মিষ্টি স্বপ্ন বুনছেন
কিছুদিন আগেও ছিলেন অচেনা এক মুখ। দীপ্ত টিভির রিয়েলিটি শো ‘স্টার হান্ট’-এর চ্যাম্পিয়ন হয়ে বদলে যায় জীবন। এখন সেই চ্যানেলেই ‘খুশবু’-তে নামভূমিকায় অভিনয় করছেন মিষ্টি ঘোষ। গত সোমবার দুপুরে ধারাবাহিকটির শুটিং সেটে দেখা। বারবার শটের ডাক পড়ছে, তারই ফাঁকে ফাঁকে তরুণ এই অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা হয়।
মিষ্টি ঘোষ কিশোরগঞ্জের মেয়ে। পাঁচ বছর বয়সে গুরু মানস করের কাছে নাচে হাতেখড়ি। লোকনৃত্য, সাধারণ নৃত্য, উচ্চাঙ্গ নৃত্য—সব ক্ষেত্রেই তিনি দক্ষ। ‘মা আমাদের তিন ভাই–বোনকেই নাচ, গান, তবলা শিখিয়েছেন। তাই মঞ্চ আমার কাছে ঘরের মতো,’ বললেন মিষ্টি। ‘মহুয়া’, ‘সোনাই মাধব’, ‘চণ্ডালিকা’র মতো নৃত্যনাট্যে বহুবার তাঁকে মঞ্চে দেখা গেছে। নাচই তাঁকে অভিনয় বোঝার চোখ দিয়েছে। ২০১৬ সালে স্থানীয় একতা নাট্যগোষ্ঠীর মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি। ঢাকায় এসেও শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে অভিনয় করে গেছেন হুমায়ূন আহমেদের লেখা ১৯৭১ নাটকের ‘মালা’ চরিত্রে।
মনে হয় না চাকরিটা টিকবে
নাচে পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও পূরণ হয়নি। ‘নাচ ছিল আমার নেশা, কিন্তু পরিবার এলাকার বাইরে গিয়ে লেখাপড়া অ্যালাউ করেনি। তাই ভর্তি হলাম হিসাববিজ্ঞানে,’ বললেন তিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি পেয়েছেন। বর্তমানে ঢাকার একটি ফ্যাশন হাউসে চাকরি করেন। ‘অফিস থেকে অনেক সহযোগিতা পাই। শুটিংয়ের সময় ছুটি দেয়।’ তবে এটাও যোগ করলেন, ‘এ মাসটা পুরো শুটিংয়ে যাচ্ছি, মনে হয় না চাকরিটা খুব বেশি দিন টিকবে! ছেড়ে দিতে পারি।’
জীবনের মোড়
মিষ্টির জীবনের সবচেয়ে বড় বাঁক স্টার হান্ট। একদিন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখেই অডিশন দিতে গিয়েছিলেন তিনি, ‘ভাবলাম, একবার দেখে আসি, কেমন হয় রিয়েলিটি শোর অভিজ্ঞতা। আত্মবিশ্বাস ছিল, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হব, ভাবিনি।’ অসুস্থতার কারণে এক পর্বে বাদ পড়লেও বিচারকদের বিশেষ বিবেচনায় আবার সুযোগ পান। আর সে সুযোগই বদলে দেয় জীবন। ‘যখন নাম ঘোষিত হলো, বিশ্বাসই হচ্ছিল না,’ বললেন তিনি।
প্রতিযোগিতা শেষে মিষ্টি জানতে পারেন, খুশবু ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাঁকে নেওয়া হয়েছে। সেটা ছিল জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর। ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়েও বড় ছিল সেই মুহূর্ত,’ বললেন মিষ্টি।
‘খুশবু’ হয়ে ওঠা
