ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পী মোশাররফ করিম, অপূর্ব, আফরান নিশো, মেহজাবীন, তাসনিয়া ফারিণসহ একাধিক তারকা ওটিটিসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ব্যস্ত হচ্ছেন। যে কারণে গেল ঈদুল আজহায় নাটকের সংখ্যাও কমেছে বলে জানান প্রযোজকেরা। ছোট পর্দা যখন অভিনয়শিল্পী-সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আশা দেখাচ্ছেন একদল তরুণ। জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীদের পাশাপাশি এবারের ঈদনাটকে তরুণদের ঘিরে ছিল আলোচনা। এই তালিকায় রয়েছেন তানজীম তটিনী, রোকাইয়া চমক, সাদিয়া আয়মান, আরশ খান, যাহের আলভী, অনামিকা ঐশী, সাদিয়া মাহী প্রমুখ। পরিচালকেরাও এ তরুণদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তরুণেরাও নিজেদের তৈরি করতে বদ্ধপরিকর।
অভিনেত্রী হবেন, কখনোই ভাবেননি তটিনী। সেই অভিনয়ে এখন ব্যস্ত হয়ে উঠছেন তানজীম তটিনী। বরিশালের মেয়ে তটিনীর স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। পরে ঢাকায় এসে শখের বশেই নাম লেখান বিজ্ঞাপনচিত্রে। ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির অ্যানথোলজি সিরিজ এই মুহূর্তে–এর ‘কল্পনা’ গল্পে অভিনয় করে সাড়া ফেলেন। এবার ঈদে নাম লেখান মিজানুর রহমান আরিয়ানের সুহাসিনী ও ভিকি জাহেদের বাঁচিবার হলো তার সাধ নাটকে। দুটি নাটকে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন আফরান নিশো ও জোভান। এ দুই নাটকে কাজ করেও প্রশংসা পাচ্ছেন এই তিনি। তটিনী বলেন, ‘এত দিন তো শখে অভিনয় করেছি। সিরিয়াসভাবে নিইনি। এখন দেখছি, দর্শক কাজের প্রশংসা করছেন। আমি চাইছি সিরিয়াসলি অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে। এখন কাজ করতে গেলে একধরনের বাড়তি চাপ বুঝতে পারি। আসলে দর্শক একটা কাজ পছন্দ করলে অন্য কাজের মান যেন ঠিক থাকে, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।’
শৈশবের এক জন্মদিনে হৃতিক রোশনের ‘কাহোনা পেয়ার হ্যায়’ সিনেমার একটি গানে পরিবারের সবার সামনে নেচেছিলেন আরশ খান। সবাই আরশের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হন। তার পর থেকেই পরিবারের সবাই তাঁকে হিরো বলে ডাকতেন। মামা খালাবাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলেই, সবাই বলতেন, ‘আরশ, নেচে দেখাও তো, বাবা।’ শুরু হয়ে যেত আরশের নাচ। এভাবেই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ স্কুলে অভিনয়ের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তখন আরশের মা ছেলেকে লোকনাট্য নাট্যদলে অভিনয় শিখতে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই থেকেই আরশ কোনো সিনেমা বা নাটক দেখলেই মনে মনে নিজেকে নায়কের জায়গায় ভাবতেন।
কিন্তু পেশা হিসেবে অভিনয় করবেন কি না, এটা নিয়েই দোটানায় পড়ে যান। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ২০১৬ সালের দিকে একের পর এক অডিশন থেকে বাদ পড়তেন। একবার ২০ কেজি ওজন কমিয়ে তেমন লাভ হলো না। দীর্ঘদিন লেগে থাকার পর ২০২১ সাল থেকে আশার আলো দেখতে পান। এবার ঈদে তাঁর ১২টির বেশি নাটক প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অভিনয় এখন নেশা। দর্শকেরা ইতিবাচক–নেতিবাচক চরিত্রের জন্য প্রশংসা ও গালি দেন। এসবই আমার আগামী দিনের অনুপ্রেরণা।’
মাত্র দেড় বছরের অভিনয়জীবন রোকাইয়া চমকের। এর মধ্যেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন নাটকের একাধিক প্রধান চরিত্রে। মহানগর সিরিজে মডেল চরিত্র দিয়ে খ্যাতি পাওয়ার পর একটু একটু করে এগিয়ে চলছেন। গত ঈদে তেমন কোনো কাজ না করলেও এবার ঈদুল আজহায় ১৫টির বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন চমক। সহশিল্পী ছিলেন মোশাররফ করিম, তাহসান খান, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্বদের মতো তারকারা। চমক বলেন, ‘দর্শকদের রেসপন্স খুবই ভালো। ফেসবুকে অনেকেই প্রশংসা করছেন। এখন আমার ইচ্ছা অভিনয় ও নির্মাণ নিয়ে। সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি। শর্টফিল্মও বানিয়েছি। আমার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা ফিল্ম ও ওটিটিতে অভিনয় করা।’
গেল ঈদুল ফিতরে সৈয়দ শাওনের সঙ্গে প্রেম কাহিনি নাটকে অভিনয় করেছিলেন সাদিয়া আয়মান। এবার ঈদে তৌসিফ মাহবুবের বিপরীতে ফুলের নামে নাম নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা পাচ্ছেন সাদিয়া। এদিকে ঈদুল ফিতরে আমার বোন নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছিলেন টিকটক–কন্যা অনামিকা ঐশী। নাটকে তিনি ফারহান জোভানের বিপরীতে অভিনয় করেন। নাটকটি পরিচালনা করেন মাবরুর বান্নাহ। নাটকটি চার মিলিয়ন দর্শক দেখেছেন। এবার ঈদে আমার বাবার নাম কী, আদব বেয়াদব নাটকে অভিনয় করেছেন।
ক্যারিয়ারে বেশির ভাগ নতুন অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেন পরিচালক বান্নাহ। তিনি বলেন, ‘আমি নাইন অ্যান্ড হাফ নাটক থেকে শুরু করে একাধিক ধারাবাহিক ও একক নাটকে নতুনদের নিয়ে কাজ করেছি। তখন তাঁদের মধ্যে অনেক ধৈর্য দেখেছি। এখন নতুনেরা অল্পতেই একটা অবস্থান তৈরি করতে চান। আমি বলব, টেকসই অবস্থান বা তৈরি হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়া করা যাবে না।’