‘আজ রবিবার’–এর সেই ফুলি এখন কোথায়

নিজে অভিনয় না করলেও ফারুক আহমেদকে অভিনয় চালিয়ে নিতে শতভাগ সহযোগিতা করেছেন নাসরিন

‘ফুলির কথাই আমার কথা।’ ‘আজ রবিবার’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনেতা ফারুক আহমেদের এ সংলাপটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নাটকের ফুলি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নাসরিন নাহার। অভিনয়ে ভালো করার সম্ভাবনা ছিল তাঁর। কিন্তু এগোননি। নানা কারণে বিনোদন অঙ্গন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন নাসরিন।

‘আজ রবিবার’ ধারাবাহিক নাটক দিয়ে দর্শকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। নাটকটি প্রচারের পর যেখানেই গেছেন, চারপাশের মানুষ দূর থেকে তাঁকে ফুলি সম্বোধন করত। বেশির ভাগ সময় শুনতে হতো, ‘ওই যে ফুলি মতি যায়।’ সেকালে সেলফি তোলার সুযোগ ছিল না। তাই অটোগ্রাফ দিতে হতো নাসরিনকে। ওই এক নাটকের কল্যাণে ২৫ বছর পরও মানুষ মনে রেখেছে তাঁকে। প্রথম দর্শনে মনে করতে না পারলেও অনেকেই বলেন, ‘কোথাও যেন দেখেছি।’

‘আজ রবিবার’ ধারাবাহিক নাটক দিয়ে দর্শকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন তারা
ছবি: সংগৃহীত

‘আজ রবিবার’ নাটকটি জনপ্রিয় হওয়ার পর নির্মাতাদের কাছে নাসরিনের চাহিদা বাড়ে। শমী কায়সার, গাজী রাকায়েতসহ বেশ কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে তিন–চার বছর অভিনয় করেছেন তিনি। পরে অভিনয় কমিয়ে দেন।

জনপ্রিয়তা থাকার পরও কেন অভিনয়ে নিয়মিত হননি? নাসরিন জানান, টেলিভিশন মিডিয়ায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে সরে আসেন। পরিবার নিয়েও ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। থিয়েটারেও সময় দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি চাইলে নিয়মিত অভিনয়টা চালিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু টেলিভিশনে অভিনয় করতেই হবে, সে রকম কোনো ভাবনা আমার ছিল না। আবার আমার স্বামী ফারুক নিয়মিত অভিনয় করত। তাঁর ও পরিবারের জন্য স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে। আমি চেয়েছি একজনই নিয়মিত অভিনয় করুক। দুজন অভিনয় করলে হয়তো সংসারটা হতো না।’

আজ রবিবার নাটকের দৃশ্যে নাসরিন জাহান
ছবি: সংগৃহীত

নাসরিনের স্বামী অভিনেতা ফারুক আহমেদ। ১৯৯৩ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। ঢাকা থিয়েটারে ‘সংলাপ’ নাটকের মহড়ার সময় দুজনের পরিচয়। প্রথম দেখায় ফারুক আহমেদ তাঁর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। শুরুতে তাঁদের বিয়েতে সবাই রাজি থাকলেও নাসরিন নিজেই রাজি ছিলেন না। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘নিজেদের দলের ছেলেকে বিয়ে করলে সবাই কী বলবে! তা ছাড়া আমার বড় বোনেরও তখন বিয়ে হয়নি। সেসব কারণেই বিয়েতে রাজি হইনি। পরে থিয়েটারের জামান ভাই, দুলাল ভাই, কামাল ভাইসহ সবাই মিলে আমাকে বোঝালেন, ফারুক তো অন্য কাউকে বিয়ে করবে।’ সে সময় নাসরিন ভেবেছিলেন, এই অভিনেতাকে বিয়ে করলে অন্তত নাটকটা ঠিকঠাক করা যাবে। তা ছাড়া ছেলে হিসেবে ফারুক আহমেদও চমৎকার।

পরে নিজে অভিনয় না করলেও ফারুক আহমেদকে অভিনয় চালিয়ে নিতে শতভাগ সহযোগিতা করেছেন নাসরিন। স্বামীর অভিনয় নিয়ে আলোচনা–সমালোচনাও চলে নিজেদের মধ্যে। অভিনয়ে ব্যস্ত থাকায় ফারুক আহমেদ পরিবারে সময় দিতে পারেন না। এ নিয়ে নাসরিন নাহারের কোনো অভিযোগ নেই। অভিনয় নিয়ে কেউ কাউকে কখনই বাধা দেননি।

নাসরিনের স্বামী অভিনেতা ফারুক আহমেদ।
ছবি: সংগৃহীত

নাসরিন নাহারের অভিনয়ের হাতেখড়ি শৈশবে। শিশুদের নাটকের দল ‘সংলাপ’-এ কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। পরে ১৯৮৬ সালে যোগ দেন ঢাকা থিয়েটারে। সেখান থেকেই সুবর্ণা মুস্তাফার পরিচালনায় ‘তিয়াস’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর আরও বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ের পর ডাক পেয়েছিলেন ‘আজ রবিবার’ নাটকে। তিনি জানান, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার কাছ থেকেই তিনি এ নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব পান। পরে টানা এক মাসে শুটিং শেষ করেন। নাটকটির শুটিংয়ের শুরু থেকে প্রায় প্রতিটা দিনই ছিল অনেক স্মরণীয়। স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানান, একই মাসে তাঁর নিজের এবং হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন হওয়ায় শুটিং সেটে একই সঙ্গে তাঁর জন্মদিনের কেক কাটা হয়েছিল। নাটকে সাপ নিয়ে মজার কয়েকটি দৃশ্য ছিল। নাটকের মতো ঘটনা ঘটেছিল শুটিং সেটেও। তিনি বলেন, ‘একবার শুটিং করতে করতে বাসার মধ্যে সাপ হারিয়ে যায়। তখন ভয়ে আমরা টেবিলের ওপর দাঁড়িয়েছিলাম।’

আজ রবিবার নাটকের দৃশ্যে নাসরিন জাহান ও ফারুক আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

টিভি নাটকে অভিনয় না করলেও এখনো নিয়মিত থিয়েটারে অভিনয় করেন নাসরিন। ‘চাকা’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ‘ধাবমান’, ‘উষা উৎসব’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘প্রাশ্চ্য’সহ বেশ কিছু মঞ্চনাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। এখনো নিয়মিত শিল্পকলা একাডেমির মহড়ায় যোগ দেন। টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের আগ্রহ কম তাঁর, তবে টিভি নাটক তিনি ভীষণ মিস করেন।
নাসরিন নাহারের বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকার ওয়ারীতে, থাকেন নিউ ইস্কাটনে। পরিবার সামলানো, বই পড়া, সিনেমা দেখাই এখন তাঁর প্রধান কাজ। একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ নাওয়ার ঐশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। তিনি অভিনয় করতে আগ্রহী নন। বরং ছবি আঁকতেই বেশি ভালোবাসেন।

মেয়ের সঙ্গে তারা দুজন
ছবি: সংগৃহীত