জয়া আহসানের অভিনয় আমাকে বিস্মিত করে

অতীত অভিজ্ঞতা, বর্তমান ব্যস্ততা আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা আলাপ করলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারজয়ী রুনা খান
রুনা খান
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

কোথায় আছেন?

আসলে হয়েছে কি, ছয় মাস বাসা থেকে বের হই না। কাল আমার কিছু বন্ধু, আমার জীবনসঙ্গীর বন্ধু—সবাই মিলে ঢাকার কাছেই ভালুকার একটা রিসোর্টে এলাম। এ জন্য নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত সবাই মিলে বোর্ডগেম খেললাম। উঠতেও দেরি হয়ে গেল।

প্রশ্ন :

করোনার লকডাউনের সময়টা কেমন কাটল?

একেবারে মধ্যবিত্ত, সহজ, সাধারণ জীবন যাপন করেছি। আমার সত্যিকারের জীবন যেটা। আর দশটা মায়ের মতো ইউটিউব দেখে মেয়ের পছন্দের খাবার—রসগোল্লা, ছানার মিষ্টি, কালোজাম, পিৎজা, প্যানকেক, আইসক্রিম বানিয়েছি। হাতের কাছে যা ছিল, তেলের বোতল, ডিব্বা, অব্যবহৃত কৌটা—তা দিয়েই ছাদে নানা শাকসবজির বাগান করেছি। এই দুঃসময় আমাকে জীবনের সবচেয়ে আরামের সময়টা উপহার দিয়েছে।

প্রশ্ন :

নাটক নিয়ে আলাপে জায়গা করে নিয়েছে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’–এর সালমা ভাবি। এই নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কীভাবে?

এই নাটকের পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ। তিনি প্রথমে ‘যদি একদিন’ সিনেমায় আমার মেয়ে রাজেশ্বরীর অভিনয়ের ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু যে সময়ে তিনি শুটিং করবেন, সে সময় আমাদের অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে যাওয়ার কথা। আর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে রজেশ্বরীর স্কুল খুলে যায়। শেষমেশ সেই আলাপ মোড় নেয় আমার এই নাটকে অভিনয়ে।

রুনা খান
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘লালন’, ‘হালদা’, ‘ছিটকিনি’, ‘গহীন বালুচর’, ‘কালো মেঘের ভেলা’ আর ‘সাপলুডু’। প্রতিটিতে আপনার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। আপনি কি সিনেমায় খুব বেছে বেছে চরিত্রগুলো খুঁজে নেন?

না। আমি ছয়টা ছবিতে অভিনয় করেছি। হয়তো আর তিনটা বা চারটা ছবিকে না করেছি। ২০০৭ সাল থেকে আমি যত নাটকে অভিনয় করেছি, তার তিন গুণ নাটককে না করেছি। আর সবচেয়ে বেশি না করেছি বিজ্ঞাপনকে। মোবাইল কোম্পানির একটা বিজ্ঞাপন আর একটা ব্যাংকের বিজ্ঞাপন করার পর শত শত বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব আসতে লাগল। কিন্তু আমি চাইনি, তাই করিনি।

প্রশ্ন :

আপনি কেন অভিনয়শিল্পী হলেন?

নব্বইয়ের দশকে আমার ছেলেবেলা কেটেছে বিটিভিতে জাহিদ হাসান, শমী কায়সার, তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াত, আফসানা মিমি, শহীদুজ্জামান সেলিম, আজিজুল হাকিমদের নাটক দেখে। তখন টিভির পর্দায় এই মানুষগুলোকে দেখে আমার মনে হয়েছিল আমিও অভিনয়শিল্পী হতে চাই।

প্রশ্ন :

আপনার প্রিয় অভিনয়শিল্পী কে?

যদি আলাদা করে একটা নাম বলতে হয়, তাহলে বলব, জয়া আহসানের অভিনয় আমাকে বিস্মিত করে। ধরুন, ‘দেবী’ সিনেমায় মিসির আলির সঙ্গে রানুর প্রথম দিন দেখা হলো। মিসির আলি (চঞ্চল চৌধুরী) রানুকে (জয়া আহসানকে) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ওরা তোমার সঙ্গে কী কথা বলে? কারা কথা বলে?’ রানু কেমন করে যেন ঘাড়টা ঘুরিয়ে, কোথায় যেন তাকিয়ে উদ্‌ভ্রান্তের মতো বলল, ‘বলে।’ আমি শুধু ভাবি, আর কত সময় দিলে, কত অভিনয় করলে আমি এভাবে করে ‘বলে’ বলতে পারব। বা ধরুন, ‘কণ্ঠ’–এর কথা। সেখানে জয়া আহসানের অভিনয় শুরু হয় অর্ধেকের পর থেকে। কিন্তু মনে হয়, তাঁর মনটাও একজন স্পিচ থেরাপিস্টের। কী দুর্দান্ত অভিনয়।

রুনা খান
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের নাটক এখন কেমন আছে?

আমার ছোটবেলায় একটিমাত্র চ্যানেল ছিল—বিটিভি। আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন ৮–১০টা চ্যানেল ছিল। আর এখন অসংখ্য। আর মানুষ এখন ইউটিউব আর অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে নাটক দেখতে শুরু করেছে। তাই নাটকের সংখ্যা আর ধরনও বেড়ে গেছে। একটা উদাহরণ দিই। মোশাররফ করিম অভিনীত ‘জমজ’ আর ‘বোধ’। দুটিতেই আমি অভিনয় করেছি। দুটিই দারুণ জনপ্রিয়। ‘বোধ’–এর চেয়ে ‘জমজ’ অনেক অনেক বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু আমি কম জনপ্রিয় বোধের দর্শক। তাই বলে কি আমার পছন্দের দাম নেই? আমি ‘জমজ’–এর দর্শক নই, তাই বলে কি ‘জমজ’কে আমি ফেলে দেব? এত লোকে পছন্দ করল, তার দাম নেই?

প্রশ্ন :

আপনার কি মনে হয় না যে জনপ্রিয়তা আর ভিউয়ের চাপে শৈল্পিক আর মানসম্মত নাটক চাপা পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে?

আমার মনে হয়, ভালো কাজ কোথাও না কোথাও পৌঁছাবে। হয়তো অনেক মানুষ দেখবে না, কিন্তু যার দেখার, সে ঠিক খুঁজে নিয়ে দেখবে। এবারের ঈদের নাটকগুলোর ভেতর যেমন ‘বোধ’, ‘ইতি মা’, ‘ভিকটিম’ নাটকগুলো কিন্তু দর্শক ঠিকই দেখেছে। সব কাজ সবাই দেখবে না। এটাকে মনে আর মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে। দর্শক হিসেবে আপনার যেটি দেখতে ইচ্ছা, সেটি দেখবেন। শিল্পী হিসেবে আমার কাজটা আমি করব। এখানে শৈল্পিক, সামাজিক আর দায়িত্বশীল কাজ হবে, বাণিজ্যিক কাজ হবে। আবার মাঝেমধ্যে শৈল্পিক কাজও বাণিজ্যিক হবে।