টগবগে তরুণ নেই, তারপরও ছুটে বেড়াচ্ছি

হানিফ সংকেতসংগৃহীত
গত ৩২ বছর ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি নির্মাণ করছেন হানিফ সংকেত। সমসাময়িক নানা ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নাটকও নির্মাণ করেন নন্দিত এই নির্মাতা ও সঞ্চালক। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি সত্ত্বেও নতুন করে ইত্যাদির শুটিং করতে পারেননি তিনি। ইত্যাদি ও টিভি অনুষ্ঠান নিয়ে সম্প্রতি কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

আপনার নাটকগুলোয় সমাজের নানা অসংগতি উঠে আসে। এসবের ফল কী বলে মনে করেন?

আমার মাথার ভেতর থাকে বলেই এসব নিয়ে কাজ করি। ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। যেহেতু আমরা সমাজবদ্ধ মানুষ, চলতে গেলে ভুল হবে। এসব দেখে কেউ শোধরায়, কারও উপলব্ধি তৈরি হয়।

প্রশ্ন :

প্রচুর নাটক হচ্ছে, কিন্তু দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করতে পারছে না কেন? সমস্যা কোথায়?

আমাদের দেশে এখন ‘টিআরপি’ এবং ইউটিউব ‘ভিউ’ হয়ে গেছে জনপ্রিয়তার মাপকাঠি। এখনো নক্ষত্রের রাত, সংশপ্তক লোকে হুমড়ি খেয়ে দেখে। বিটিভিতে এখনো যে সংশপ্তক চলছে, মানুষ দেখছে। এসব নাটক কিন্তু ইউটিউবে সেভাবে যায় না। চ্যানেলগুলোর কারণে ভালো মেকাররা কোণঠাসা হয়ে গেছে। তারা শুধু নায়ক-নায়িকা দিয়ে নাটক শেষ করতে চায়। অনেকেরই কমিটমেন্ট নেই। সমাজ ও দেশের প্রতি দায়বোধ না থাকলে ভালো নাটক তৈরি হবে না। তা ছাড়া ‘সংস্কৃতি’, ‘শেকড়’—এসব বুঝতে হবে, জানতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে। এসবের প্রতি মোহ ও ভালোবাসা থাকতে হবে, নয়তো দায়বোধ আসবে না। দায়বোধ জন্মালেই তা নাটকে প্রতিফলিত হবে।

হানিফ সংকেত
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এ বছর ঈদে ইত্যাদির নতুন অনুষ্ঠান করতে না পারায় মনঃকষ্ট আছে?

করোনার কারণে আমরা নতুন অনুষ্ঠান করতে পারিনি। এ নিয়ে একটা দুঃখবোধ আছে। তবে সম্পাদনার ক্যারিশমায় দুই ঈদের অনুষ্ঠানকে পুরোনো মনে হয়নি। ইউটিউবে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ, যদিও আমি এসবের তোয়াক্কা করি না।

গাইছেন কুমার বিশ্বজিৎ, এন্ড্রু কিশোর, হানিফ সংকেত, সৈয়দ আবদুল হাদি ও আবদুল জব্বার
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

ইত্যাদি আরও কত বছর চালিয়ে নিতে চান?

এটা বলা মুশকিল। যত দিন শক্তি থাকবে, নিজের দায়বদ্ধতা থেকে চালিয়ে যাব। আমারও বয়স হয়েছে। আমি তো সেই ৩২ বছরের টগবগে তরুণ নেই, তারপরও এই বয়সে ছুটে বেড়াচ্ছি। এ অনুষ্ঠানকে স্টুডিওর বাইরে নিয়ে এসেছি।

সংগৃহীত, নৃত্য ও অভিনয় শিল্পীদের সঙ্গে হানিফ সংকেত
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার অবর্তমানে ইত্যাদি থাকবে, নাকি বন্ধ হয়ে যাবে?

ফজলে লোহানী মারা গেছেন, আরেকজন তৈরি হয়নি। ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানটিও আর কেউ তৈরি করার সাহস করেনি। হ‌ুমায়ূন আহমেদ কিন্তু আরেকজন তৈরি হয়নি। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, লেখার ধরন আলাদা। কিছু কিছু মানুষ আর কিছু কিছু অনুষ্ঠান থাকে, যা নতুন করে তৈরি করা যাবে না। ইত্যাদিকে নিজের ডাইমেনশনে নিয়ে এসেছি, এতে আমার ব্যক্তিত্ব আবর্তিত হয়েছে। আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা হয়তো আমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য কিছু করবেন, সেগুলো ‘ইত্যাদি’ হবে না।

প্রশ্ন :

ইত্যাদি যেভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে, অন্য ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানগুলো সেভাবে পারেনি। কেন বলে মনে করেন?

প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য কমিটমেন্ট দরকার। সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, একাগ্রতা—এসবের কম্বিনেশন দরকার। যিনি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন, তাঁর নিজস্ব ভাবমূর্তিও দরকার। নানা কাজে ব্যস্ত থাকলে ওই উপস্থাপকের গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি তৈরি হয় না। আর যেকোনো অনুষ্ঠানের স্থায়িত্ব দরকার। দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং মানের কারণে অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা বাড়ে।