ভালোবাসা নিজের মধ্যে লালন করতে কোনো ডিগ্রি লাগে না, এটা উপলব্ধির বিষয়

অভিনেতা কচি খন্দকার। ছবি: ফেসবুক

বয়স নিয়ে খুব বেশি ভাবায় না অভিনেতা কচি খন্দকারকে। তবে এই অভিনেতাকে ভাবায় জীবনবোধের কথা। আজ তাঁর ৬১তম জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে তিনি জানালেন, জীবনব্যাপী মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। সেই দায়বদ্ধতাই তাঁকে এখনো ঘিরে ধরে। মানুষের মধ্যে এই দায়বদ্ধতা তৈরি হলেই সমাজে সংকট দূর হবে, সুস্থ একটি পরিবেশ বিরাজ করবে বলে মনে করেন তিনি।

কচি খন্দকার বলেন, ‘দীর্ঘ এই জীবনে মানুষ হয়ে উঠতে চেষ্টা করেছি। আমাদের সত্যিকারের মানুষ হতে হবে। কিন্তু এখানেই আমাদের বাধা। আমরা কতটা মানবিক হতে পারছি। যে কারণে আমরা অনেকই দায়িত্বটা পালন করতে পারছি না। কেউ মানুষ হয়ে উঠতে থাকলে তার মধ্যে দায়বদ্ধতা তৈরি হবে। এই হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে কাজ করলে আমরা ভালো একটি জাতি উপহার দিতে পারব।’

কচি খন্দকার। ছবি: ফেসবুক

কিন্তু একজন মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ‘যা মানুষের মূল্যবোধ ধ্বংস করে ফেলে—উল্লেখ করে কচি খন্দকার বলেন, ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়। মানুষকে ভালোবাসা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। দায়বদ্ধতা থেকে সরিয়ে ফেলে। সবচেয়ে বড় কথা, ভালোবাসা নিজের মধ্যে লালন করতে কোনো ডিগ্রি লাগে না। এটা উপলব্ধির বিষয়।’

কাজ দিয়েই তিনি দর্শকদের মধ্যে তুলে ধরেন নিজের দর্শন। যাপিত দীর্ঘ সময়ের বেশির ভাগ তিনি কাজ নিয়ে ভেবেছেন। বাংলাদেশের মৌলিক গল্পগুলো তুলে ধরেছেন। এসব তাঁকে মানসিক শান্তি দেয়। তিনি বলেন, ‘আমি যে কনটেন্ট লিখেছি বা করেছি, সেগুলো একদমই আলাদা। এই গল্পগুলো অন্য কারও সঙ্গে মিলবে না। এটা নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের চেষ্টা ছিল। সেখানে আমি হয়তো কিছুটা সফল হতে পেরেছি।’

কচি খন্দকার। ছবি: ফেসবুক

১৯৬৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এই অভিনেতা। সেই হিসাবে এবার ৬১ পেরিয়ে গেলেন তিনি। তবে এখনো দর্শক তাঁকে তরুণই মনে করেন। কচি খন্দকার বলেন ‘আমি দর্শকদের কাছে এখনো ভাই। তারা আমাকে এখনো তরুণ দেখতে চায়। বাইরে বের হলে সবাই কচি ভাই ডাকে। অনেকেই জোর করে অনেক আগে থেকে বাবার চরিত্রে অভিনয় করিয়েছেন। প্রথম “ব্যাচেলর” নাটকে বাবা চরিত্রে অভিনয় করি। তরুণ হয়েই মারজুক রাসেলের বাবার চরিত্রে অভিনয় করি। সিনিয়র হওয়ার এই অপচেষ্টা দর্শক এখনো গ্রহণ করে না।’

কচি খন্দকার ও মোশাররফ করিমের আড্ডা। ছবি: ফেসবুক

নাটক রচনা, অভিনেতা ও পরিচালক—সব জায়গায়ই তাঁর সাফল্য আছে। তবে নিজেকে নির্মাতা হিসেবেই তিনি পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনায় কম দেখা যায়। চরিত্রের বৈচিত্র্য না থাকার কারণে তিনি অভিনয়ও কমিয়ে দিয়েছেন। চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়েও তাঁর অভিমান আছে। এখানেও তিনি মনের মতো চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ডাক পাননি।

টেলিভিশনে তাঁর প্রায় দুই যুগের ক্যারিয়ার। তবে মঞ্চে কাজের অভিজ্ঞতা আরও আগের। ১৯৭৯ সালে তিনি মঞ্চনাটক লেখা ও নির্দেশনা দেওয়া শুরু করেন। তাঁর থিয়েটারের নাম ছিল অনন্যা নাট্যদল। তিনি জানান, নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল চলচ্চিত্র বানানোর। এখন সেদিকেই তিনি হাঁটছেন।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে আছে ‘কবি’, ‘ক্যারাম’, ‘ভূগোল’, ‘এফডিসি’ ইত্যাদি।