কেন তারকার পেছনে ছুটছেন নির্মাতা

ঈদ সামনে রেখে শুটিংস্পটগুলোতে শিডিউলপ্রত্যাশী নির্মাতাদের ভিড় বাড়ছে

উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের একটি শুটিংবাড়ি। সামনে দাঁড়িয়ে তিনজন নির্মাতা। ভেতরে পাওয়া যায় আরও দুজনকে। একজন ফোনে কথা বলছেন, অন্যজনের হাতে চিত্রনাট্য। ওপরতলা থেকে ভেসে আসে সক্রিয় পরিচালকের চিৎকার, ‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন।’ ক্যামেরার সামনে দুই অভিনয়শিল্পী—অপূর্ব ও মেহ্‌জাবীন। মেকআপ রুমে আরও তিনজন নির্মাতা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। এ দৃশ্য কয়েক মাস আগের। এক নির্মাতা করছিলেন শুটিং। কিন্তু বাকিরা?

কিছু শুটিংস্পটে দেখা যায় অন্য পরিচালকদেরও। স্পটে এক নাটকের শুটিং চলে, অন্যরা যান তারকা অভিনয়শিল্পীর শিডিউল নিতে। বেশ কিছু তারকার শুটিংস্পটের সাধারণ দৃশ্য এসব। আর ঈদ সামনে রেখে শুটিংস্পটগুলোতে শিডিউলপ্রত্যাশী নির্মাতাদের ভিড় বাড়ছে। বেশ কজন নির্মাতা ও শুটিং ইউনিট সূত্রে জানা যায়, মোশাররফ করিম, অপূর্ব, আফরান নিশো, মেহ্‌জাবীন, তৌসিফ, জোভান আহমেদ, তানজিন তিশার মতো অভিনয়শিল্পীদের জন্য এই ভিড়।

মোশাররফ করিম
ছবি: প্রথম আলো

কেউ যাচ্ছেন শিডিউলের জন্য, কেউ যাচ্ছেন যোগাযোগ ঝালিয়ে নিতে, আবার কেউ যাচ্ছেন শিল্পীর হাতে পরের কাজের চিত্রনাট্য হস্তান্তর করতে। এঁদের অনেকের পকেটেই থাকে অগ্রিম শিল্পীসম্মানীর অর্থ। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্মানীর অর্থ আলাপ সাপেক্ষে পাঠানো হয় ব্যাংক হিসাবেও।

শুটিং সেটে কাদের দেখা গেছে? অন্তত ৩০ জন নির্মাতার নাম জানানো হয়েছে বিভিন্ন শুটিং ইউনিট থেকে। বেশ কম সময়ের মধ্যে কোটিবার দেখা হয়েছে আফরান নিশো ও মেহ্জাবীন চৌধুরী অভিনীত শিল্পী নাটকটি, যেটি পরিচালনা করেছেন মহিদুল মহিম।

একটি নাটকের শুটিংয়ে মেহ্‌জাবীন ও আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত

শিডিউলের জন্য অন্যের শুটিংস্পটে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নাটকের মানুষ। শুটিংয়ে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। এ জন্য আর্টিস্টের সঙ্গে শুটিং ইউনিটে দেখা করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। শুটিংয়ের ফাঁকে আর্টিস্ট কিছুটা সময় পেলে আলোচনা করি।’
শুটিং সেটে প্রতিদিন একাধিক নির্মাতার আনাগোনায় শুটিংয়ের অসুবিধা হয়? মিজানুর রহমান আরিয়ান বলেন, ‘অবশ্যই হয়। আমি অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে একটি গল্পের শুটিং করছি। একটি দৃশ্য শেষ করে বা মেকআপ রুমে আমার গল্প নিয়ে শিল্পীদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন দেখা দেয়। অথচ তখন দেখা যায়, অন্য নির্মাতারা এসে নিজের গল্প শোনাচ্ছেন। কিছু নির্মাতা সাত–আট ঘণ্টা ধরে মেকআপ রুমে বসে থাকেন। তখন একজন শিল্পী তাঁকে সময় দিতে বাধ্য হন।’ শফিকুল মুক্তা নামের এক তরুণ নির্মাতা জানান, এখন সব চ্যানেল ও প্রযোজক আগেই পাঁচ–ছয়জন ব্যস্ত তারকার নাম ধরিয়ে দেন, যাঁদের নাটকের ভিউ বেশি।

তিনি বলেন, ‘এক বছর ধরে অপূর্ব ভাইয়ের শিডিউল পাচ্ছিলাম না। পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলে শুটিং সেটে গিয়ে চিত্রনাট্য দিয়ে এসেছি। তারপর আর যোগাযোগই করতে পারছি না। এখন চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীদের শিডিউল পাওয়া যেন সোনার হরিণ পাওয়ার মতো।’

তাসনুভা তিশা ও অপূর্ব
ইউটিউব থেকে

অনেক নির্মাতা ব্যস্ত শিল্পীদের পেছনে রীতিমতো টাকা নিয়ে ঘুরছেন। নির্মাতা মাহমুদ দিদার মনে করেন, এটা তারকাদের দোষ নয়, বরং সমস্যা নির্মাতাদের। তাঁরা দিনের পর দিন তারকাদের বাসায় নয়তো শুটিং ইউনিটে বসে থেকে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নিবন্ধ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নিশো বা মোশাররফ করিম কাউকে তাঁদের বাসায় বা সেটে গিয়ে বসে থাকতে বলেননি। কতিপয় নির্মাতার টার্গেটই হচ্ছে, যেসব অভিনেতার লাইক, কমেন্ট, ভিউ বেশি, তাঁদের নিয়ে কাজ করতে হবে। এসব নির্মাতাকে নিজেদের সুবিধামতো শিডিউল দিচ্ছেন তারকা অভিনেতারা। এই চর্চা থেকে বের হতে হবে। তারকা নয়, ভালো গল্প ও সুনিপুণ নির্মাণ নিয়ে ভাবতে হবে পরিচালকদের।’
অভিনয়শিল্পী অপূর্ব জানান, এক নির্মাতার সেটে অন্য নির্মাতারা গিয়ে হাজির হলে তিনি বিশেষ অস্বস্তিবোধ করেন না। তবে কয়েকজন মিলে গল্প শোনাতে গেলেই সমস্যা বাধে। কারণ, তিনি যে গল্পের শুটিং করছিলেন, সেখান থেকে মনোযোগ সরে যায়। অপূর্ব বলেন, ‘শুটিংয়ে যাঁরা আসেন, তাঁরা সবাই আমার সহযাত্রী। তাঁদের সব সময় স্বাগত। কিন্তু কেউ যখন মানসিক চাপ দিয়ে দুই মিনিটে গল্প শোনাতে চান, তখন ভালো করে গল্প শোনা হয় না। অনেকেই ভুল বোঝেন।’