অভিনয়কে তাঁরা খুবই সহজ ও সস্তা মনে করেন
অভিনয় অঙ্গনে বহু আগেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ। তবে এখনো তিনি মনে করেন, অভিনয়ের তেমন কিছুই শেখা হয়নি। নিজের অভিনয় নিয়েও তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। তাঁর কথায়, এখনো শেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই অভিনেতাকে বাইরে বের হলেই প্রায় তরুণদের মুখোমুখি হতে হয়। যাঁরা বেশির ভাগ কোনো অভিনয়ের চর্চা বা না শিখেই অভিনয় করতে চাওয়ার সহায়তা চান। তাঁদের উদ্দেশে কী বললেন এই অভিনেতা?
দুই দিন আগের কথা। ফারুক আহমেদ রাস্তায় হাঁটছিলেন। এমন সময় এক তরুণ এসে তাঁর কাছে অনুরোধ করেন অভিনয়ের তাঁকে সুযোগ দেওয়ার। ‘আমি প্রতিনিয়ত বহু তরুণের কাছ থেকে অনুরোধ পাই, তাঁরা অভিনয় করতে চান। আমার কাছে তাঁরা সুযোগ চান। আমার যেহেতু অভিনয় পছন্দের পেশা। যে কারণে আগ্রহ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু কথা বলতে গিয়ে প্রতিবার আশাহত হই, হতাশ হই। অভিনয়কে তাঁরা খুবই সহজ ও সস্তা মনে করেন। এটা অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমাকে কষ্ট দেয়,’ বলেন ফারুক আহমেদ।
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘বেশির ভাগ অভিনয়ে আসতে চাওয়া তরুণের গল্প প্রায়ই একই। তাঁরা ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতে চেয়েছেন। তাঁরা মনে করেন অভিনয় করতে পারবেন। আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো। কিন্তু তাঁরা শিখতে চান না। থিয়েটার বা অভিনয়ে শেখার কোনো আগ্রহ তাঁদের নাই। তাঁরা মনে করেন, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো মানেই অভিনয় করা হয়ে গেল। দু–একটা ব্যতিক্রম ঘটনা আছে। কেউ কেউ প্রতিভাবান হয়ে থাকেন। সেটা তো সামগ্রিক কোনো উদাহরণ হতে পারে না।’
দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরের ক্যারিয়ার ফারুক আহমেদের। এ সময়ে তিনি প্রতিমুহূর্ত অভিনয় শেখার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান। এই চর্চা শৈশবে মঞ্চে অভিনয়ের মধ্যে শুরু। পরবর্তী সময় পড়াশোনার মধ্য দিয়েও চালিয়ে যান। দেশ–বিদেশের সাহিত্যচর্চার অভ্যাস রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘এখন অভিনয় তো সবাই করতে পারে—যামু খামু, আয় যাই এসব বলেও অভিনয় করা যায়। দর্শকেরাও অনেকে এটাকে অভিনয় মনে করছেন। কিন্তু অভিনয়ের মধ্যে যে আর্ট রয়েছে, সেগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আমার চার দশকের ক্যারিয়ারে আমিই বুঝতে পারলাম না।’
এই অভিনেতা একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘মেসিও ফুটবল খেলে, আমিও একদিন ফুটবল খেললাম, এটা এক কথা? আমরা দুজনই খেলছি। কিন্তু দুজনের খেলার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। দর্শক, যাঁরা খেলা দেখবেন, তাঁরা আমার খেলাকে শিল্পের পর্যায়ে ফেলবেন না। বলবেন, মেসির জাদু দেখলাম। পার্থক্যটা এখানেই। এর জন্য মেসিকে প্রতিমুহূর্তে শিখতে হয়। অভিনেতা হিসেবে জীবনের শেষ কাজ দিয়েও অনেকে খুশি হতে পারে না। এর মাঝেই ভক্তরা কাজগুলোকে ভালোবেসে জায়গা দেন। কিন্তু কোনো শিল্পী তাঁর কাজ নিয়ে তৃপ্ত হন কি না, এটা তাঁরাই জানেন। কারণ, সৃষ্টিশীল এই কাজের প্রাপ্তির শেষ নাই। এটাই শিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখে।’