অভিনেত্রী আশাদের বাইককে যেভাবে ধাক্কা দিল ট্রাকটি (ভিডিওসহ)

আশা চৌধুরী। ছবি : ফেসবুক থেকে

ঘটনাটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের। রাত দেড়টা। গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে এক আত্মীয়ের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চেপে ঢাকায় ফিরছিলেন উঠতি অভিনেত্রী আশা চৌধুরী। দারুস সালাম এলাকায় হঠাৎ একটি ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মারা যান আশা। ঘটনার লোমহর্ষক দৃশ্যটি রেকর্ড হয়ে যায় পেছনে থাকা একটি প্রাইভেট কারের স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরায়।

একটি প্রাইভেট ফেসবুক গ্রুপে পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মোড় ঘোরার জন্য আশাদের মোটরসাইকেলটি অপেক্ষা করছিল একটি পিকআপ ভ্যানের পেছনে। এ সময় তাঁদের পেছন থেকে আসা একটি ট্রাক ধাক্কা দেয় মোটরসাইকেলটিকে। মোটরসাইকেলচালক ছিটকে পড়ে যান ডান পাশে, অভিনেত্রী আশা বাঁ পাশে, প্রায় ২০ ফুট দূরে। বাইকচালক অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়েন। দৌড়ে যান আশার কাছে। গিয়ে দেখেন, ট্রাকটির চাকা ততক্ষণে আশার মুখের কিছু অংশ থেঁতলে দিয়ে দ্রুত সটকে পড়েছে।

আরও পড়ুন
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আশা চৌধুরী। ছবি : ফেসবুক থেকে

ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়। তারা আশাকে নিয়ে যায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, আশা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে দারুস সালাম থানা কর্তৃপক্ষ। ওই থানার সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, মোটরসাইকেলের চালক অভিনেত্রী আশার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। তিনিই আশাকে বিভিন্ন স্থানে আনা-নেওয়া করতেন। পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি জানান, তাঁরা মামলা করবেন কি না, এখনো সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

গত শনিবার সর্বশেষ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আশা। রোমান রুনীর একক নাটক ‘দ্য রিভেঞ্জ’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। পরিচালক প্রথম আলোকে জানান, আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় আশা চৌধুরীর মরদেহ তাঁদের রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসায় নেওয়া হয়। আশার মুখ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়ায় তা পরিবারকে না দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ কারণে লাশটি বিশেষভাবে কফিনে করে সেখানে নেওয়া হয়। আশার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে তাঁর মা, তিন বোন ও স্বজনদের কান্নায় হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শেষবারের মতো তাঁরা আদরের আশাকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অনুমোদন তাঁরা পাননি। রোমান রুনী বলেন, ‘কেবল আশার বাবাই মেয়ের লাশ দেখেছেন। পরিবারের অন্যদের দেখানোর মতো অবস্থা ছিল না। তাই দ্রুত জানাজার জন্য লাশটি মসজিদে নেওয়া হয়। বাদ মাগরিব রূপনগর আবাসিক এলাকার মসজিদে জানাজা শেষে আশাকে কালশী কবরস্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত হয়।’

চার বোনের মধ্যে আশা চৌধুরী সবার বড়। রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলোজিতে (বিইউবিটি) আইন বিভাগে সপ্তম সেমিস্টারে পড়াশোনা করতেন তিনি। প্রায় চার বছর আগে তিনি অভিনয় জগতে আসেন। নাটকে অভিনয় ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ছাড়াও তিনি বিজ্ঞাপন ও গানের মডেল হয়েছেন। চেয়েছিলেন অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেবেন। আশার স্বপ্ন ছিল, প্রধান চরিত্রে অভিনয় করবেন। অভিনয় দক্ষতার কারণে দ্রুত সেই সুযোগ তিনি পেয়েও যান। প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে টানা এক সপ্তাহ বেশ পরিশ্রম করেছেন। নিজে থেকেই সহশিল্পী সালাহউদ্দিল লাভলু এবং আনিসুর রহমান মিলনের সঙ্গে গল্প নিয়ে কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি বড় পর্দায় নাম লিখিয়েছিলেন আশা। তাঁর অভিনীত ছবিটির নাম ‘বাবার মেয়ে’। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর অভিনীত একাধিক নাটক ও টেলিছবি। এর আগে জাহিদ হাসানের সঙ্গে ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ নাটকে অভিনয় করেছেন আশা চৌধুরী।