সহশিল্পীর অনৈতিক সুবিধা চাওয়া ও মেকআপ রুমে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা: চমককে নিষিদ্ধ করতে চায় পরিচালকদের সংগঠন

গত সোমবার রাতে সংগঠনগুলো তাদের সিদ্ধান্ত জানায়
ছবি: ফেসবুক

অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ছোট পর্দার সংগঠনগুলো অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমকের বিরুদ্ধে চারটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আরোপ করেছে। তবে এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। তারা চমকের আরও বেশি শাস্তি চায়। ডিরেক্টরস গিল্ডের দাবি, অন্তত তিন মাসের জন্য অভিনেত্রীকে নিষিদ্ধ করা হোক।
৪ আগস্ট ঢাকার একটি শুটিংবাড়িতে একটি নাটকের শুটিংয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সামনে আসে অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকদের অসদাচরণ, সহশিল্পীর কাছে অনৈতিক সুবিধা চাওয়া, শুটিং সেটে আটকে রাখা, মেকআপ রুমে হুমকি দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ। পরে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।

আরও পড়ুন

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক একে অন্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে প্রত্যেকে তাঁদের সংগঠনে অভিযোগ করেন। পরে এ ঘটনা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত গড়ায়।

ঘটনা নিয়ে গত রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে ছোট পর্দার পরিচালক, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন মীমাংসায় বসে। রাত ১০টা পর্যন্ত সেই মিটিং চললেও সেদিন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সংগঠনগুলো। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে গত সোমবার রাতে সংগঠনগুলো তাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানায়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আছে, অভিনেত্রী চমক ক্ষতিগ্রস্ত নাটকের প্রযোজক, পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ অভিনেতা মাসুম বাশারসহ সবার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করবেন ও ক্ষমা চাইবেন। একই সঙ্গে শুটিং শেষ করার প্রয়োজনীয় অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বাধ্য থাকবেন। এ ছাড়া তাঁকে অভিনেতা আরশ খান ও পরিচালক আদিব হাসানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তুলে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

অভিনেত্রী চমক। ছবি: ফেসবুক

ওই দিন বিচার সভা চলার সময়েই ডিরেক্টরস গিল্ড চমককে তিন মাসের নিষিদ্ধ করার দাবি করেছিল। কিন্তু অভিনয়শিল্পী সংঘ ও ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) নেতারা ডিরেক্টরস গিল্ডের দাবি না মেনে চমকের ব্যাপারে উক্ত চারটি সিদ্ধান্তেই অটল থেকে বিচার শেষ করে। তবে এর আগেই বিচার না মেনে ডিরেক্টরস গিল্ড সভা ত্যাগ করে।

আরও পড়ুন

এদিকে বিচার সভার পর কয়েক দিন পার হলেও ডিরেক্টরস গিল্ড আগেরই সিদ্ধান্তেই অটল আছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে তারা নিজেরা বসে। মিটিং শেষে সংগঠনটির সভাপতি অনন্ত হীরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগের সিদ্ধান্তেই অটল আছি আমরা। তিন মাস নিষিদ্ধ চাই চমকের।’

এই নেতা আরও বলেন, ‘প্রথম দিন বিচার সভার পর অভিনয় শিল্পী সংঘ যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সব কটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরাও একমত। তবে আমরা বলতে চেয়েছি, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ক্রমাগতই ঘটছে, এর আগেও ঘটেছে। এ জন্য চমকের একটা প্রতীকী শাস্তি হোক। অন্তত তিন মাস নিষিদ্ধ থাকবে, কোনো পরিচালক তাঁকে নিয়ে কাজ করবেন না। এটি সব সংগঠনেরই সুবিধার্থে একটা বার্তা যাবে। শৃঙ্খলা তৈরি হবে।’

তাহলে কি আপনারা পরিচালকেরা চমককে নিয়ে আপাতত কাজ করবে না? জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ‘তাঁকে নিয়ে পরিচালকেরা কাজ করবেন কি করবেন না, সে ব্যাপারে আমরা অফিশিয়ালি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে জানাব।’

প্রথম দিনের বিচার সভায় শিল্পী সংঘের সভাপতির অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেছেন সিনিয়র সহসভাপতি আনিসুর রহমান মিলন। ডিরেক্টরস গিল্ডের বিচার না মানা ব্যাপারে মিলন জানান, পরিচালকদের সংগঠনের এ ব্যাপারে দ্বিমত থাকতেই পারে। বলেন, ‘আমরা ওই দিন তিন সংগঠন থেকে প্রায় ১৫ জন বসেছিলাম। ডিরেক্টরস গিল্ড বর্জন চাচ্ছিল। আমরা বলেছি, অর্থদণ্ড, বর্জন একসঙ্গে হয় না। আর বর্জন করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? আপাতত ডিরেক্টরস গিল্ড এটি মানছে না। শুনেছি, তারা আলাদা এটি নিয়ে মিটিংও করেছে। দেখা যাক কী হয়।’

আরও পড়ুন