এখানে লেখা প্রকাশিত হলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়

মামুনুর রশীদ। ছবি: প্রথম আলো

‘জীবনের সাইকেল’ নামে সপ্তাহে একদিন প্রথম আলোয় আমি একটি কলাম লিখতাম। এটা ছাপা হতো সম্পাদকীয় পাতার কোনায় এক কলামে। লেখাটি যেদিন প্রকাশিত হতো, সেদিন প্রচুর ফোন পেতাম। ওই কলামে নানা রকম বার্তা দিতাম, যার বেশির ভাগই ছিল রাজনৈতিক। এক-এগারোর সময় লন্ডনভিত্তিক একটি সংগঠন লেখাগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিজেদের ফেসবুক ও ব্লগে প্রকাশ করত। এই কলাম লিখে অনেক সাড়া পেয়েছিলাম। পেশাগত ব্যস্ততায় একপর্যায়ে সেটা আর চালিয়ে যেতে পারিনি।

প্রথম আলোর বিনোদনমূলক সাময়িকী আনন্দতে নাটকের রিভিউ লিখেছি। সেগুলো লিখতাম মূলত নাটকটিকে উৎসাহ দিতে। একটু সমালোচনাও সেখানে থাকত। সেই লেখা থেকেও একরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেত। একবার জ্যোতি সিনহার একক অভিনয়ে মণিপুরি থিয়েটারের নাটক ‘কহে বীরাঙ্গনা’ দেখে মুগ্ধ হয়ে আমি লিখেছিলাম। নাটকের ২৫তম প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখি দর্শকদের মধ্যে হইচই সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা জানান, আমার লেখা পড়েই তাঁরা নাটকটি দেখতে এসেছেন। নাটক ভালো না লাগলে আমাকেই টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হবে। প্রদর্শনী শেষে দর্শকদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তাঁরা জানান, তাঁদের টিকিট কেনা সার্থক হয়েছে।

‘অমানুষ’ নাটকে মিতা চৌধুরী ও মামুনুর রশীদ।
ছবি: প্রথম আলো

মতি ভাই (প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান) সব সময় বলতেন, লেখেন। আমি বলতাম, লিখে কী হবে? তিনি বলতেন, লিখেই হবে। বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে লেখার পর আমি বুঝতে পেরেছি যে লেখার আসলে অন্য রকম একটি শক্তি আছে। সম্প্রতি ‘মধুপুরের বাসন্তী রেমার কান্না’ শিরোনামে প্রথম আলোয় আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়। লেখাটি প্রকাশের পর খবর পাই, জেলা প্রশাসনের লোকজন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ক্ষতিগ্রস্ত ওই নারী বাসন্তীকে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। এ ছাড়া বন বিভাগ একটি নির্দেশ জারি করেছে যে এভাবে গারোদের জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। ঘটনায় আমি খুবই গর্ববোধ করেছি। এই যে নানা ঘটনা ধরে লেখা, সেসব প্রকাশ করা, তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান হওয়া, এগুলোর অন্যতম কারণ প্রথম আলো সর্বাধিক পঠিত কাগজ। এখানে লেখা প্রকাশিত হলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হয়।

নিজ জীবন ও শিল্পযাত্রা নিয়ে একক বক্তৃতা বৈঠকে কথা বলেন অভিনেতা মামুনুর রশীদ।
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোর নানা কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছি। যেমন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বিচার খুব কষ্টকর কাজ। কারণ, কোনো শিল্পের বিচারই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। পুরস্কারের ফল প্রকাশের পর অনেক শিল্পী ক্ষুব্ধ হন, ক্রুদ্ধ বন্ধুদের কথাও শুনতে হয়।

প্রথম আলোর বিনোদন পাতাটি আমার কাছে খুবই মূল্যবান। কারণ, সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি প্রতিদিন এই পাতা বিনোদন অঙ্গনের মানুষেরা উল্টে-পাল্টে দেখেন। শিল্পীদের মধ্যে যাঁরা পত্রিকাটির কট্টর সমালোচক, তাঁরাও এই পাতা পড়েন। সেই পাতা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে ভেবে খারাপ লাগে। এ পাতায় বিদেশি সংবাদের উপস্থাপনে গুরুত্ব দিতে দেখে কষ্ট পাই। কোভিড-১৯-এর কারণে এখন পুরো পত্রিকার কলেবর কমে গেছে। সাপ্তাহিক আয়োজন আনন্দ থেকে বদলে প্র আনন্দ হয়ে পরে বন্ধও হয়ে গেছে। বিনোদন পাতা ভরে যায় বিজ্ঞাপনে, এসব আমাকে কষ্ট দেয়।

প্রথম আলোর সঙ্গে হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমার মতের মিল হয় না। তারপরও পত্রিকাটি অনুসন্ধিৎসু হয়ে আমাকে খোঁজে, লেখার জন্য তাগাদা দেয়, আমার ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, এটি আমার ভালো লাগে

প্রথম আলোর প্রথম পাতায় আমার মতামত ছাপা হয়েছিল। সেটা আমার কাছে খুব আনন্দের বিষয়। বহু মানুষ লেখাটি পড়েছিল। ছাপা হওয়ার পরের কয়েক দিন পর্যন্ত সেই প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। প্রথম আলোর সঙ্গে হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমার মতের মিল হয় না। তারপরও পত্রিকাটি অনুসন্ধিৎসু হয়ে আমাকে খোঁজে, লেখার জন্য তাগাদা দেয়, আমার ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, এটি আমার ভালো লাগে। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথম আলোকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাক প্রথম আলো।