২০২৩ সালে সাগর জাহানের ‘ভালোবাসার অলিগলি’ নাটকে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান মিষ্টি ঘোষ। পাশাপাশি কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁকে আলোচনায় আনে খুশবু। গ্রামের এক মেয়ের শহরে এসে টিকে থাকার সংগ্রাম নিয়ে ধারাবাহিকটি তৈরি করেছেন সাজ্জাদ সুমন। ‘সুমন ভাই চরিত্রটা যখন শুনিয়েছিলেন, মনে হয়েছিল, এটা তো আমারই গল্প। খুশবু যেমন বাবার বাধ্য মেয়ে, তেমনি নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করতে জানে। বাস্তবে আমিও তেমন,’ বললেন মিষ্টি। সহশিল্পীদের মধ্যে আছেন ফজলুর রহমান বাবু, ইন্তেখাব দিনার, গাজী রাকায়েত, নাজিয়া হক অর্ষা প্রমুখ। ‘যাঁদের অভিনয় দেখে বড় হয়েছি, তাঁদের সঙ্গে কাজ করাটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা,’ বললেন মিষ্টি।
মঞ্চ ও ক্যামেরার পার্থক্য নিয়ে মিষ্টির অভিজ্ঞতা, ‘আগে ভাবতাম মঞ্চই কঠিন, এখন মনে হয়, ক্যামেরার সামনে অভিনয় করা আরও চ্যালেঞ্জিং। তবু ক্যামেরার সামনে কাজ করতে ভালো লাগে। নিজের অভিনয় যখন পর্দায় দেখি, মনে হয়, পরিশ্রমটা সার্থক।’
‘খুশবু’ প্রচারের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিষ্টি ঘোষকে নিয়ে আলোচনা বেড়েছে। মন্তব্যের ঘরে কেউ লিখছেন, ‘নতুন মুখের মধ্যে সতেজতা এনেছেন মিষ্টি’, কেউ বলছেন, ‘খুশবু চরিত্রে একদম মানানসই।’ এসব প্রতিক্রিয়ায় অনুপ্রাণিত তিনি। ‘মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। প্রতিদিন মেসেজ আসে, “আপনাকে খুশবু চরিত্রে দেখে ভালো লাগে।” এই ভালোবাসাই আমার শক্তি। যখন কেউ বলে “খুশবু চরিত্রে আপনাকে দারুণ লাগে”, মনে হয়, পরিশ্রম সার্থক।’
স্বপ্ন ও প্রেরণা
অভিনয়জীবনে মিষ্টির আদর্শ বিপাশা হায়াত, শমী কায়সার; প্রেরণা মেহজাবীন চৌধুরী। ‘তাঁদের মতো হতে চাই না, তাঁদের মতো নিবেদিত হতে চাই। নামমাত্র নায়িকা হতে চাই না, অভিনয়ে বাঁচতে চাই,’ বললেন মিষ্টি ঘোষ। জাহিদ হাসানের সঙ্গে অভিনয় করারও খুব ইচ্ছা।
একসময় হুমায়ূন আহমেদের নাটক কিংবা সিনেমায় অভিনয় করার স্বপ্ন দেখতেন মিষ্টি ঘোষ। সেই স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেছে, তবে এখন তাঁর চোখে নতুন স্বপ্ন। আলাপের একদম শেষ দিকে জানালেন সেই খবর—আলোচিত ‘সোলজার’ সিনেমায় অভিনয় করছেন তিনি।
জানা গেছে, বড় পর্দায় শাকিব খানের সঙ্গে বিশেষ একটি চরিত্রে মিষ্টিকে দেখা যেতে পারে। তবে আপাতত চরিত্রটি নিয়ে মুখ খুলছেন না তিনি। হেসে শুধু বললেন, ‘এখনই কিছু বলতে পারব না, বারণ আছে। তবে এটুকু বলতে পারি, ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন সুযোগ পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় বিষয়। বড় পর্দায় কাজ করা তো সব অভিনেতারই স্বপ্ন।’