জন্মদিনে পালাতেন সমু চৌধুরী

অভিনেতা সমু চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

জন্মদিনে মাঝেমধ্যে বাসা থেকে পালাতেন সমু চৌধুরী। বিশেষ দিনটা নিজের মতো করে একা কাটাতে চাইত মন। বন্ধুদের জন্য সেটা আর হতো না। বন্ধুরা তাঁকে খুঁজে বের করতেন। সবাই মিলে তাঁকে পাকড়ে নিয়ে যেতেন কেক কাটার জন্য। জন্মদিনে এখনো বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর স্মৃতি ঘুরেফিরে আসে।

জন্মদিন নিয়ে সমু চৌধুরীর খুব একটা আগ্রহ কখনোই ছিল না। আগে জন্মদিনে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী বাসায় এসে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেন। তাঁর লজ্জা লাগত। সেই জায়গা থেকে তাঁকে বাঁচিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। জন্মদিনের শুরুতেই ফেসবুকে তাঁকে অনেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ‘এখন ভাবছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করেছে’, বললেন সমু চৌধুরী।

গত রাতে শুটিং থেকে বাসায় ফিরে দেখেন সবাই চুপচাপ। ঘুমাতে যাবেন, এমন সময় তাঁকে চমকে দিল পরিবার। বাসায় সবার সঙ্গে কেক কাটতে হলো। দিনটি তিনি আজ পরিবারের সঙ্গেই কাটাবেন। এই অভিনেতা বলেন, ‘জন্মদিন এলেই কিছুটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। অনেকেই আমার সম্পর্কে দুটো লাইন লিখছে, এই ভালোবাসা আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। কখনো কখনো এগুলোকে চাপ মনে হয়। বয়স বেড়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ভাবি, মানুষ আমাকে এতটা ভালোবাসছে, আমি কি প্রতিদান দিতে পারছি, আমি কি অভিনয়টা ঠিকমতো করে যেতে পারছি!’

শুটিংয়ের ফাঁকে অভিনেতা সমু চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

জন্মদিন নিয়ে তাঁর অসংখ্য স্মৃতি। একবার শুটিং ছিল না, কিন্তু ইউনিটের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। জন্মদিন থাকায় পাঞ্জাবি–পায়জামা পরে গিয়েছিলেন। কিছুটা মন খারাপ ছিল। সেদিন নাটকের নির্মাতা কায়েস চৌধুরী শুটিং শেষে বেশ ঘটা করে তাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিলেন। সেই ঘটনা এখনো তাঁর কাছে স্মরণীয়। তিনি বলেন, সেবারই প্রথম শুটিংয়ে জাঁকালো জন্মদিনের আয়োজনে চমকিত হয়েছিলাম। প্রথমে মনে হয়েছিল, আমার জন্মদিন নিয়ে কারও তেমন কোনো আগ্রহ নেই। পরে বুঝতে পেরেছিলাম সারপ্রাইজটা। শুটিং শেষে অনেক সময় টিমের সবার আড্ডা হয়েছিল।’

জন্মদিনে নিজের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ খুব একটা হতো না। কারণ, বাড়ি থেকে বের হওয়ার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে ‘বন্ধুরা অপেক্ষা করছে’ বলে বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে একা একা ঘুরতেন।

একটি নাটকের দৃশ্যে সমু চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু শুভ নামের তাঁর এক বন্ধু সবার জন্মদিনের তারিখ ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। বন্ধুর দল সমুকে বাসায় না পেলে ঠিকই খুঁজে খুঁজে বের করত। সমু বলেন, ‘এখন সেই বন্ধুরা অনেক ব্যস্ত। তারপরও তারা খোঁজখবর নিতে ভোলে না। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সেই সম্পর্কটা এখনো তরুণই রয়ে গেছে। এখনো একত্র হলে আমরা অতীতে ফিরে যাই। করোনার জন্য গত দুই বছর তাদের অনেকের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে না।’

নির্মাতা তপু খানের ‘লিডার-আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন সমু। বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে, ‘মাশরাফি জুনিয়র’সহ তিনটির মতো ধারাবাহিক। প্রচারের অপেক্ষায় আছে ‘অ্যানালগ লাইফ’, ‘আলো আঁধার’সহ তিনটি ধারাবাহিক।

সহশিল্পীদের সঙ্গে সমু চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

জানালেন নাটক নিয়ে আফসোসের কথা, ‘বেশির ভাগ নাটকেরই গল্পে কোনো ভিন্নতা নেই। সবাই শুধু নাটকের ফুটেজ চান। গল্প, মান—এ নিয়ে ভাবেন না। চরিত্র নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করব, সেই সুযোগটাই হয় না। চিত্রনাট্য, শিডিউল—সবই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই হয়। কার সঙ্গে কাজ করছি, শুটিংয়ে যাওয়ার আগে সেটাই অনেক সময় জানতে পারি না। সবাই খুবই ব্যস্ত। এভাবে কীভাবে একটি শিল্প টিকে থাকবে, সেটাই ভাবায়। তারপরও মনের আনন্দ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি।’