‘নতুন কুঁড়ি’র দুই চ্যাম্পিয়নের গল্প

প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ বিরতির পর গত সেপ্টেম্বরে নাম নিবন্ধনের মাধ্যমে আবার শুরু হয়েছে ‘নতুন কুঁড়ি’। এরপর বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ‘ক’ ও ‘খ’ বিভাগের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যথাক্রমে টাঙ্গাইলের প্রেয়সী চক্রবর্তী ও সুনামগঞ্জের শুভমিতা তালুকদার। তাদের নিয়ে মূল রচনা।

প্রেয়সী চক্রবর্তী ও শুভমিতা তালুকদারকোলাজ

‘সব ধরনের গানের চর্চা চালিয়ে যাব’

টাঙ্গাইল সদরের আকুরটাকুরপাড়ায় থাকে প্রেয়সী চক্রবর্তী। মা–বাবা দুজনই সরকারি চাকুরে। মা রাখি চক্রবর্তী স্কুলশিক্ষক; বাবা সঞ্জয় চক্রবর্তী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে চাকরি করেন। বড় বোন শ্রেয়সী চক্রবর্তীও গান করেন। এখন বৃত্তি নিয়ে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাস্ত্রীয় সংগীতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। মা–বাবার কাছেই প্রেয়সীর গানের হাতেখড়ি।

প্রেয়সী চক্রবর্তী
ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

‘নতুন কুঁড়ি’তে আধুনিক ও রবীন্দ্রসংগীতে প্রথম ও নজরুলসংগীতে সেরা দশে স্থান করে ‘ক’ বিভাগের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শাহীন প্রিক্যাডেট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রেয়সী। পরিবারের বাইরে ড. অসিত রায়ের সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ষড়জ পঞ্চম রাগসংগীত একাডেমিতে তালিম নিচ্ছে।

প্রেয়সীর বাবা সঞ্জয় চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বললেন, ‘“নতুন কুঁড়ি”র খবর শুনে ওকে বলছিলাম, “মা, তুমি কি প্রতিযোগিতায় যাবা?” মেয়ে আমার সাথে সাথে “হ্যাঁ” বলে। ওর অডিশন পড়ে ময়মনসিংহে। যেহেতু মেয়ের ইচ্ছা, ওকে নিয়ে চলে যাই। এরপর তো সবাই ওর গায়কি পছন্দ করে। আস্তে আস্তে অন্য বিচারকেরা পছন্দ করলেন। এই সাফল্যের পেছনে ওর মায়ের পরিশ্রমটা অনেক বেশি। আর প্রতিযোগিতা চলাকালে আমার বড় মেয়ে দেশে ছিল। ও থাকার কারণে ছোট মেয়েটা সাহস পেয়েছে।’

প্রেয়সীর সংগীতে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা। জানাল, ‘সব ধরনের গানের চর্চা চালিয়ে যাব। আমার চর্চা ঠিক করে দেবে ভবিষ্যতে কী গান নিয়মিত গাইব। সবার কাছে দোয়া চাই।’

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ভাবেনি শুভমিতা

সুনামগঞ্জের শুভমিতা তালুকদার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মায়ের কাছে প্রথম গানে হাতেখড়ি। বাসায় তালিম নেওয়ার পাশাপাশি তিন বছর ধরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক সন্তোষ কুমার চন্দর কাছে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, দেশাত্মবোধক, আধুনিক গান ও উচ্চাঙ্গসংগীতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এ ছাড়া গীতবিতান বাংলাদেশের অধ্যক্ষ অনিমেষ বিজয় চৌধুরীর কাছে রবীন্দ্রসংগীতে আলাদা করে দুই বছর তালিম নিয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে দুবার পুরস্কৃত হয়েছে শুভমিতা—২০২২ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কারে সারা দেশে উচ্চাঙ্গসংগীতে এবং ২০২৪ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে রবীন্দ্রসংগীতে দ্বিতীয় পুরস্কার। ‘নতুন কুঁড়ি’তে রবীন্দ্রসংগীতে প্রথম, নজরুলসংগীতে দ্বিতীয় এবং দেশাত্মবোধক গানে পঞ্চম হয়ে ‘খ’ বিভাগের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

দুর্গাপূজার ষষ্ঠীতে সিলেট শিল্পকলা একাডেমিতে অডিশন দেয় শুভমিতা। বাবা দ্বীপন কুমার তালুকদার বলেন, ‘প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের বেশ কিছুদিন ঢাকায় থাকতে হয়েছে। শুভমিতার খালা–খালুর আন্তরিক সাপোর্ট না থাকলে এতটা সাফল্য সম্ভব হতো না।’

শুভমিতা তালুকদার
ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

গত শুক্রবার বিকেলে শুভমিতা প্রথম আলোকে বলে, ‘কোনো না কোনো বিভাগে ভালো করব—এমন প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ভাবিনি। সব ধরনের গানই গাইব। বড় হয়ে হয়তো এক ধরনের গান বেছে নেব।’ শুভমিতার প্রিয় শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল, ফেরদৌস আরা ও প্রিয়াংকা গোপ।

আরও পড়ুন

শুভমিতার মা সান্ত্বনা সরকার সুনামগঞ্জ সদরের ইয়াকুব উল্লাহ পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান পড়ান। আর বাবা দ্বীপন কুমার তালুকদার একই এলাকার পাইগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। সুনামগঞ্জ সদরে মা–বাবার সঙ্গে থাকে শুভমিতা। বাবার পরিবারের কেউ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে না থাকলেও মা সংগীতচর্চা করতেন। নানার পরিবারের অনেকেও সংস্কৃতিমনা।