‘সেলিব্রিটি হয়েও সাত বছর মার খেয়েছি, মা-বাবাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তা–ই শুনেছি’

জিনাত সানু স্বাগতা
ছবি : সংগৃহীত

নতুন করে ঘর বেঁধেছেন অভিনেত্রী জিনাত শানু স্বাগতা। প্রেম থেকেই পরিণয়। কীভাবে স্বামীর সঙ্গে পরিচয়, কীভাবে বিয়ে হলো, এসব নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছিলেন এই অভিনেত্রী। তাঁকে সেই বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত অংশ নিয়ে অনেকের কাছ থেকে অনেক রকম মন্তব্য শুনতে হচ্ছে। কেউ বলছেন, ‘কেন তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন’, ‘নায়িকাদের বিয়ে বারবার ভাঙে কেন’—এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে প্রতিবাদ জানান এই অভিনেত্রী।

স্বাগতার ভাষ্য, তিনি এর আগেও ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। কারণ, ভালো না বেসে বিয়ে করে কারও সঙ্গে সংসার করা কঠিন। এটা তাঁর কাছে অসম্ভব। তিনি বলেন, ‘আমি ভালোবেসেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছি। আর আমার বিচ্ছেদ হয়েছে আইন মোতাবেক। মেয়েরা ডিভোর্স দিতে পারে। এটা আমার জীবন, আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি। জীবন কি সব সময় এক রকম চলে?’

অভিনেত্রী স্বাগতা। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

বিয়ের আগে জীবন থাকে এক রকম। আবার সংসার জীবনে পা দেওয়ার পর জীবন হয়ে যায় অন্য রকম। অনেক সময় দুটো জীবনের ব্যবধান হয় অনেক বেশি। দেখা যায় একসঙ্গে সংসার করা কঠিন হয়ে যায়। স্বাগতা বলেন, ‘আমাদের একটাই জীবন। যদি কোনো মানুষ আপনার জীবনকে নরক বানিয়ে বসে, জীবিত অবস্থায় আপনার সঙ্গে খারাপ অনেক কিছু ঘটে, তাহলে তার সঙ্গে কি সংসার করতে পারবেন? অবশ্যই পারবেন না।’
স্বাগতাকে প্রথম বিয়ের সাত বছরের মাথায় বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে হয়। এ সময় সংসার করতে গিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে তাঁকে চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছে। যে কারণে একসময় তাঁকে বিচ্ছেদের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘এই সমাজে মেয়ে হয়ে একা থাকা কঠিন। যখন আমি একা থাকলাম, তখন দেখলাম, যার বয়স ১৬, সেও আমার প্রেমিক, আবার যার বয়স ৭০, সেও আমার প্রেমিক। এমন অনেকেই প্রেম করতে চায়। তখন দেখা গেল, আমার কাজের বাইরে প্রেমিক ঠেকানো একটা বাড়তি কাজ হয়ে দাঁড়াল। এটা তো আমি চাই না। কেন আমাকে নিয়ে এসব ভাবার সুযোগ দেব? তখন মনে হলো, আমার অভিভাবক লাগবে। এই জন্য আমি আবার প্রেমে পড়ি। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেছি।’

অভিনেত্রী স্বাগতা। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

তবে অভিনয়শিল্পী হওয়ার কারণে প্রায়ই শুনতে হয় বিচ্ছেদ নিয়ে নানা কথা। কথাগুলো এমন— ‘তারকারা সংসার করতে পারে না’, ‘কেন সংসার ভাঙে’, ‘কেন তারকারা একের অধিক বিয়ে করে’—বিভিন্ন সময় এমন প্রশ্ন মুখ বুজে সহ্য করলেও এবার এটা নিয়েও চটেছেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র সেলিব্রিটি। আমার স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে সবার পরে আমার ডিভোর্স হয়েছে। আমার ক্লাসের ৮০ ভাগ মেয়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তারা তো সেলিব্রিটি না। শুধু আমাদের সঙ্গে ঘটলেই আপনারা উল্টাপাল্টা মন্তব্য করেন। আপনাদের মন্তব্যের কারণে আমি সেলিব্রিটি হয়েও সাত বছর মার খেয়েছি, মা-বাবাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তা–ই শুনেছি। তারপরও আমি সম্পর্ক থেকে বের হতে চাইনি। কারণ, আপনারা গালিগালাজ করবেন। কষ্ট করেও আমি সংসার করতে চেয়েছি।’

অভিনেত্রী স্বাগতা। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

এ সময় মনঃকষ্ট নিয়ে স্বাগতা আরও বলেন, ‘আমি ধৈর্য ধরেছি। চেষ্টা করেছি যেন সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু হয়নি। উপলব্ধি হয়েছে, একটাই জীবন। আপনাকে মেরে ফেলার অধিকার কারও নেই। কেউ আপনার গায়ে হাত দিতে পারে না। এটার প্রতিবাদ আমি শৈশব থেকে করে এসেছি, তারপরও আমি সাত বছর এত কিছু সহ্য করেছি।’

বর হাসান আজাদের সঙ্গে স্বাগতা। ছবি: স্বাগতার সৌজন্যে

বিভিন্ন সময় মেয়ে হয়ে মেয়েদের রোষানলে পড়তে হয় মেয়েদের। দেখা যায় বিবাহবিচ্ছেদ বা পরবর্তী প্রেম নিয়ে মেয়েরাই আগে প্রশ্ন তোলেন; এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান স্বাগতা। তাঁর মতে, মেয়েরাই মেয়েদের কম বুঝতে পারে। এটাকে তিনি মেয়ের পক্ষ থেকে মেয়েকে ইভটিজিং বলতে চান। ‘আমি প্রেমে পড়ে বারবার বিয়ে করছি, এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে নিয়ে ছেলেরা নানা কথা বলছেন, সেটা আমি মেনে নিতে পারতাম। তখন হয়তো বলতে পারতাম, ছেলেরা আমাকে পছন্দ করেন। তাঁদের এটা ভালো লাগছে না, যে কারণে উল্টাপাল্টা কথা লিখছেন। কিন্তু মেয়েরা কেন?’ বলেন স্বাগতা।

বিনোদন জগতে শুধু অভিনেত্রীদের বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু অভিনেতা বা নায়কদের বিয়ে নিয়ে সে অর্থে খুব একটা কথা হয় না। এ প্রসঙ্গে স্বাগতা বলেন, ‘আমাদের প্রায় সব নায়কেরই তো ডিভোর্স, কই তাঁদের নিয়ে তো কথা বলেন না। আমার বন্ধুবান্ধবদেরও একই অবস্থা। প্রায় সবার ডিভোর্স। এটা আসলে যুগের সমস্যা। এটা ডিজিটাল মাধ্যমসহ নানা কারণে হতে পারে। আমরা যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করি, তখন একটা শর্ট কানেকশন হয়ে যায়। এখানে নানা কথা বলা যায়। আমার সাবেক স্বামী আমাকে অসম্মান করতেন আর মানুষকে বলতেন যে মেয়েদের তিনি খুব সম্মান করেন। এগুলো কি সহ্য করা যায়? আমাকে ঘরে পেটাচ্ছেন, আবার ব্যাংকে গিয়ে সার্ভ করা মেয়েটির দুঃখ শুনে আসছেন। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমি কখনোই কথা বলিনি, বলতে চাইনি। আর ডিভোর্স নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলা বন্ধ করুন। যৌক্তিক কথা বলুন। না জেনে কারও ওপর দোষ চাপাবেন না।’