‘আমাকে নিজের লড়াই নিজেরই করতে হয়েছে’

মডেলিং জগৎ থেকে সিনেমায় নাম লেখাতে না–লেখাতেই শরিফুল রাজের ঝুলি ভর্তি সিনেমা আর ওয়েব সিরিজেসুমন ইউসুফ

মডেলিং জগৎ থেকে সিনেমায় নাম লেখাতে না–লেখাতেই শরিফুল রাজের ঝুলি ভর্তি সিনেমা আর ওয়েব সিরিজে। দুটি ছবি আছে মুক্তির অপেক্ষায়। ১৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেল তাঁর অভিনীত একটি ওয়েব সিরিজ—‘ইনফিনিটি’। রাজ কথা বললেন তাঁর এই সময়ের কাজগুলো নিয়ে।

প্রশ্ন:

‘ইনফিনিটি’ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? এতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। গল্পটা ভিন্ন ধরনের বলে দর্শক কাজটি বেশ পছন্দ করছে। মূলত এই ওয়েব কনটেন্টের চিত্রনাট্যটাই অন্য রকম। তার ওপর পরিচালক মেহেদি হাসিব খুবই এনার্জেটিক একজন নির্মাতা। অ্যাকশন ঘরানায় এটাই আমার প্রথম কাজ। তাই অভিনয়ের দিক থেকে নতুন নতুন অনেক কাজ করার জায়গা ছিল। আমিও উপভোগ করেছি, নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। ক্রাইম থ্রিলার আমার খুব পছন্দ। সেখানে আমি নিজেই একটা ক্রাইম থ্রিলারে অভিনয় করেছি। তাই প্রতিটি ধাপেই অনেক উপভোগ করেছি।

প্রশ্ন:

এই সিরিজে আপনাকে দেখা গেছে বিশেষ অতিমানবীয় ক্ষমতাসমৃদ্ধ (সুপার পাওয়ার) একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার চরিত্রে। বাস্তবে যদি কোনো বিশেষ ক্ষমতা আপনাকে দেওয়া হতো, সেটা হলে কি আপনি খুশি হতেন?

বাস্তব আর পর্দার ব্যাপার তো কখনো মেলে না। তবে সুপারহিরোদের মতো বিশেষ ক্ষমতা পেলে কার না ভালো লাগবে? সুযোগ হলে আমি ‘টাইম ট্রাভেল’ করার শক্তি নিতাম। যখন যেখানে যে–ই সময়ে যেতে মন চাইবে, সেখানেই চলে যেতাম। হুট করে এভারেস্টের চূড়ায় উঠে বসে থাকতে মন চাইলে সুপারহিরোর মতো উড়ে গিয়ে সেখানেই বসে থাকতাম। ইশ্‌! যদি পারতাম…

শরিফুল রাজ
সুমন ইউসুফ
প্রশ্ন:

চলতি মাসে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে প্রথম আলোর একটি সচেতনতামূলক ভিডিওতে আপনার কণ্ঠ শোনা গেল। ভয়েস ওভারের এই কাজটি করতে কেমন লেগেছে?

এই ভয়েস ওভার দেওয়ার পেছনে একটা গল্প আছে। এই ভিডিওর পরিচালক তাসনিমুল তাজ আমার খুব কাছের ছোট ভাই। একদিন হুট করেই আড্ডা দিতে দিতে আমরা এই ভিডিওর পরিকল্পনা করি। আসলে আমাদের দেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধে তেমনভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো সচেতনতামূলক কাজ নেই। তাজ খুব চমৎকারভাবে এই সংবেদনশীল বিষয়ের চিত্রায়ন করেছে। তাই আমিও মন থেকে এই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাই। এ ধরনের একটা চমৎকার কাজের অংশ হতে পারা আমার জন্য খুব আনন্দের।

প্রশ্ন:

আত্মহত্যা, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখন খুব কথা হচ্ছে। শিল্পীরা তো ভীষণ মানসিক চাপে থাকেন। আপনি কখনো মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন? কখনো মনে হয়েছিল ‘আর পারছি না’? সেই গল্পটা শুনতে চাই।

মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটা খুব জরুরি। কিন্তু সময়ের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই যখন সময় আমাদের অনুকূলে থাকে না, তখন আমরা আমাদের মনের ওপর থেকেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। আমিও এর বাইরে নই। এমন অনেক সময় এসেছে জীবনে যখন বাজেভাবে ভেঙে পড়েছি আমি। আমাদের এখানে কেউ মানসিকভাবে ঠিক না থাকলে, সেটাকে সবাই হাস্যকরভাবে নেয়, মজা করে। কিন্তু পরিবার থেকে শুরু করে, বন্ধু হোক বা সহকর্মী, যে কেউ একটু চেষ্টা করলেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়া একজন মানুষকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে। আমি নিজেই জীবনে অনেকবার বাজেভাবে ডিপ্রেশনে ভুগেছি। আমাকে নিজের লড়াই নিজেরই করতে হয়েছে, এবং আমি আবার ফিরে এসেছি। মানসিকভাবে ঠিক না থাকলে মানুষ মাঝেমধ্যে নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যায়। কিন্তু নিজেকে ভালোবাসা, সম্মান করা খুব জরুরি। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। বুকভরে নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই।

প্রশ্ন:

‘হাওয়া’ ছবির কী অবস্থা? এই ছবি নিয়ে কতটা প্রত্যাশা আপনার?

এখন ‘হাওয়া’র সম্পাদনার কাজ চলছে। করোনা এসে ছবি মুক্তির পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিল। তবে এত সংকটের মধ্যেও আমি ‘হাওয়া’ নিয়ে আশাবাদী। চঞ্চল চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, সুমন আনোয়ারের মতো বড় মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে পারা আমার জন্য গর্বের ব্যাপার। মেজবাউর রহমান সুমন খুব যত্নের সঙ্গে ছবিটি বানিয়েছেন। পরিচালক হিসেবে তিনি আমার যতটা পছন্দের, তার চেয়েও বেশি পছন্দ মানুষ হিসেবে। পুরো সময়টাতেই কাজ করে আরাম পেয়েছি। ‘হাওয়া’ আমার জন্য সিনেমা না, একটা স্কুল। কত কিছু যে শিখেছি কাজ করতে গিয়ে, এর হিসাব নেই।

শরিফুল রাজ
প্রথম আলো

বেশ কিছু চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট পেয়েছি। ওগুলো পড়ছি। কিছু ওয়েব সিরিজের পরিকল্পনা চলছে। ‘হাওয়া’ আর ‘পরান’ নামের দুটো ছবি আছে মুক্তি অপেক্ষা। সিনেমা হলের বাতি জ্বলার অপেক্ষায় আছি।

প্রশ্ন:

করোনার সময়টা কীভাবে কাটালেন?

আমি করোনায় আক্রান্ত হয়নি। তবে যা বুঝেছি তা হলো, করোনাভাইরাস আমাদের সবকিছু উল্টেপাল্টে তুলে ধরেছে। সিস্টেমের ঘাটতিগুলোকে উন্মোচন করেছে। মানুষের আসল রূপ প্রকাশ করে দিয়েছে।