কাজের ব্যস্ততা দিন দিন বেড়েই চলছে, এর মধ্যে মানসিকভাবে কেমন আছেন?
মোশাররফ করিম : আছি ভালোই। কিন্তু টানা ব্যস্ততায় সময় কেটে যাচ্ছে। যথারীতি ঈদের আগে শুটিংয়ে চাপ বেশি থাকে। এবারও তা–ই। সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতে অভ্যস্ত। ভালোই চলছে।
প্রথম আলো :
একটা সময় ছিল, যখন দর্শকের চাহিদার কারণে ঈদে আপনার নাটকের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি ছিল। এখন নাটকের সংখ্যা কম কেন?
মোশাররফ করিম : দেখুন, আমি সব সময়ই চেয়েছি কাজ করে যেতে। আবার নিজেকেও সময় দিতে। কিন্তু সবার চাহিদার কারণে অনেক সময় বাধ্য হয়েও অনেক নাটক করতে হয়েছে। মানবিক কারণে করতে হয়েছে। অনেক বিষয় থাকে যেগুলো মেনে নিয়ে কাজ করতে হয়। আগের মতো সেই এনার্জি এখন স্বাভাবিকভাবেই থাকবে না। নিজেকে বেশি সময় দিতে হয়।
ঈদে কতগুলো নাটকে আপনাকে দেখা যাবে?
মোশাররফ করিম : গত কয়েক বছরের ঈদের তুলনায় এবার কাজের সংখ্যা বেশি হবে। নাটকের সংখ্যা ২০ বা ৩০টির বেশিও হতে পারে। বছরের বিভিন্ন সময় শুটিং করা অনেক নাটক ঈদে প্রচারিত হবে। অনেককে আগেই কথা দেওয়া ছিল। সেগুলো করতে হয়েছে, এখনো করছি। সে কারণেই এবার নাটকের সংখ্যা বেশি।
প্রথম আলো :
এবার নাকি নাটকের গল্পে পরিবর্তন এসেছে, আপনি সবচেয়ে বেশি কোন ধরনের গল্প পেয়েছেন?
মোশাররফ করিম : আসলে ঘুরেফিরে ক্লিক করবে এমন নাটকই পরিচালকেরা চান। এর সঙ্গে প্রযোজকের অর্থ জড়িত। লগ্নি ফিরিয়ে আনার তাগাদা থাকে। যে কারণে সবাই সাধারণত বিনোদননির্ভর কাজগুলোই করতে চান। তবে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ঘরানার কাজেরও চেষ্টা থাকে। এবার তেমন বেশ কিছু কাজ করেছি। সেগুলোও হয়তো দর্শকদের বিনোদন দেবে।
শোনা যাচ্ছে কমেডির পাশাপাশি এবার মানবিক, জীবনঘনিষ্ঠ গল্পের দিকে ঝোঁক বেশি...
মোশাররফ করিম : সব ধরনের গল্পই তো হতে হবে। দর্শকের চাওয়াকে প্রাধান্য দিতেই হবে। কিন্তু হাসির গল্পও তো মানবিক। এটা তো নিছক কোনো গল্প নয়। এই অর্থে মানবিক, নিছক হাসির গল্পটি যদি ঠিকঠাকভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, তাহলে সেই গল্প বা সেই নাটক দেখে একজন বিষণ্ন মানুষ উপকৃত হয়। সেটা কিন্তু অনেক বড় অবদান। আমার নাটক দেখে অনেকবার অনেক জায়গা থেকে ফোন এসেছে। একবার গুণদা (নির্মলেন্দু গুণ) ফোন করেছিলেন। তিনি তখন অসুস্থ ছিলেন।
প্রথম আলো :
নির্মলেন্দু গুণ ফোনে কী বললেন?
মোশাররফ করিম : গুণদা আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘এটা আমাকে আনন্দ দিয়েছে।’ সেদিন মনে হয়েছিল, আমি তো ভালো কাজ করছি। কারও মন খারাপ বা শরীর খারাপ থাকলে সেখানে নাটকটি ভূমিকা রাখছে। মন প্রফুল্ল করার জন্য নাটক কাজ করছে। আরেকটা ঘটনা মনে পড়ে, একবার এক চিকিৎসক ফোন করেছিলেন। সেই চর্মরোগবিশেষজ্ঞ তখন কোভিডে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি। সেখান থেকেই তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনার এমন কিছু নাটকের লিংক পাঠান, যেগুলো আনন্দ দেবে।’ পরে আমি পাঠিয়ে দিই। সেদিনও মনে হয়েছিল যে এটা অনেক বড় কাজ। আমার নাটক দেখে কেউ একজন উপকৃত হচ্ছেন।
কমেডি নাটক কতটা চ্যালেঞ্জিং? এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মোশাররফ করিম : যেকোনো কাজের মধ্যেই চ্যালেঞ্জ থাকে। চ্যালেঞ্জ না থাকলে সেটা উপভোগ্য হয়ে ওঠে না।
প্রথম আলো :
কিন্তু সব মিলিয়ে যে ধরনের কমেডি হচ্ছে, সেখানে মন্দ কাজের দায়টাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাদের ওপর পড়ছে?
