দাদার জন্য কাঁদছে লুবাবা

লুবাবা ও কাদের। ছবি : সংগৃহীত

দাদার ক্যানসার। শুনে চিৎকার করে কান্না করেছে লুবাবা। অভিনেতা আবদুল কাদেরের নাতনি লুবাবা কান্না শেষ করেনি। কীভাবে দাদাকে বাঁচানো যায়, সেই তথ্য খুঁজে যাচ্ছে অনলাইনে। দাদাকে সুস্থ করে তুলতে কী কী করতে হবে, অনলাইন হাতড়ে এর একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে ৯ বছরের লুবাবা।

১৫ ডিসেম্বর আবদুল কাদেরের ক্যানসারের খবর নিশ্চিত করেন চিকিৎসকেরা। লুবাবা তখন হোটেলে। দাদাকে হাসপাতালে দেখে সে কাঁদবে, সে কারণে তাকে হোটেলে রেখে যাওয়া হয়। কিন্তু হোটেলেও দাদার জন্য অস্থির ছিল লুবাবার মন। বিষণ্ন মুখে মাকে হোটেলকক্ষে ঢুকতে দেখে ছুটে গিয়ে সে জিজ্ঞাসা করে, দাদার কী হয়েছে! কিছুটা সময় নিয়ে মা তাকে জানায়, দাদুর ক্যানসার।

লুবাবা ও আবদুল কাদের। সংগৃহীত

দাদার ক্যানসার শুনে চিৎকার করে কাঁদছিল লুবাবা। ফোঁপাতে ফোঁপাতে সে মাকে জিজ্ঞেস করে, ক্যানসারে কী হয়। মা তাকে ক্যানসার সম্পর্কে বলেন। শুনে মুঠোফোন হাতে সে অনলাইনে খুঁজতে থাকে ক্যানসারের চিকিৎসা। এই রোগের শেষ পরিণতি জেনে মন খারাপ হয় ছোট্ট লুবাবার। কিন্তু সে থেমে থাকে না। দাদা কীভাবে সুস্থ থাকবে, সেই উপায় খুঁজে পায় সে। কাঁদতে কাঁদতে ফোনে সে এই প্রতিবেদককে জানায়, দাদুর শরীর ভালো না। তাঁর রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেছে। লুবাবা বলে, ‘আমি ইন্টারনেটে দেখেছি, রক্ত কমে গেলে রাইস খেতে হবে। চিকেন, ডিম, আনার খেলে দাদু আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।’

তিন বছর বয়সে দাদার সঙ্গে অভিনয় শুরু করে লুবাবা। দাদুই তাকে বুঝিয়ে দিতেন কোন দৃশ্যে কীভাবে অভিনয় করতে হবে। লুবাবার মা বলেন, ‘আমার শ্বশুর সব সময় বলতেন, লুবাবা তাঁর অভিনয়গুণ পেয়েছে। বাবা যেমন অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পেতেন, তেমনি লুবাবাও অভিনয় শেষে শুটিং সেটের সবার প্রশংসা পায়।’

লুবাবা ও কাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শুটিংয়ের। ছবি : সংগৃহীত

বিভিন্ন রকম ভিডিও বানিয়ে লুবাবা নিজেই পোস্ট করে ফেসবুকে। অনলাইনে নিজেই শিখেছে হিন্দি ভাষা। কয়েক দিন আগে রাজস্থানের একটি বিজ্ঞাপন করেছে। শুটিং হয়েছে অনলাইনে। তার অভিনয় দেখে অভিভূত রাজস্থানের সেই নির্মাতা ও শুটিং টিম। লুবাবা চেন্নাইতে এসেছে জানার পর রাজস্থানের সেই নির্মাতার দল একনজর লুবাবাকে দেখার জন্য আসতে চেয়েছিল। কিন্তু করোনার কথা বিবেচনা করে তাঁদের আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। লুবাবার মা জাহিদা ইসলাম জানান, পাশের দেশ ভারতের অনেক নির্মাতা লুবাবার ফেসবুক বন্ধু। অনেকে তার অভিনয় দেখে তাকে কাজে নিতে চান। ফেসবুকেই এক তামিল নির্মাতার সঙ্গে পরিচয়। লুবাবার তামিল ছবিতে অভিনয়ের কথা রয়েছে। সেই টিমের লোকজনও তামিলনাড়ু থেকে চেন্নাইতে দেখা করতে আসতে চেয়েছিলেন। করোনার কারণে আপাতত সেটা হচ্ছে না।

লুবাবা অভিনীত শিশু নির্যাতনে সচেতনতামূলক একটি ভিডিও বেশ প্রশংসা পাচ্ছে। সেখানে তার সংলাপ ছিল, ‘আম্মু, তুমি সাইফ আঙ্কেলকে বাসায় আসতে দিওই না। উনি আমাকে ব্যাড টাচ করে।’ নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর কাছ থেকে দৃশ্যটি শুনে শুটিং সেটেই কেঁদে ফেলে লুবাবা। পরে সেই দৃশ্যে তার নিখুঁত অভিনয়ে ভীষণ খুশি হন নির্মাতারা। লুবাবা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘রিক্সাগার্ল’ ও আশরাফ শিশিরের ‘৫৭০’ ছবিতে অভিনয় করেছে। ফোনে লুবাবা বলে, ‘আমি নিয়মিত অভিনয় করতে চাই। আমার দাদার জন্য দোয়া করবেন। দাদা যেন সুস্থ হয়ে আবার আমাকে শুটিংয়ে নিয়ে যেতে পারেন।’