কেঁদে ফেললেন 'ব্যাচেলর পয়েন্ট' নির্মাতা

দর্শকপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক 'ব্যাচেলর পয়েন্ট'। ছবি: সংগৃহীত

দর্শকপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক 'ব্যাচেলর পয়েন্ট'। নাটকটির তৃতীয় সিজনের শেষ পর্ব ইউটিউবে প্রচারিত হলো দুদিন আগে। আজ পর্যন্ত নাটকটি দেখা হয়েছে ১৩ লাখ বার। এর মধ্য দিয়ে যাত্রা শেষ হচ্ছে দর্শকদের পছন্দের কাবিলা, শুভ, হাবু, পাশা, রোকেয়াসহ বেশকিছু চরিত্রের। দীর্ঘদিন এই চরিত্রগুলোর মধ্যেই বসবাস করতে হয়েছে নির্মাতা কাজল আরেফিনকে। নাটকটি তার কাছে কেবল নাটক বা ব্যবসা নয়, বরং জীবনের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিল। নাটকটির শুটিংয়ের নানা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন এই নির্মাতা।

নির্মাতা কাজল আরেফিন
ছবি: ​সংগৃহীত

শেষদিকে মনের মতো শুটিং করতে পারেননি এই নির্মাতা। যতক্ষণ শুটিং করেছেন ইউনিটের অনেকেই কাঁদছিলেন। একটি দৃশ্য শেষ করেই সবাই চুপচাপ থেকেছেন। যে শুটিংয়ে হাসির রোল থাকত, সেখানে ছিল স্তব্ধতা, পরিবেশ ছিল ভারী। নির্মাতা জানান, শেষ দিনের শুটিংয়ে কে কাকে কান্না থামাতে বলবে! সবার চোখই ছিল ভেজা। একজন কিছু বলতে গেলেই অন্যজন কেঁদে উঠতেন। কেঁদেছেন এই নির্মাতাও।
নাটকটির শেষ পর্ব প্রচারের পর থেকেই হাজার হাজার মানুষের কমেন্ট, ইনবক্স ভরে উঠেছে দর্শকের মন্তব্যে। তাঁদের ভালোবাসা, কেন শেষ হয়ে গেল সেজন্য গালি- সবকিছু মিলিয়ে একটু আবেগী হয়ে আছেন এই নির্মাতা। শুরুতে তিনিও ভাবেননি নাটকটির প্রচার শেষে দর্শকদের এতোটা ভালোবাসা পাবেন। কেন তিনি নাটকটি শেষ করেছেন? এই নিয়ে অনেক দর্শক বাজে মন্তব্যও করেছেন। তিনি বলেন, 'নাটকটি ছিল আমার আবেগের জায়গা। এটা দিয়ে আমি কখনো ব্যবসার চিন্তা করিনি। সে জন্যে খুব কষ্ট করে পছন্দের কাজটির শেষ অংশের শুটিং করতে হয়েছে। গল্পে হাবুকে বিদায় দেওয়া থেকে শুরু করে শেষদিকের প্রতিটা দৃশ্যের শুটিংয়ের আমাদের পুরো টিমের সবাই কেঁদেছে। দিনগুলো আমাদের খুবই খারাপ গেছে। আমরা হাসতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই মিলে ছিলাম ব্যাচেলর পয়েন্ট পরিবার। হয়তো একটি পরিবার হয়ে উঠতে পেরেছিলাম বলেই এই কান্না।'