মোশাররফ করিম : সেটা তো আছেই। কথোপকথনের ব্যাপার, আলোচনা, সমালোচনা এগুলো সব সময়ই থাকে। কিন্তু বড় মুশকিলটা হচ্ছে, কোনো একটা কাজের জন্য অভিনেতা, পরিচালক থেকে শুরু করে সব কলাকুশলী একবিন্দুতে মিললে অন্য কিছু হয়ে ওঠে। কারণ, অনেক সময় দেখা গেল যে একটা গল্প অসাধারণ লাগল, কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখা গেল যে সেটা আর অসাধারণ হয়ে উঠল না। আবার সাদামাটা গল্পও অসাধারণ হয়ে ওঠে।
প্রথম আলো :
দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার। অসংখ্য জনপ্রিয় কাজ আপনার ঝুলিতে। এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বর্তমান কাজগুলো আপনাকে কতটা সন্তুষ্ট করছে?
মোশাররফ করিম : যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা নাটকের শুটিং করি, সেখানে সব সময় আনন্দিত হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজগুলো শেষ করতে হয়। কখনো কখনো বিরক্ত হই, কখনো সন্তুষ্ট হই। তবে আমি সব সময় চেষ্টা করি, প্রতিটা কাজ থেকে আনন্দ নিতে।
আপনার কখনো মনে হয়েছে যে অভিনীত নাটকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে? এটা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করছেন?
মোশাররফ করিম : নাটকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে, এটা বহুবার মনে হয়েছে। সেটা নাটক বেশি করছি বলে মনে হয় না। আমার কাছে বরং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মনে হয়েছে। প্রায়ই মনে হয়, এত কাজ করে কী হবে! কারণ, বিশ্রামের সুযোগ তেমন মেলে না।
প্রথম আলো :
এখন প্রতি মাসে কত দিন শুটিং করেন?
মোশাররফ করিম : এখন ঈদের জন্য টানা কাজ করে যেতে হচ্ছে। বিশ্রামের খুব একটা সময় পাই না। তবে কোরবানির ঈদের পর বড় একটা ছুটি নেব। তখন একটানা হয়তো ১০-১৫ দিন কাজে থাকব না। সময়টা নিজেকে দেব, পরিবারের সঙ্গেই থাকব।
‘মহানগর ২’-এর মুক্তির পর শোনা যাচ্ছিল, পরবর্তী কিস্তি আসছে। আপনি কি চান তৃতীয় কিস্তি হোক?
মোশাররফ করিম : ‘মহানগর’ পরবর্তী সময়ে আসবে কি না, আমি জানি না। এটা আশফাক নিপুণ বলতে পারবেন। তাঁর সঙ্গে অনেক দিন কথা হয় না। একধরনের চিন্তাভাবনা তো ছিলই। আমার মনে হয়, ‘মহানগর ৩’ হতেই পারে।
প্রথম আলো :
‘মহানগর’-এর ওসি হারুন চরিত্র থেকে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী, যা এখনো উপলব্ধি করেন?
মোশাররফ করিম : প্রথমেই বলব, একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। খুব মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বনির্ভর চরিত্র। আমার পছন্দের দারুণ একটা চরিত্র। পছন্দের চরিত্র করতে পারাটাই বড় পাওয়া। দিন শেষে মনে হয়, কাজটা করতে পারলাম। চরিত্রের মানসিকতার মধ্য দিয়ে যেতে পারলাম। এটা আমাকে এখনো আনন্দিত করে।
প্রথম আলো :
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে, ওটিটিতে কী কাজ করছেন?
মোশাররফ করিম : এখন ঈদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কিছু ওটিটির কাজ করেছি। নুহাশ হুমায়ূনের সঙ্গে কাজ করলাম। কিছু কাজ বাকি আছে। কিন্তু কাজটি নিয়ে আমি খুবই আনন্দিত। সিরিজ ও সিনেমার কাজ করেছি। সামনে আরও কিছু করব। সময় হলেই সব জানাব।