জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এগিয়ে টিভি তারকারা
টেলিভিশনের শিল্পী হিসেবেই তাঁদের পরিচিতি। বেশির ভাগ সময় তাঁদের ব্যস্ততা থাকে টিভি অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক। সেসবের ফাঁকে তাঁরা কাজ করেন চলচ্চিত্রে। এ রকম কয়েকজন তারকাকেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা সেই কথাই বলছে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, অভিনেত্রী, পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা, অভিনেত্রী, খলনায়ক, কৌতুক অভিনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখায় পুরস্কার পেয়ে আসছেন টেলিভিশনের শিল্পীরা।
২০১৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান শাকিব খান ও মাহফুজ আহমেদ। দুজনের একজন মূলধারার চলচ্চিত্রের, অন্যজন টেলিভিশনের শিল্পী। সেবার সেরা অভিনেত্রী হয়েছিলেন জয়া আহসান। পার্শ্বচরিত্রের সেরা অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছিলেন গাজী রাকায়েত ও তমা মির্জা, খল চরিত্রে ইরেশ যাকের। ২০১৬ সালে চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে জাতীয় পুরস্কার পান আলীরাজ।
বাকি ছয়জনই টেলিভিশনের তারকা। সেই তালিকায় ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, কুসুম শিকদার, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ফজলুর রহমান বাবু, তানিয়া আহমেদ ও শহীদুজ্জামান সেলিম।
২০১৭ সালে টেলিভিশনের সাত অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে পুরস্কার পেয়েছিলেন চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী শাকিব খান ও আরিফিন শুভ। তবে ২০১৮ সালের চিত্রটা ভিন্ন। সে বছর সব শাখার পুরস্কার পেয়েছিলেন চলচ্চিত্রের তারকারা। পরের বছর, ২০১৯ সালে চলচ্চিত্রের নিয়মিত অভিনয়শিল্পীদের কেউই পুরস্কার পাননি। সেই তালিকায় ছিলেন টেলিভিশনের তারিক আনাম খান, সুনেরা বিনতে কামাল, ফজলুর রহমান বাবু, জাহিদ হাসান ও নার্গিস আক্তার।
২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া। তিনি জানান, জুরি হিসেবে ছবি দেখার সময় কে কোন মাধ্যমে অভিনয় করেন, সেটা বিবেচনায় আনা হয় না। যাঁরা ভালো অভিনয় করেন, তাঁদেরই মনোনীত করা হয়। তিনি বলেন, ‘যে ছবিগুলো জমা পড়ে, সেখান থেকে জুরিবোর্ডের সদস্যরা আলাদা বিচার-বিবেচনা করে একটি মার্ক দেন। মার্কে যাঁরা এগিয়ে থাকেন, তাঁরাই সেরা হিসেবে পুরস্কার পান। এখানে অভিনয়দক্ষতাই প্রধান। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি ভালো অভিনয় করেছেন কি না।’ শ্রাবণ মেঘের দিন ছবিতে অভিনয় করে জাহিদ হাসান প্রথম ১৯৯৯ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান।
গত পাঁচ বছরে দুবার তিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন খলনায়ক হিসেবে। তিনি মনে করেন, নাটকের অভিনয়শিল্পীরা এখন আগের চেয়ে বেশি চলচ্চিত্রে যাচ্ছেন। যে কারণে পুরস্কারগুলোও তাঁরা বেশি পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছোট একটা মিডিয়া। আমরা মিলেমিশে কাজ করি। এখন হয়তো মূলধারার শিল্পীরা আগের মতো কাজের পরিবেশ পাচ্ছেন না। টেলিভিশন শিল্পীরা সিরিয়াসলি কাজ করছেন। কখনো কেউ ভালো করবে, কেউ খারাপ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি দুই পর্দার শিল্পীদের মধ্যে বিভাজন করতে চাই না।’
২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রের সব শাখায় জাতীয় পুরস্কারে এগিয়ে ছিলেন চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীরা। ধরা যাক, ২০১০ থেকে ১০১৪ সালের কথা। ২০১০ ও ২০১১ সালে পাঁচজন করে চলচ্চিত্রশিল্পীর সঙ্গে একজন টেলিভিশন অভিনয়শিল্পী জাতীয় পুরস্কার পান। ২০১২ সালে পেয়েছেন চলচ্চিত্র থেকে তিনজন ও টিভি থেকে দুজন। ২০১৩ সালে উভয় পর্দার তিনজন শিল্পী পুরস্কার পান।
পরের বছর চলচ্চিত্র থেকে পেয়েছেন চারজন এবং টেলিভিশন থেকে দুজন। সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে ২০১৫ সাল থেকে। চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এবং পরিচালক মতিন রহমান জানান, বাণিজ্যিক ধারার ছবি কমে যাওয়ায় এমনটি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে বিচার করার মতো বাণিজ্যিক ছবির সংখ্যা ছিল খুবই কম। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক ধারার হলেও কিছু কিছু ছবির শিল্পমান অনন্য। জুরিরা সেই মানকেই মূল্যায়ন করেন। এখন জুরিবোর্ডে ১০টি ছবি জমা পড়লে সেখানে ৮টি থাকে বিকল্প ধারার ছবি। যেগুলো নির্মাণ করছেন নাটকের পরিচালকেরা।
অভিনয়ও করেন বেশির ভাগ নাটকের শিল্পী। একটা সময় মূলধারার প্রচুর ছবি হতো। তখন চলচ্চিত্রশিল্পীরা বেশি পুরস্কার পেতেন। তার মানে এটা নয় যে মূলধারার চলচ্চিত্রে পুরস্কার পাওয়ার মতো শিল্পী নেই। আসলে বিচার-বিশ্লেষণ করে পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়ার মতো ছবি আমাদের দেশে কম হচ্ছে।’