শেষদিকে মনের মতো শুটিং করতে পারেননি এই নির্মাতা
ছবি: ​সংগৃহীত

দীর্ঘ দিন ধরে নির্মাতা ব্যাচেলর পয়েন্ট নাটকের সঙ্গে জড়িত। তার বেশির সময় কেটেছে এই নাটকটি নিয়ে। তার বিনিময়ে পেয়েছেন দশর্কদের ভালোবাসা। তিনি বলেন, 'আমি ক্যামেরা পেছনে ছিলাম, আমাকে দর্শকদের চেনার কথা নয়। অথচ আমি বাংলাদেশের যেখানেই গিয়েছে হাজার হাজার মানুষ আমাকে চিনেছে, ভালোবেসেছে। আজ যখন শেষ পর্ব প্রচারিত হলো তখন অনেকেই আমাকে গালিগালাজ করছেন। মামলা করবেন হুমকি দিচ্ছেন। হাজার হাজার মানুষ জানতে চাচ্ছেন কেন নাটকটি শেষ করলাম। অনেকেই বলছেন, তাদের দু:খের সময়েও নাটকটি তাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। আমার ছোট্ট জীবনে দর্শকদের কাছে থেকে এর চেয়ে বড় ভালোবাসা আর কি থাকতে পারে? সারাদেশের দর্শকেরা আমাদের পাশে ছিলেন, ভালোবাসেছেন, তার মান অভিমান বুঝতে পারছি। হাবু, কাবিলা, শুভ, নেহালসহ চরিত্রগুলো ছিল আমার সন্তানের মতো। তাদের ছেড়ে থাকতে হবে ভেবে কষ্টটা বেশি পাচ্ছি। এই কষ্ট, আবেগ, পেছনের শত ঘটনা হয়তো কাউকে বোঝানো যাবেনা।' কথাগুলো বলার সময় কেঁদে ফেলেন নির্মাতা। হয়তো শুটিংয়ের স্মৃতিগুলো মনে ভীর করছিল। কিছু সময় তিনি কোনো কথা বলতে পারলেন না।

দীর্ঘ দিন ধরে নির্মাতা ব্যাচেলর পয়েন্ট নাটকের সঙ্গে জড়িত
ছবি: ​সংগৃহীত

তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এই নাটকটি কেন হঠাৎ বন্ধ করছেন? জানতে চাইলে কাজল আরেফিন জানান, সিজন-৩ নিয়ে সব সময় তার মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। এই নাটকটি যেন মানুষের মধ্যে একঘেয়েমি ভাব তৈরি না করে। সেজন্যে ৭৯ পর্বে শেষ করেছেন। বললেন, 'চাইলে অনেক পর্ব করতে পারতাম। কিন্তু সেটা দর্শকদের কাছে বিরক্তির কারণ না হোক, সেদিকটাও খেয়াল রেখেছি। নাটকটি শেষ পর্ব প্রচারের পরে মনে হয়েছে আমি সফল হয়েছি। এজন্য দর্শকদের প্রতি আমার কৃতঞ্জতা। তাঁরা শুরু থেকেই আমাকে ভালোবেসেছেন।'

নাটকটি নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের ক্যারিয়ারে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা
ছবি: ​সংগৃহীত

'ব্যাচেলর পয়েন্ট' নাটকটি প্রচারের পর থেকেই দর্শকের পছন্দের তালিকায় চলে আসে। এই নাটকটি নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের ক্যারিয়ারে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। বিভিন্ন সময় নাটকটি নিয়ে সমালোচনা হলেও নিজের মতো করেই নির্মাণ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। নির্মাতা কাজল আরেফিন আশা ব্যক্ত করেন, সময় সুযোগ ও পরিস্থিতি বুঝে একদিন হয়তো আবারও ব্যাচেলর পয়েন্ট সিজন-৪ নিয়ে হাজির হবেন। ঢাকা শহরে কয়েকজন ব্যাচেলরের গল্প নিয়ে তৈরি এই নাটকে অভিনয় করেছেন মারজুক রাসেল, মিশু সাব্বির, চাষি আলম, জিয়াউল হক পলাশ, শরাফ আহমেদ, ফারিয়া শাহরিন,পাভেল প্রমুখ।

'ব্যাচেলর পয়েন্ট' নাটকটি প্রচারের পর থেকেই দর্শকের পছন্দের তালিকায় চলে আসে
ছবি: ​সংগৃহীত