‘মনে হচ্ছে নতুন করে টেলিভিশনে গেছি’

বিটিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চ্যানেল আই কার্যালয়ে মুস্তাফা মনোয়ার স্টুডিওর উদ্বোধন শেষে স্টুডিওর প্রবেশপথে স্থাপিত ম্যুরালের সামনে চ্যানেল আইয়ের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের সঙ্গে মুস্তাফা মনোয়ার। (ইনসেটে) ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় ফেরদৌসী রহমানের এ গানের পরিবেশনা দিয়েই শুরু হয় যাত্রা

৫৮ পার করে আজ ৫৯ বছরে পা দিল বাংলাদেশ টেলিভিশন। নানা আয়োজনে দিনটি উদ্‌যাপনের উদ্যোগ নিয়েছে চ্যানেলটি। জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে নানা পরিবেশনাও। যার গানের পরিবেশনা দিয়ে আজকের বাংলাদেশ টেলিভিশনের পথচলা শুরু সেই বরেণ্য শিল্পী ফেরদৌসী রহমানও থাকবেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে।
‘ওই যে আকাশ নীল হলো আজ/ সে শুধু তোমার প্রেমে/ ওই যে বাতাস বাঁশি হলো আজ/ সে শুধু আমার প্রেমে...’, ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় ফেরদৌসী রহমানের এ গানটি দিয়েই শুরু হয় টিভি চ্যানেলটির প্রথম গানের অনুষ্ঠান। গানটি লিখেছিলেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল। সুর করেছিলেন আনোয়ার উদ্দীন খান। এরপর তিনি গেয়েছিলেন একটি ভাওয়াইয়া গান। ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া গানটি তরুণ প্রজন্মের শিল্পীর কণ্ঠে নতুন করে শোনা যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিটিভি কর্তৃপক্ষ।

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় ফেরদৌসী রহমানের এ গানের পরিবেশনা দিয়েই শুরু হয় যাত্রা। ছবি: সংগৃহীত

৫৮ বছরে অনেক বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান যেমন বানিয়েছে বিটিভি, তেমনি কালজয়ী নাটকের জন্মও দিয়েছে রাষ্ট্রীয় চ্যানেলটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটিতে ওই সব অনুষ্ঠান ও নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের মিলনমেলা হবে বলে জানালেন বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নাসির মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমরা দুই ধাপে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সাজিয়েছি। সকাল আটটার সংবাদের নাটকের ও সংগীতের জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের নিয়ে স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান থাকবে। ফাঁকে ফাঁকে গানও গাইবেন। বেলা তিনটার পর নিয়মিত আয়োজনের পাশাপাশি বিটিভি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে। রাত আটটার সংবাদের পর বিটিভি স্টুডিও থেকে বিভিন্ন প্রজন্মের শিল্পীরা গান গাইবেন। বিটিভি নিয়ে তাঁদের স্মৃতিচারণাও করবেন।’
বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান নির্বাহী মাহবুবা ফেরদৌস জানালেন, রাত সাড়ে আটটা থেকে বিটিভিতে যেসব শিল্পী গাইবেন, তাঁরা হলেন শাহীন সামাদ, ফেরদৌস ওয়াহিদ, কিরণ চন্দ্র রায়, অদিতি মহসিন, শামা রহমান, শাহনাজ বেলী, প্রিয়াঙ্কা গোপ, কোনাল, সাব্বির ও ব্যান্ড ডিফারেন্ট টাচ।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘রুচিশীল অনুষ্ঠান নির্মাণের পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান নির্মাণেও কান্ডারির ভূমিকা পালন করে আসছে বিটিভি। ৫৯ বছরে বিটিভির সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ দেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছানো।’ ঢাকায় ডিআইটি ভবনে (বর্তমান রাজউক ভবন) যাত্রা শুরু করেছিল বিটিভি। মুক্তিযুদ্ধের পর নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম রাখা হয়।

চ্যানেল আইয়ের তেজগাঁও কার্যালয়ে মুস্তাফা মনোয়ার স্টুডিওর উদ্বোধন শেষে স্টুডিওর প্রবেশপথে স্থাপিত ম্যুরালের সামনে চ্যানেল আইয়ের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের সঙ্গে মুস্তাফা মনোয়ার
ছবি: মনজুর কাদের

বিটিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চ্যানেল আইয়ের আয়োজন


বিটিভির জন্মদিনে চ্যানেল আই নিজেদের তেজগাঁও প্রাঙ্গণে আয়োজন করেছে বিশেষ অনুষ্ঠানের। বিটিভিতে একসময় যাঁরা নিয়মিত কাজ করতেন, তাঁরা চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে আসেন। পাশাপাশি এই সময়ের তরুণ শিল্পীরাও চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে হাজির হন। বিটিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগের দিন চ্যানেল আই ভিন্নধর্মী একটি আয়োজন করেছিল। টেলিভিশন চ্যানেলটির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের নামে একটি স্টুডিওর নামকরণ করেছে। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় গুণীজনদের উপস্থিতিতে নামফলক উন্মোচন করা হয়। স্টুডিওটি নামকরণ করা হয়েছে ‘মুস্তাফা মনোয়ার স্টুডিও’। মুস্তাফা মনোয়ার গুণী শিল্পী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষক। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিকাশে রয়েছে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি বাংলাদেশের পাপেট শিল্পকে দিয়েছেন নতুন মাত্রা। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো টেলিভিশন স্টুডিও শিল্পীর নামে নামকরণ হলো।

স্টুডিওর নামফলকটি নির্মাণ করেন শিল্পী আজহারুল ইসলাম। তিনি মিক্সমিডিয়ায় দেশীয় শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কী দিয়ে যে শুরু করব, তা মাথায় আসছে না। এমন একটা বিরাট সম্মান আমাকে দেওয়া হলো, আমি জানতামই না যে এটা আমি পেতে পারি। এ সম্মান আমাকে অদ্ভুতভাবে অনুপ্রাণিত করছে আবার। আবার যেন মনে হচ্ছে, নতুন করে টেলিভিশনে গেছি। আজকের এই সম্মান আমার বাকি জীবনে পাথেয় হয়ে রইল।’

অনুষ্ঠানে চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘চ্যানেল আই বাংলাদেশের চিরায়ত শিল্প-সংস্কৃতিকেই ধারণ করে। যা আমরা শিখেছি বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে। সেখান থেকে পাওয়া শিক্ষা, আচার আমরা এখনো মেনে চলার চেষ্টা করি। যাঁরা আমাদের টেলিভিশন শিখিয়েছেন, তাঁদের একজন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে এই শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

নিজের নামে চালু হওয়া স্টুডিওর প্রবেশপথে স্থাপিত ম্যুরালের সামনে শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার
ছবি : প্রথম আলো

চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ‘যাঁদের হাতে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ, তাঁদের অন্যতম শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি আমাদের মনন তৈরি করেছেন। কিংবদন্তি এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে ওনার শিল্পের আলোয় আমরা নিজেরাও একটু আলোকিত হতে চেয়েছি।’

অনুষ্ঠানে গুণীজনদের বক্তব্যের পাশাপাশি পাপেট শোর আয়োজনও ছিল। উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আই পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জহির উদ্দিন মাহমুদ, মুকিত মজুমদার, শিল্পী কেরামত মাওলা, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও রেজানুর রহমান, চিত্রশিল্পী আবদুল মান্নান ও মনিরুল ইসলাম, অভিনেতা শামস সুমন প্রমুখ।