একবার মাসুম আজিজকে না পেয়ে কুমিল্লা শহরে হারানো বিজ্ঞপ্তির মাইকিং করা হয়েছিল

শৈশবে দুরন্ত ছিলেন মাসুম আজিজ
ছবি: সংগৃহীত

শৈশবে দুরন্ত ছিলেন মাসুম আজিজ। সময় পেলেই বাড়ি থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দে ছুট। দিনভর ছুটে চলতেন গ্রামে, কখনো শহরের আনাচকানাচ। ঝাঁপিয়ে পড়তেন নদীতে, কখনো মার্বেল, সিগারেটের প্যাকেটের কার্ড দিয়ে খেলা নিয়ে মেতে থাকতেন। এভাবে একদিন বের হয়ে আর ফিরে আসেননি এই অভিনেতা। সেবার চার দিন নিখোঁজ ছিলেন। তাঁকে না পেয়ে কুমিল্লা শহরে হারানো বিজ্ঞপ্তির মাইকিং করা হয়েছিল।

১০ ভাইবোনের মধ্যে মাসুম আজিজ ছিলেন সপ্তম
ছবি: সংগৃহীত

১০ ভাইবোনের মধ্যে মাসুম আজিজ ছিলেন সপ্তম। শৈশবে ছাত্র হিসেবে ভালো থাকলেও জীবনযাপন ছিল বাউণ্ডুলে। বাবার চাকরির সুবাদে দীর্ঘদিন কুমিল্লায় ছিলেন। প্রথমে কুমিল্লার একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেই সময় পড়াশোনায় অমনোযোগী ছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে সময়টা অনিয়মে কেটেছে। সারা দিন বাইরে ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরা ছিল রেওয়াজ। ফিরলেই বাবার হাতের পিটুনি ছিল নিয়মিত। এমন অবস্থায় একবার তিনি একাই চলে যান অনেক দূরে। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে চার দিন এক এলাকায় ছিলেন।

অভিনেতা মাসুম আজিজ
ছবি: সংগৃহীত

এ প্রসঙ্গে মাসুম আজিজ এক সাক্ষাৎকারে জানান, শৈশব থেকে হিসাবের বাইরে জীবন যাপন করতেন। সুযোগ পেলে পালাতেন, ঘুরতে বের হতেন। অনিয়মই তাঁর কাছে ভালো লাগত। তিনি বলেন, ‘হিসাব করা জীবন আমি ভাবতে পারিনি। আমি সব সময় অগোছালো ছিলাম। এমনও হয়েছে, আমার জন্য পুরো কুমিল্লা শহরে নিখোঁজ সংবাদ দিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। আমি চার দিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে পাহাড়তলীর এক বাড়িতে ছিলাম। সেখানে খাওয়াদাওয়া করছিলাম, ভালোই লাগছিল। সেখান থেকে চার দিন পরে বাড়ি ফিরেছিলাম।’

মঞ্চ ও টিভি নাটকের জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী মাসুম আজিজ ক্যানসারের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন
ছবি: সংগৃহীত

মঞ্চ ও টিভি নাটকের জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী মাসুম আজিজ ক্যানসারের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৭ সালে তাঁর হার্টে চারটি ব্লক ধরা পড়লে অস্ত্রোপচার করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে ‘লাইফ সাপোর্টে’ নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছিলেন, তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ সোমবার বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

অভিনয়শিল্পী ছাড়াও মাসুম আজিজ চিত্রনাট্যকার ও নাট্যনির্মাতা হিসেবে পরিচিত। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খ্যাতি রয়েছে তাঁর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি থিয়েটারে কাজের মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘তিন গ্যাদা’সহ অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।