‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’–এর পর নতুন কী আসছে মাসুম–লাভলুর

মাসুম রেজা ও সালাহউদ্দিন লাভলু। ছবি: মাসুম রেজার সৌজন্যে

প্রায় এক যুগ পর আবার ফিরছেন মাসুম রেজা-সালাহউদ্দিন লাভলু জুটি। এই নাট্যকার-নির্মাতা জুটিই আগে উপহার দিয়েছেন রঙের মানুষ ও ভবের হাট–এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন ধারাবাহিক ফুলগাঁও দিয়ে আবার ফিরছেন তাঁরা। নাটকটিতে থাকছেন রঙের মানুষ, ভবের হাট–এরই কলাকুশলীরা।

সালাহউদ্দিন লাভলু ও মাসুম রেজা একই জেলার বাসিন্দা। মঞ্চনাটক করতে গিয়ে তাঁদের মধ্যে পরিচয় ও বন্ধুত্ব। সেই বোঝাপড়া নিয়েই আবার নতুন গল্প নিয়ে এক হয়েছেন তাঁরা। জানালেন, দর্শকদের নতুন কিছু দেওয়ার তাগিদ থেকেই এক হওয়া।
লাভলু বলেন, ‘দর্শকদের কাছে এখনকার নাটক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। ঘুরেফিরে আমাদের সেই নাটকগুলো নিয়েই কথা বলছেন দর্শক। সেই জায়গা থেকেই নতুন এই চেষ্টার পথে হাঁটা। তবে এখন ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করা চ্যালেঞ্জিং। আগে যে সময়ে রঙের মানুষ, ভবের হাট বানিয়েছি, তখন শিল্পীদের কাছে শৈল্পিক ব্যাপারটি অগ্রাধিকার পেত। তাঁদের নিবেদন ছিল অন্য পর্যায়ের। যে কারণে একটা কাজের পেছনে দীর্ঘ সময় দিয়ে দর্শকদের জন্য কাজ করতাম।’

‘রঙের মানুষ’ এর পোস্টার।
ছবি: সংগৃহীত

গ্রামীণ সমাজের জটিলতা থেকে বের হয়ে হাসিখুশি একটি গ্রামের মানুষের গল্প বলবেন তাঁরা। যে গ্রামের নাম ফুলগাঁও। গ্রামের সবাই ফুলচাষি। কেউ ফুলের চিকিৎসক, কেউ ফুলচাষিদের সমিতি নিয়ে ব্যস্ত; এই নাটকে মূলত ফুল চাষ করা মানুষের জীবনযাপন উঠে এসেছে।

‘আমরা যখন রঙের মানুষ, ভবের হাট নাটকে কাজ করি, সেই সময়ে বড় পরিসরে গ্রাম নিয়ে নাটক তেমন একটা হয়নি। গ্রামের নাটক মানেই তখন ছিল গরিব, অভাবি মানুষ। সেখান থেকে বের হয়ে আমরা হাসিখুশি একটি গ্রাম দেখিয়েছি। যে গ্রামের মানুষ মিথ্যা কথা বলে না, একে অন্যের পাশে থাকে। এগুলো দর্শক পছন্দ করেছিলেন। সেখান থেকেই আমাদের মনে হলো, ভিন্ন ঘরানার গল্প, চরিত্র দিয়ে আবার দর্শকদের সামনে আসা যায়। যেখানে নাগরিক কোনো জটিলতা থাকবে না। সেই ভাবনা থেকেই ফুলগাঁও।’

‘ভবের হাট’ ধারাবাহিকের পোস্টার

‘রঙের মানুষ’ রচনা করেছেন সেলিম আল দীন ও মাসুম রেজা। পরে মাসুম রেজার চিত্রনাট্যে একাধিক নাটক নির্মাণ করেছেন লাভলু। মাসুম রেজা জানালেন, ২০১৪ সালে সর্বশেষ তাঁরা ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ার ধারাবাহিকে কাজ করেন। পরে একক নাটক করলেও ব্যস্ততার কারণে আর একসঙ্গে ধারাবাহিক করা হয়নি। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে চ্যানেল আইয়ের বিপণন বিভাগের প্রধান ইবনে হাসান খান দীর্ঘ ধারাবাহিক লেখার জন্য বলছিলেন। একসঙ্গে আবার সালাহউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে ফিরতে বলতেন। এরপর শুরু হয় সময়োপযোগী গল্পের জন্য অপেক্ষা।

কিন্তু উপযুক্ত গল্প পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যেই গত বছর সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে ঘুরতে যান মাসুম রেজা। সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁর ভালো লেগে যায়। তাঁদের গল্পই তুলে ধরার পরিকল্পনা করেন। শুরু করেন লেখা।

লিখতে গিয়ে আরেক সমস্যা। আগের বেশ কিছু ডাকসাইটে অভিনেতা এখন আর নেই। তিনি বলেন, ‘চরিত্রগুলো লিখতে গিয়ে দেখি, এ টি এম শামসুজ্জামান, হুমায়ুন ফরীদি ভাইয়েরা নেই। তাঁদের বিকল্প কি আর কোনো দিন তৈরি হবে? অভিজ্ঞদের সঙ্গে কাজের একটা বোঝাপড়া থাকে। আবার অভিনয়ে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীসহ অনেককেই ধারাবাহিকে পাওয়া কষ্ট। আমাদের নাটক দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন, এমন অনেকেই এখন ব্যস্ত। তাঁদের পেলে গল্পটির জন্য আরও ভালো হতো।’

মাসুম রেজা ও সালাহউদ্দিন লাভলু। ছবি: মাসুম রেজার সৌজন্যে

সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে দর্শকদের রুচিবোধ। সেগুলোকেও চিত্রনাট্যে তুলে ধরেছেন মাসুম রেজা। তিনি বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে নাটকের সংলাপ, হিউমার সেন্স—সবই বদলে গেছে। এই সময়ে ধারাবাহিক দিয়ে দর্শকদের কাছে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং। দর্শক হিউমারের যে ভাষা পছন্দ করছেন, সেভাবেই নাটকটির সংলাপ ও গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা দারুণ একটি কাজ করতে পারব।’
সালাহউদ্দিন লাভলুর সাকিন সারিসুরি নাটকে গোলাম চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান রওনক হাসান।

এখনো এই চরিত্র রওনকের ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা কাজ। এবার ফুলগাঁও-এ ফুলের চিকিৎসক হিসেবে তাঁকে দেখা যাবে। নাটকটি নিয়ে রওনক বলেন, ‘লাভলু ভাইয়ের পরিচালনায় কাজ করা মানে নতুন কিছু শেখা, একটা স্কুলিংয়ের মধ্যে থাকা। কারণ, ধরে ধরে কাজ করেন, এই মাপের পরিচালক এখন কম। এর মধ্যে কমছে বাজেট, ভালো চিত্রনাট্য না থাকায় ধারাবাহিক নাটকের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। সেখানে আমাদের নাটকটি দর্শকদের নতুন কিছু নিয়ে আসবে।’

সাভারের বিরুলিয়া ও গাজীপুরের পুবাইলে সম্প্রতি নাটকটির শুটিং শুরু হয়েছে। ফুলগাঁও নাটকে অভিনয় করছেন রহমত আলী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আ খ ম হাসান, তুষার খান, জয়রাজ, সোহেল খান, আরফান আহমেদ, এলিনা শাম্মী, নাসরিন অনু। শিগগিরই চ্যানেল আইয়ে নাটকটির প্রচার শুরু হবে।