‘অন্য গ্যালাক্সি থেকে পড়ল চ্যালেঞ্জার’

এক দশক হলো নেই জনপ্রিয় টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা চ্যালেঞ্জার।
সংগৃহীত

এক দশক হলো নেই জনপ্রিয় টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা চ্যালেঞ্জার। ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর চিরতরে চলে যান তিনি। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করেন তিনি। প্রথম নাটক করেই তিনি হুমায়ূন আহমেদের মন জয় করে নেন। এভাবেই শুরু হয় তাঁর অভিনয়ে পথচলা।

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল তাঁর। সেই পরিচয়ের সূত্রে একটি ঈদ নাটকের শুটিং দেখতে আসেন চ্যালেঞ্জার। সেদিন সঙ্গে ছিল তাঁর স্ত্রী ঝর্ণা। নাটকের নাম ‘হাবলঙ্গের বাজার’। শুটিং চলছিল। জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ, শাওন, ডা. এজাজ এই নাটকে অভিনয় করেন। একটি বিশেষ দৃশ্যের জন্য তখনো কোনো অভিনেতাকে বলেননি হুমায়ূন আহমেদ। দৃশ্যটি একজন নাপিতের। দৃশ্যটির জন্য কাকে নেবেন এই নির্মাতা? হুমায়ূন আহমেদ কিন্তু ঠিকই জানতেন কাকে দিয়ে অভিনয় করাবেন। কারণ, তিনি মনে মনে পরিকল্পনা করেছিলেন চ্যালেঞ্জারকে দিয়েই ওই চরিত্রটা করাবেন।

সেই দিনের স্মৃতি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ প্রথম আলোয় লিখেছিলেন, ‘এই চরিত্রের জন্য কাউকে ডাকা হয়নি। কারণ, আমার মাথায় অন্য পরিকল্পনা আছে। চ্যালেঞ্জার এসেছে তার স্ত্রীকে নিয়ে নাটকের নির্মাণ দেখতে। আমার চোখ চ্যালেঞ্জারের দিকে।’ সেদিন নাপিতের সেই দৃশ্যটি শুরু করবেন এমন মুহূর্তে হুমায়ূন আহমেদ চ্যালেঞ্জারের দিকে তাকিয়ে তাঁকে ডাকেন।

হুমায়ূন আহমেদের ভাষায়, ‘চ্যালেঞ্জারকে ডেকে বললাম, এসো, নাপিতের অভিনয় করো। সে আকাশ থেকে নয়, অন্য গ্যালাক্সি থেকে পড়ল। হতভম্ব গলায় বলল, “স্যার, আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?” আমি বললাম, কোনো কথা নয়। ধুতি পরো। ক্ষুর হাতে নাও।’ প্রিয় নির্মাতা এবং সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কথায় আর না করতে পারলেন না। ধুতি, ক্ষুর নিয়ে নেমে পড়লেন অভিনয়ে। সেই নাটকে ডা. এজাজের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। এভাবেই শুরু হয় চ্যালেঞ্জারের অভিনয়জীবন।

এই নাটকের পরপরই তাঁকে এক ঘণ্টার একটা নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ডাকেন হুমায়ূন আহমেদ। নাটকের নাম ‘খোয়াবনগর’। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি চ্যালেঞ্জারকে। ক্যারিয়ারে অল্প সময়েই তিনি দুই শর মতো নাটকে অভিনয় করেছেন। যেকোনো চরিত্রেই তিনি ছিলেন সাবলীল। নিজেকে মানিয়ে নিতেন তিনি। এই অভিনেতার আলাদাভাবে অভিনয় জানা ছিল না। জীবন থেকে পাওয়া বিভিন্ন অভিজ্ঞতাই চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতেন তিনি। অভিনয় যেমন ভালো করতেন তেমনি ব্যক্তিজীবনেও তিনি ছিলেন সৎ। এই অভিনেতা মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘সবাই বলবে, বাংলাদেশ একজন বড় অভিনেতাকে হারাল। আমি বলছি, আমরা একজন ভালো মানুষ হারিয়েছি। অভিনেতা তৈরি করা যায়। ভালো মানুষ তৈরি করা যায় না। তৈরি করা গেলে আমি ভালো মানুষ তৈরির একটা স্কুল দিতাম।’

হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘সবাই বলবে, বাংলাদেশ একজন বড় অভিনেতাকে হারাল। আমি বলছি, আমরা একজন ভালো মানুষ হারিয়েছি। অভিনেতা তৈরি করা যায়। ভালো মানুষ তৈরি করা যায় না। তৈরি করা গেলে আমি ভালো মানুষ তৈরির একটা স্কুল দিতাম।’
চ্যালেঞ্জার ১৯৫৯ সালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রথম আলো

অভিনেতা চ্যালেঞ্জার ১৯৫৯ সালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তাঁর মেজ ভাই চাকরিজীবী এবং ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। তাঁর দুই বোনের একজন মনিরা মিঠু অভিনেত্রী আর আরেকজন গৃহিণী। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান। ছেলে ঢাকায় থাকেন। মেয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়া। তাঁর বোন অভিনেত্রী মনিরা মিঠু জানান, তাঁর ভাইয়ের আসল নাম এ এফ এম তোফাজ্জল হোসেন। নাম পাল্টে তাঁকে চ্যালেঞ্জার বানিয়ে দেন হুমায়ূন আহমেদ। ভাই সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া আমার ভাই। তিনিই আমাকে ছোট থেকে বড় করেছেন। আমাকে মানুষ করেছেন। আমার বাবা–মা সবই ছিলেন তিনি। ভাইকে হারিয়ে মনে হয় মাথার ওপর থেকে সব ছায়া সরে গেছে। এখনো নিজেকে শূন্য মনে হয়।’

টিভি ও চলচ্চিত্র মিলিয়ে আট বছরে চ্যালেঞ্জারের কাজের সংখ্যা দুই শতাধিক। তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘লাল সবুজ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’, আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ উল্লেখযোগ্য

‘আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া আমার ভাই। তিনিই আমাকে ছোট থেকে বড় করেছেন। আমাকে মানুষ করেছেন। আমার বাবা–মা সবই ছিলেন তিনি। ভাইকে হারিয়ে মনে হয় মাথার ওপর থেকে সব ছায়া সরে গেছে। এখনো নিজেকে শূন্য মনে হয়।’
মনিরা মিঠু,অভিনেতা চ্যালেঞ্জারের বোন