এক গুরুর সঙ্গে ১৪ শিষ্য

১৪ নির্মাতা বানিয়েছেন ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র

অভিনয় নয়, এই ঈদে অন্য কারণে আলোচনায় মনোজ প্রামাণিক। ছোট পর্দার এই অভিনেতা শিক্ষকও। ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে পড়ান তিনি। নিজের বিভাগের ১৪ জন শিক্ষার্থীর পরিচালক হিসেবে অভিষেকের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। আর পুরো কাজের তিনি হয়েছেন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর।

মনোজ প্রামাণিক

মনোজ প্রামাণিক বললেন, ‘আমার ছাত্ররা আমাকে প্রথমে বলেছিল, সুন্দর সুন্দর গল্প পাঠাচ্ছিল। আমি আইফা আইয়ের কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিলের সঙ্গে কথা বললাম। উনিও রাজি হয়ে গেলেন। শুরুতে সাতটা গল্প ছিল। তারপর হলো ১০টা। তারপর আরও অনেকে আগ্রহী হলো। হলো ১৪টা গল্প। এর ভেতর চারটা বদলানো হলো। অবশেষে মনে হচ্ছে কাজটা ভালোই হয়েছে।’

চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই নির্মাতা বললেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তরের কেবল শুরু আছে। শেষ নেই। ওরা গল্প লিখেছে একরকম। টেলিভিশনের কিছু নীতিমালা মেনে সেখানে প্রতিনিয়ত বদলাতে হয়। এর ভেতর লকডাউন। তার ভেতর হুট করে ওদের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। আবার ঢাকায় কারও কারও থাকার জায়গা নেই। কেউ কেউ এত চাপ নিতে না পেরে অসুস্থ হয়ে গেল।

একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের দৃশ্যে মামুনুর রশীদ

সুস্থ হয়ে কাজ শেষ করল। প্রতিদিন শুটিং শুরু হয় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে। একদিন ঝুমবৃষ্টি। তারপরও আমরা ভালোভাবে কাজটা শেষ করেছি। সবারই খুব ভালো লেগেছে। এটা কিন্তু কেবল ১৪ নির্মাতার কাজ নয়, ২০ জনের একটা টিম তৈরি হয়ে গেছে আমাদের। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এবার পেরে উঠিনি। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই পরিসরটা বড় হবে।’ এর আগে মনোজ নূরুল আলম আতিকের পরিচালনায় ‘পতঙ্গ শিকারী ফুল’–এ তাঁর ছাত্রদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করেছেন।

অভিনয় করেছেন তারিন

আলফা আইয়ের ব্যানারে ১৪ নির্মাতা বানিয়েছেন ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সঙ্গে ছিল মনোজের নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মনপাচিত্র। সেখানে অভিনয় করেছেন দেশের গুণী অভিনয়শিল্পীরা।

শুটিং চলছে

তাঁদের মধ্যে আছেন মামুনুর রশীদ, তাসনুভা তিশা, স্পর্শিয়া, ইমতিয়াজ বর্ষণ, শিল্পী সরকার অপু, নাসির উদ্দিন খান, সাবিলা নূর, শাহনাজ খুশি, ইয়াশ রোহান, খাইরুল বাসারসহ আরও অনেকে। বেশ কয়েকটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে মনোজ নিজেও অভিনয় করেছেন। সিনেমাগুলো ঈদুল আজহার দিন থেকে প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১টায় ও ১১টা ৫০ মিনিটে দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ছবিগুলো দেশের একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে।
ইতিমধ্যে ফেসবুকে এই উদ্যোগ ও স্বল্প দৈর্ঘ্য এই চলচ্চিত্রগুলোর প্রশংসা করছেন দর্শক ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

একজন লিখেছেন, ‘সম্ভবত এবারের ঈদের সেরা কাজ এগুলোই। আগ্রহ নিয়ে কাজগুলো দেখছি। কাজ দেখে মনেই হয় না যে সিনেমাগুলো শিক্ষার্থীদের বানানো। যাঁদের বয়স মাত্র ২০ থেকে ২২। যেন পাকা হাতের নিখুঁত কাজ। তাঁদের থেকেই দু–একজন বা তারও বেশি ভালো নির্মাতা বের হয়ে আসবেন। একসময় এঁরাই আমাদের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন। আমাদের দেশে মেধাবী মানুষের অভাব নেই। কিন্তু সঠিক চর্চার অভাবে সব হারিয়ে যায়। মনোজ স্যার তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মনপাচিত্রের মাধ্যমে সেই চর্চাই শুরু করেছে। ছাত্র আর শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, তিনি তার আদর্শ উদাহরণ। তিনি কেবল অভিনেতা বা শিক্ষক নন, একজন সাইলেন্ট মেকারও। যে অভিনেতা আর শিক্ষক নির্মাতা তৈরির কারিগর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।’

প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাত দুগুণে চৌদ্দ’

স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর নাম আনোয়ারা–মনোয়ারা, দোজাভ্যু, জুজু, সহজ সুন্দর, নওমহল, বিড়াল তপস্যা, ভূগোল ‍+, মধুচক্র, কাউয়া, গ্যাঁড়াকল, শুক্রবার, ঝিলিক, জয় সূর্যসেন জর্ডান বসকে ও সেমাডেট। এই সিনেমাগুলোর ‘খুদে নির্মাতা’রা হলেন যথাক্রমে ইকবাল হাসান খান, শ্রী অভিক চন্দ্র তালুকদার, সিজু শাহরিয়ার, জিডি মজুমদার, এ বি মামুন, ইশতিয়াক জিহাদ, মানবমিত্র, হাসিব আহমেদ, গোলাম মুনতাকিম, রাহিল রহমান, হুমাইরা স্নিগ্ধা, শফিকুল সাজীব, আহসাবুল ইয়ামিন রিয়া ও মুনসিফ উজজামান মিম। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাত দুগুণে চৌদ্দ’।