পোশাক নিয়ে আপনজনেরাই অপমান করেছেন

মডেল ও অভিনেত্রী আইরিন সুলতানা
ছবি: সংগৃহীত

শৈশব থেকেই মিডিয়ায় কাজের আগ্রহ ছিল। কিন্তু পরিচিত কাউকে সেগুলো তেমন একটা বলতে পারতেন না। কারণ, তাঁর চাওয়াকে অনেকেই ছোট করে দেখতেন। সেই আইরিন সুলতানা একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিডিয়ায় নিয়মিত হন। সে সময় থেকে তাঁকে শুনতে হয়েছে মাথায় ‘বুদ্ধি কম’! শুরু থেকে এখনো তাঁকে অপমান ও বুলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। নারী হিসেবে বিনোদন জগতের পথচলার নানা অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলেন এই অভিনেত্রী।


সময়টা ২০০৮ সাল। তখন মডেলিং করতেন। এর মধ্যেই চাইছিলেন অভিনয় করবেন। বেশ কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই সমালোচনা করে এই অভিনেত্রীর। নারী হিসেবে সেই দিনগুলোতে নানা বাধার মুখে পড়েছেন। এর কারণ নারী ও একই সঙ্গে মডেল বিষয়কে ছোট করে দেখা হয়েছে, এমনটি জানান তিনি।
আইরিন সুলতানা বলেন, ‘আমার অভিনয়ের কথা শুনে অনেকে মুখের ওপর বলতে শুরু করলেন, যারা মডেল তারা সুন্দরী হয়, কিন্তু মাথায় বুদ্ধি কম থাকে। আমি চুপ হয়ে গেলাম। আবার মডেলরা নাকি অভিনয়ের “অ” জানে না। কেউ বলতে লাগলেন, আমাকে দিয়ে নাকি অভিনয় হবে না। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নানাভাবে আমাকে অপদস্থ হতে হয়েছে। একজন তরুণ অভিনেত্রী হিসেবে এটা আমাকে মানসিকভাবে মাঝেমধ্যে দুর্বল করে দিত।’

আইরিন সুলতানা
ছবি: ফেসবুক

মডেলিংয়ের পর টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন আইরিন। এখানেও তাঁকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে হয়েছে। সিনেমার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। পরে আরিফিন শুভর সঙ্গে ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। পরে এস এ হক অলিকের পরিচালনায় ‘এক পৃথিবী প্রেম’ সিনেমায় অভিনয় করেন। সহ–অভিনয়শিল্পী ছিলেন আসিফ নূর। প্রতিবছর তিন–চারটি করে সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হতে থাকেন।
আইরিন বলেন, ‘মিডিয়ায় আমার পরিচিত কেউ ছিল না। তারপরও আমি একজন নারী হয়ে অভিনয় করতে চাই, যেটার জন্য প্রতি পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। নতুন বলে আমাকে বলেছে, আমাকে দিয়ে এটা হবে না, ওটা হবে না। আমি এটা করতে পারব না, ওটা করতে পারব না; এমন নানা কথা শুনতে হয়েছে। আবার আমি কেন মিডিয়ায় কাজ করব, সেটাও শুনতে হয়েছে। যেগুলো হয়তো আমার পরিচিত কেউ থাকলে শুনতে হতো না। সোজা পথে অভিনেত্রী হতে পারতাম।’
নানাভাবে অপদস্থ হলেও এই বিদ্রূপ তাঁকে মানসিকভাবে শক্তি জুগিয়েছে। যে কারণে তিনি অভিনয় করে এগিয়ে যেতে পেরেছেন। সংগ্রাম করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন বলে মনে করেন আইরিন। তিনি বলেন, ‘মিডিয়া নারীদের জন্য অনেক কঠিন জায়গা। কারও যদি মিডিয়ায় পরিচিত কেউ না থাকে, তাহলে তাকে সংগ্রাম করতেই হবে। কথা শুনতেই হবে। এই সংগ্রাম ২০০৮ সাল থেকে করে আসছি। এখনো সংগ্রাম করতে হয়। হয়তো আমার জীবনে সংগ্রামের শেষ কখনোই হবে না।’

একটি শুটিংয়ে আইরিন
ছবি: সংগৃহীত

২০২১ সাল থেকে তাঁকে খুব একটা সিনেমায় দেখা যাচ্ছে না। জানালেন, এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। ফাঁকে শুটিংও করেছেন, কিন্তু কাউকে জানাননি। কারণ, তাঁকে ঘিরে নাকি বিনোদন অঙ্গনে অনেকবার ‘রাজনীতি’ হয়েছে। তাহলে এসব ঘটনার কারণে অভিনয় কম করেছেন—এমন প্রশ্নে আইরিন বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে আমি চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সিনেমার শুটিংও শুরু হয়েছে। পরে দেখি সিনেমা শেষ হয়ে যায়, অথচ আমি নাই। আমাকে এ ঘটনাগুলো অনেক কষ্ট দেয়। এ নিয়ে অনুতাপ করি না। এসব নিয়ে অভিমান কার ওপর করব। এটা আমার সেকেন্ড পরিবার। এখানে তো কেউ আমার কথা শোনার নাই। কাকে বলব কষ্টের কথা। সবাই তো আপন, তাঁরাই কথাগুলো বলেছেন।’
বর্তমানে একটি সিনেমার শুটিং করছেন। সেই সিনেমার শুটিং থেকেই নারী দিবসে কথা বললেন আইরিন। কিন্তু সিনেমার নাম ও অন্যান্য কোনো বিষয় নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চান না। এর মধ্যে আরও দুটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। একটিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় শেষ করেছেন। অভিনয় নিয়েই এখন তাঁর ব্যস্ততা। পাশাপাশি নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। যুক্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ে।

আইরিন
ছবি: ফেসবুক

যখন কেউ ছোট করে দেখেছে, তখন নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছেন আইরিন। অপমান ও বুলিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। পরিচিতি বাড়ার পরেও কেন বুলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে—এমন প্রশ্নে আইরিন বলেন, ‘আমাকে এখনো নানাভাবে অপমানিত হতে হয়। কোনো অনুষ্ঠানে বা কোথাও গেলে শুনতে হয়, আমার সমসাময়িক অনেক শিল্পীর মতো কেন আমি এগোতে পারছি না। আমাকে দিয়ে কী আর হবে? এসব বলে সরাসরি অপমান করা হয়। তা ছাড়া অপমান করার জন্য তো পোশাককেও অনেকে বেছে নেয়। একটি ওটিটির কাজে আমাকে অন্যরকম পোশাক পরতে হয়েছিল। এগুলো নিয়ে শুনতে হয়, এই রকম ওই রকম পোশাক আমি কেন পরেছি, এটা আমাদের সঙ্গে যায় না। এখন চরিত্রের প্রয়োজনে আমাকে এই পোশাক পরতে হয়। এটা তো কস্টিউম ডিজাইনার আমাকে চরিত্রের প্রয়োজনে পরতে বলেন। সব পরিস্থিতির জন্য কেন আমি দায়ী থাকব? এটা কাউকে বোঝাতে পারি না।’