্বাচিত হওয়ার পরে সাংগঠনিক কার্যক্রম সঠিকভাবে করছেন কি না, ১৭ জনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার জন্য ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি অনন্ত হিরা ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগরকে গত সোমবার ও আজ শুক্রবার ফোন করা হয়। অনন্ত হিরাকে গতকাল বৃহস্পতিবার খুদে বার্তা পাঠানো হয়। গত সোম ও মঙ্গলবার এবং আজ কামরুজ্জামান সাগরকে সাতবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাওয়া হয়, আপনাদের প্রতি নির্বাচিত ১৭ জন সদস্য অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, আপনারা প্রতি মাসে সভা করতে পারছেন না, নিজেরাই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—এমন অবস্থায় ১৭ সদস্য মিলে সংগঠনে গতিশীলতা আনতে নতুন করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেছেন। জানা গেছে, তাঁরা কোরাম পূরণ করে সভার আয়োজন করতে যাচ্ছেন। এটা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আপনার বক্তব্য কী? তিনি কিছুই জানাননি।

তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সবুজ খান
ছবি: ফেসবুক

নির্বাচিত ২১ সদস্যের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা এবং তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সবুজ খান রয়েছেন নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে। সভাপতি অনন্ত হিরা ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগরকে না পাওয়া গেলেও তাঁদের সঙ্গে থাকা তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সবুজ খান সোমবার বলেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার পরে সভা হয়েছে। কিন্তু এই তিন মাস কোনো সভা হচ্ছে না। কারণ, একটা পক্ষ আসছে না। এখন কোরাম পূরণ না হলে সভা হয় না। গত মাসে জরুরি সভা ছিল, সেখানেও একটি পক্ষ আসেনি। তারা অনাস্থা প্রকাশ করেছে। তাদের যুক্তি, গঠনতন্ত্র মানা হচ্ছে না। অসাংবিধানিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ষড়যন্ত্র করে অনাস্থা প্রকাশ করেছে। কিন্তু অনাস্থা প্রকাশের মতো এমন কোনো কিছু গঠনতন্ত্রে নেই। আর এর আগে যাঁরা তাঁদের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আওলাদ ভাই আমাদের মিটিংয়ে এসেছিলেন। আমাদের সঙ্গে আছেন।’ অনাস্থা প্রকাশ করা নেতারা জানান, সদস্য সৈয়দ আওলাদ তাঁদের সভাতেও ছিলেন।

সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু
প্রথম আলো

এর আগে সংগঠনের সভাপতি ছিলেন সালাউদ্দিন লাভলু। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠন। আমার সব সময় অন্য সংগঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। আমাদের নির্মাতাদের একটা মানসম্মান আছে। সংগঠনে এমন ঘটনা আশা করিনি। নতুন দুজন দায়িত্বে যাওয়ার পর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনাটা সবাইকে ডেকে সুরাহা করা উচিত ছিল। সবাইকে নিয়ে বসলে এমন পরিবেশ তৈরি হতো না। এভাবে চলতে থাকলে অন্য সংগঠন আমাদের নিয়ে কী ভাববে?’