খালি মনে করতাম, আমার বরের আদরের বউ হব: সাদিয়া ইসলাম মৌ

নাচ ও মডেলিংয়ের জনপ্রিয় তারকা সাদিয়া ইসলাম মৌ

নাচের পাশাপাশি এবারের ঈদে বিভিন্ন চ্যানেলে দেখানো হবে তাঁর চারটি নাটক। ঈদের কাজ নিয়ে সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের সঙ্গে কথা বলল বিনোদন।

প্রশ্ন :

অভিনয় তো এখন আর খুব একটা করেন না। হঠাৎ এতগুলো নাটকে কাজ করলেন?

ভিন্নধর্মী গল্প পেয়েছি বলেই করা। চার ধরনের চারটা গল্প। এসব নাটকে আমার সহশিল্পী আফজাল হোসেন, ইন্তেখাব দিনার, গাজি আবদুন নূর, জোভান, খায়রুল বাসার ও মৌসুমী মৌ, নিশাত প্রিয়ম। তবে আমি কাজ করি না এটা মোটেও ঠিক না। কাজ কম করি। বেছে করি—এই। যারা আমার সঙ্গে একবার করে কাজ করেছে, তারা আমার রুচি ও পছন্দ সম্পর্কে জানে। আর নাচের অনুষ্ঠান সব সময় করি, কারণ ওটা আমি শিখেছি। এবারের ঈদেও করেছি।

সাদিয়া ইসলাম মৌ

প্রশ্ন :

আপনার বিপরীতে নতুন প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীরা কাজ করছে।

নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে। অনেক দিন ধরে নতুনদের সঙ্গেই কাজ করছি। জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা এক রকম, নতুনদের সঙ্গে আরেক রকম। ওদের দায়বোধও ভালো। যেমনটা শুনে থাকি, কিন্তু কাউকে আমি দেরিতে সেটে আসতে দেখিনি। সবাই মনোযোগ দিয়েই কাজ করে।

জাহিদ হাসান-সাদিয়া ইসলাম মৌ
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনি ও আপনার স্বামী জাহিদ হাসান—দুজনেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। আপনাদের সন্তানেরাও কি এই অঙ্গনে থাকবে?

দুই সন্তানের কেউই এসবের মধ্যে নেই। তারা তাদের বাবা–মায়ের কাজটাকে ভীষণ রেসপেক্ট করে। আমার মেয়ে যেমন নাচ শিখেছে, এখন পড়াশোনার চাপে আর করতে চায় না। ছেলে তো কিছুর মধ্যেই নেই। সে ফুটবল নিয়ে মেতে থাকে। স্বপ্ন দেখে, একদিন অনেক বড় ফুটবলার হবে। ওরা অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী বা মডেল কিছুই হতে চায় না। আমিও যে ছোটবেলা থেকে এখন যা, তা কিন্তু হতে চাইনি। এটা আমার মায়ের স্বপ্ন। আজও মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন :

ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন?

৩ বছর বয়সে যখন নাচ শিখেছি তখন আমার হ্যাঁ–না বলার সুযোগই হয়নি। মডেলিং করেছি বড় দুলাভাইয়ের কারণে। আমার এসবের কোনো কিছুর প্ল্যান না। আমি সব সময় বিয়ে করে বাচ্চা–কাচ্চার মা হয়ে সংসারী হতে চেয়েছি। খালি মনে করতাম, আমার বরের আদরের বউ হব। আমাকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বাইরে নিয়ে যাবে। কারণ, আমার মাকে দেখতাম, আমার মা সব সময় বাবার ভীষণ আদরের ছিল।

সাদিয়া ইসলাম মৌ

প্রশ্ন :

করোনাকালে এমন কোনো ভাবনা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে?

আমরা না আসলে র‌্যাট রেসে ছিলাম। আমি এও দেখেছি, কাউকে খাবার দিলে, খেয়ে দেখার আগে ছবি তোলে। কোথাও ঘুরতে গেলে সৌন্দর্য দেখার আগে ছবি তোলে। করোনা আমাদের থামিয়ে দিয়েছে। সব সময় অনেককে বলেছি, তোরা যে দৌড়াচ্ছিস, পেছনে তাকিয়ে দেখ না, তোদের কেউ দৌড়াতে বলেছে কি না। কিসের জন্য দৌড়াচ্ছিস? আরেকটা বিষয় ছিল, সবাই যেকোনো কিছু উপভোগ করার চেয়ে মানুষকে দেখানোয় ব্যস্ত। এই একটা ট্রেন্ড আমাদের দেশে চলছে। করোনা সবকিছুকে থামিয়ে দিয়েছে। এটা দরকারও ছিল। আমাদের ভাবার সময় দিয়েছে।

প্রশ্ন :

নাচ ও অভিনয়ে নানাভাবে দর্শকের সামনে এসেছেন। এমন কোনো চরিত্র মনের মধ্যে ধারণ করে আছেন, যা আজও করা হয়নি?

প্রথমত, আমি অভিনেত্রী নই। অভিনয় কখনো শিখিওনি। তবে এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোনো চরিত্রের প্রতি লোভের চেয়ে কাজে মনোযোগী হওয়াটা জরুরি মনে করি। অনেক সিনেমা দেখে মনে হয়, ইশ্‌ এ রকম একটা সিনেমা যদি করতে পারতাম। কোনো নাটকে ছোট্ট চরিত্র, খুবই অল্প সময়ের উপস্থিতি, কিন্তু গুরুত্ব আছে—তাহলেও অবশ্যই করতে চাই। আমাকে নিজেকে জাহির করার মতো কিছু থাকতে হবে। সত্যি কথা বলতে কি, হিরোইন টাইপ কাজ করতে কখনোই পছন্দ করি না, আমি চরিত্র হয়ে উঠতে চাই।

সাদিয়া ইসলাম মৌ

প্রশ্ন :

ছবির কথা বলছিলেন, ছবিতে অভিনয় করা হলো না কেন?

ছোটবেলায় যখন নিয়মিত প্রস্তাব দেওয়া হতো, তখন একেবারে আগ্রহী ছিলাম না। কারণ, কখনোই মনে করতাম না, নায়িকা হতে পারব। রিমেক সিনেমার জন্য বড় বড় পরিচালকেরা ডাকতেন। আমি কোনো দিন নকল কিছু করার মধ্যে নেই। এতে একটা ট্যাগ লেগে যাবে। তাই একটা সিনেমায় সাইন করে ফেলতে গিয়েও করিনি।

মহুয়া ও নদের চাঁদ চরিত্রে সাদিয়া ইসলাম মৌ ও কবিরুল ইসলাম রতন। ফাইল ছবি

প্রশ্ন :

সিনেমায় অভিনয়ের আগ্রহ কি আর নেই?

সিনেমায় অভিনয়ের আগ্রহ এখন অনেক বেশি। আমাদের দেশের জয়ার গেরিলা দেখার পর মনে হয়েছে, এমন ছবিই তো করতে চাই। এমন সিনেমার প্রস্তাব কেন আমাকে দেওয়া হয়নি। ছোটবেলায় রেখার উমরাওজান খুব ভালো লাগত। সুপারডুপার হিট না হলেও ছবিটি ভিন্নধর্মী। আমাদের কেউ বলে নাই যে পাকিজা বা উমরাওজান টাইপের কোনো ছবি বানাবে। সবাই মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি বানাতে চেয়েছে। এখনো যদি কেউ ভিন্নধারার গল্প নিয়ে ভাবে তাহলে অবশ্যই সিনেমায় অভিনয় করব।