সমবেত এ চুরি, ভোগের ঘটনা আমাদের জন্য বিশেষ এক প্রাপ্তি: আফজাল হোসেন

অভিনেতা আফজাল হোসেন
ছবি: ফেসবুক

বিভিন্ন সময়ে সমকালীন ঘটনা নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন আফজাল হোসেন। এবার ভোলাগঞ্জের পাথর লুট হওয়ার ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন গুণী অভিনেতা আফজাল হোসেন। প্রসঙ্গটি ভিন্নভাবে টেনে তিনি লিখেছেন, ‘বাঙালি দুঃখ পেতে ভালোবাসে, তাই সিনেমা, নাটক, নভেল, গান—এসব উপভোগ্য করে তুলতে যত্ন করে অনেক দুঃখ ভরে দেওয়া হয়।’ কেন লিখলেন এ কথা?

এই অভিনেতা একই সঙ্গে লিখেছেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, যে সিনেমা খুব কাঁদাতে পারে, সে সিনেমার নাম মহা আনন্দের খবর হয়ে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ বেশি দাম দিয়ে টিকিট কেটে হুড়মুড় হুলুস্থুল করে সে সিনেমা দেখতে যায়। ভাবা যায়, দুঃখ–ভারাক্রান্ত হতে, কাঁদবার জন্য একই সিনেমা দর্শক অনেকবার দেখে। অনেককে পকেটের পয়সা খরচ করে দেখাতেও নিয়ে যায়। একেই বলে পয়সা দিয়ে দুঃখ কেনা।’

অভিনেতা আফজাল হোসেন
ছবি: ফেসবুক

তখন কিশোর বয়স। লুকিয়ে রাখা গুলতি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলেন তাঁর মায়ের চোখে অশ্রু। তিনি কাঁদছেন। একলা ঘরে মা কেন কাঁদছেন সেটা আফজাল হোসেনের কিশোর মন তখনো বুঝতে পারে না। ঘটনাটি নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আম্মাকে কাঁদতে দেখে গুলতি পকেটে পুরে, ডাকি—আম্মা! চোখের পানি মুছে হাসেন আম্মা—কিছু হয়নি বাবা। হাতের বইটা তুলে দেখান। কাগজের বই রক্তমাংসের মানুষকে কীভাবে কাঁদাতে পারে, তা বুঝতে আম্মার পড়ে শেষ করা বইটা লাইব্রেরিতে ফেরত দিতে গিয়ে গোপনে রেখে দিই। সেই অল্প বয়সে লুকিয়ে লুকিয়ে বড়দের জন্য লেখা উপন্যাস ‘রিক্তের বেদন’ পড়ে কেঁদেকেটে বুক ভাসাই।’
সময়ের সঙ্গে আফজাল হোসেনও বড় হতে থাকেন। ‘কলেজে ভর্তি হয়ে এর–ওর কাছ থেকে প্রায়ই শুনি, যে যুবক ‘দেবদাস’ পড়েনি, সে যৌবনপ্রাপ্তই হয়নি। নিমাই ভট্টাচার্যের ‘মেমসাহেব’ পড়া হয়নি যত দিন, তত দিন উঠতে–বসতে শুনতে হয়েছে—আফজাল রে তোর জীবনই বৃথা।’

অভিনেতা আফজাল হোসেন
ছবি: ফেসবুক

অাফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘জীবন বৃথা হয়নি। উপন্যাস, গল্প কবিতা, গান, সিনেমা নাটক—এই জীবনকে দিয়েছে অনেক। রাজনীতির ধোঁকা খেতে খেতে খেতে মনে হয়, ইহজীবনে এই ধোঁকা খাওয়া, দুঃখ শোক, মনঃকষ্ট পাওয়ার দিন শেষ হবে না আমাদের। হতাশাগ্রস্ত মনে মাঝেমধে৵ প্রশ্ন জাগে, আমাদের কি মস্ত কোনো অপরাধ আছে, যার কারণে সৃষ্টিকর্তা জগতেই পইপই করে সে অপরাধের শাস্তি ভোগ করিয়ে ছাড়ছেন! আবার এটাও মনে হয়—তিনি আমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল, আমাদের অশেষ ধৈর্যশক্তি ও দুর্ভোগ সহ্য করবার সাধ্য দান করেছেন।’

অভিনেতা আফজাল হোসেন
ছবি: ফেসবুক

সম্প্রতি সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনা আলোচনায় আসেন। হতাশা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল টেলিভিশনের খবরে শুনতে পেলাম, দেশ ও মানুষের উন্নতি চাওয়া মহান রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ‍্যের সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আত্মীয়ের মতো মিলেমিশে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর গিলে খাওয়ার অসাধারণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।’

মনঃক্ষুণ্ন হয়ে আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘সমবেত এ চুরি, ভোগের ঘটনা আমাদের জন‍্য বিশেষ এক প্রাপ্তি। আমরা দুঃখ পেতে ভালোবাসি, দুঃখ পাওয়ার ঘটনা আমরা পয়সা দিয়ে উপভোগ করতে দ্বিধা করি না। কী চমৎকার ভাগ্য আমাদের, এমন দুঃখদায়ক ঘটনা আমরা নিখরচায় উপভোগ করতে পারলাম। সঙ্গে বোনাস হিসেবে একটি বিশেষ জ্ঞানলাভও হয়েছে, দেশ ও দশের ভালোর জন্য সব রাজনৈতিক দল এক হতে পারুক বা না পারুক, ভোগের স্বার্থে সবাই প্রাণখুলে এক হতে পারে।’

আরও পড়ুন