অভিনয়কেন্দ্রিক ব্যস্ততার মাঝেও সাংগঠনিক কাজে যুক্ত হয়েছেন। অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কোনো ভাবনাচিন্তা কাজ করেছে। জানতে চাই, কী সেই ভাবনাচিন্তা?
রাশেদ মামুন অপু: চিন্তাভাবনা তো অবশ্যই আছে। আমাদের অগ্রজ যাঁরা, যাঁদের হাত ধরে অভিনয়শিল্পী সংঘ তৈরি হয়েছে, তাঁরা দীর্ঘ সময়ে একটা জায়গায় এনে দিয়েছেন। আমাদের সেই জায়গা থেকে এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি নতুন কাজে হাত দিতে হবে। প্রথমে সংগঠনের বরাদ্দকৃত জমি প্রশাসনের সহযোগিতায় দখল পুনরুদ্ধার করতে হবে। অতিসত্বর সেখানে ভবন নির্মাণের কাজে হাত দেব, যেখানে অভিনয়শিল্পীদের জন্য অ্যাক্টর হোম হবে। তারপরই শিল্পীকল্যাণ তহবিল, যেটা পাস হয়ে আছে, সেটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া। এটা চালু হলে শিল্পীদের পেনশন, ভাতা, চিকিৎসাসুবিধা—যা যা কিছু, তা রাষ্ট্র বহন করবে। শিল্পীদের যেমন রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব আছে, তেমনি রাষ্ট্রেরও শিল্পীদের প্রতি দায়িত্ব আছে। অভিনয়কে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাব। আমাদের অগ্রজ, যাঁরা আজীবন অভিনয় করে গেছেন, স্বীকৃতি ছাড়া তাঁরা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। আমাদের বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কী করেন? অভিনয় করি বললে এরপর জিজ্ঞেস করা হয়, আর কী করি। এই পেশায় হাজার হাজার মানুষ জড়িত। লাখ লাখ মানুষের মন, মনন তৈরির জন্য শিল্পীরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য স্বীকৃতি আদায় জরুরি। এটা তো আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।
আপনাদের ভাবনাচিন্তা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরাজিত প্রার্থীদের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে কী?
রাশেদ মামুন অপু: আমরা যখন নির্বাচন করি তখন সবাই দেখেন, বাংলাদেশে অন্য কোনো পেশাজীবী সংগঠনে এত উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয় না। আমাদের স্লোগান হচ্ছে, ‘জিতবে একুশ হারবে না কেউ’। আমাদের নির্বাচনে বোঝাই যায় না, কে কার প্রতিপক্ষ। নির্বাচন একটা সিস্টেম, যাঁরা এই সিস্টেমে আসতে পারেননি, তাঁদের নিয়ে তো এগোতে হবে। এখানে বিভাজনের কোনো সুযোগই নেই। বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটি করে আমরা একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে এগোব।
অভিনয়শিল্পীদের সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয় এবারের নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনায় ছিল। অভিনয় অঙ্গনে রাজনৈতিক বিভাজনের এই বিষয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘ কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
রাশেদ মামুন অপু: প্রত্যেক মানুষ রাজনীতি সচেতন এবং তাঁরা যেকোনো রাজনীতিতে বিশ্বাসী হতেই পারেন। কিন্তু আমার পেশাজীবী সংগঠনে রাজনৈতিক প্রতিফলন ঘটাতে পারবে না কেউ। আমরা কখনো ব্যক্তিগত রাজনীতির দায়ভার সংগঠনের ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না। সংগঠনের বাইরে যে কেউ যেকোনো দলের বা মতের থাকতে পারেন। কিন্তু সংগঠনের ভেতরে আমরা সবাই এক, আমাদের পরিচয় শিল্পী। আমরা মানবতার কথা বলি, মানুষ ও দেশের জন্য কাজ করি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধকে লালন করি। আমাদের চেতনা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি—সব মিলিয়ে আমরা শিল্পী।
অভিনয়শিল্পীরা চাইলে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেন?
রাশেদ মামুন অপু : অভিনয়শিল্পীরাও তো মানুষ। তাঁর ব্যক্তিগত জায়গা থেকে রাজনৈতিক ভাবনাচিন্তা থাকেই, থাকতে পারে। সেটাকে আমরা শ্রদ্ধার চোখে দেখতে চাই। রাষ্ট্রের মানুষের অধিকার আছে, রাজনীতি করার অধিকার আছে।
প্রথম আলো :
কেউ কেউ বলেন, চাপে পড়ে সম্পৃক্ত হতে হয়?
রাশেদ মামুন অপু: চাইলেই সম্ভব। তবে একজন শিল্পীকে সব সময় মাথায় রাখতে হবে, আমি দেশের সবার। মানুষের সামনে যখনই কোনো শিল্পী যান, তখন রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখে না, শিল্পী হিসেবেই দেখেন।