মাসুম ছিল আমাদের অহংকার

মাসুম আজিজ

এস এম সোলায়মানের ঢাকা পদাতিক দলের একটা নাটকে মাসুম আজিজকে প্রথম দেখি। চমৎকার অভিনয় করত। আমারও ওর অভিনয় ভালো লাগত। ওটাই ওর সঙ্গে পরিচয়। কিন্তু সেভাবে কথাবার্তা হতো না। সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একটা সময় জানতে পারি, মাসুমের ভগ্নিপতি মোনাজাত উদ্দিন। একদিন মোনাজাতই আমাকে বলল, ‘তুই একটু ওরে দেখে রাখিস দোস্ত।’ এরপর মাসুমের প্রতি আমার আন্তরিকতা বাড়তে থাকে। সম্পর্কটা পেশার বাইরের হয়ে যায়। পারিবারিক হয়ে ওঠে। তারপর আমি ওকে সহকারী পরিচালক হিসেবে সঙ্গে রাখি। চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছিলাম, নিজে নিজে অনেক উন্নতি করছে। আমারও এই উন্নতি দেখে ভীষণ আনন্দ হতো।

শুধু আমার সহকারী হিসেবে নয়, আরও নানাভাবে যুক্ত হতে থাকল মাসুম। ওর মধ্যে বৈচিত্র্যও ছিল। যেমন অভিনয় করত, নাটক লিখত, পরিচালনা করত, গানও গাইত। খুবই ভালো গান করত মাসুম। বহুমুখী প্রতিভা তো আমাদের এখন একেবারে নেই। তার মধ্যে ও একজন। মাসুম ছিল আমাদের অহংকার। ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করল অনেকদিন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর পেরে উঠল না। পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো।
মাসুম আজিজের সঙ্গে আমার পরিচয়টা ১৯৮২-৮৩ হবে। মোনাজাত উদ্দিনের কাছ থেকে যখন মাসুমের পরিচয়টা পেলাম, তখন তো পারিবারিক যোগাযোগটা বেশ ভালো হয়। পরে তো আমরা এটাও জানতে পারলাম, মাসুমের আপন বড় ভাই শামসুজ্জামান হীরাও আমার বন্ধু।

মামুনুর রশীদ
প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ভিপি ছিল। মাসুম একটু রাগী ছিল। ওর মধ্যে একগুঁয়েমিও কাজ করত। আবার একটা শিশুসুলভ ব্যাপারও ওর মধ্যে ছিল। তবে আমার কাছে সব সময় শিশুসুলভই ছিল। আমি ওকে খুব বকাঝকাও করতাম। কিন্তু কোনো দিন কিছুই বলত না। বড় ভাই, অভিভাবকের মতো সম্মান করত। মাসুমের যখন একবার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়, আমি হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখেই বলতে লাগল, আমি ভালো হয়ে গেছি। বাড়িতে চলে যাব। আমি তো সেদিন হাসপাতালে গিয়ে আবার বকা দিয়ে বললাম, ‘স্টুপিড, কেন তোমার এই রোগ হলো।’ আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা এমনই ছিল।

অভিনেতা হিসেবে মাসুম ছিল বেশ মননশীল। ভীষণ রাজনীতিসচেতন একজন মানুষ। লেখালেখির মধ্যেও সেটার একটা প্রভাব ছিল। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে থিয়েটারে যোগ দেয়। সোলায়মান বয়সে ছোট হলেও তাদের দুজনের সম্পর্কটা ছিল চমৎকার। আমি একটা সময় মাসুমকে টেলিভিশন নাটকেও অভিনয়ের সুযোগটা করে দিই। সময় অসময় ছিল তার অভিনীত প্রথম টেলিভিশন নাটক। আশির দশকের মাঝামাঝিতে সেই যে সম্পর্কের শুরুটা হয়, তার পর থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই সম্পর্ক ছিল। তার এই চলে যাওয়া ভীষণ কষ্টের, বেদনার।
মামুনুর রশীদ, নাট্যকর, নির্দেশক ও অভিনেতা