নতুন বছরে আবার তাঁরা একসঙ্গেই ফিরছেন

এই দলের সমন্বয়ে নির্মিত নাটকগুলো এখনো দর্শকের কাছে জনপ্রিয়।
ছবি : সংগৃহীত

‘সাকিন সারিসুরি’, ‘আলতা সুন্দরী’, ‘ঘরকুটুম’, ‘গরু চোর’, ‘ঢোলের বাদ্য’, ‘পত্র মিতালী’, ‘কবুলিয়তনামা’সহ একাধিক নাটকে পরিচিত কিছু মুখ ঘুরে–ফিরে আসে। তাঁদের মধ্যে আছেন চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, ফজলুর রহমান বাবু, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, শাহনাজ খুশি প্রমুখ। এই নাটকগুলোর বেশির ভাগই লেখা বৃন্দাবন দাসের এবং পরিচালনা সালাউদ্দিন লাভলুর। দলটি একসঙ্গে অনেকগুলো নাটক উপহার দিয়েছেন। কিন্তু একটি নাটককে ঘিরে নিজেদের মধ্যে চিন্তার অমিল হওয়ায় দীর্ঘদিন তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায়নি। নতুন বছরে আবার তাঁরা একসঙ্গেই ফিরছেন সালাউদ্দিন লাভলুর হাত ধরেই।

সালাহউদ্দিন লাভলু
ছবি : সংগৃহীত

৯ বছর আগে ‘হাড়কিপটে’ নাটককে ঘিরে তাঁদের মধ্যে অভিমানের সূত্রপাত হয়। মূলত ওই নাটকের শুটিংয়ের সময় প্রযোজক, নির্মাতা ও লেখকের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য ও ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, নাটকের বাজেট তখন কম ছিল। কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে একাধিক বড় তারকা নেওয়ার দরকার পড়ে। নাট্যকারকেও দিতে হতো বড় অঙ্কের সম্মানী। এই ব্যয় বহন করা নিয়ে নাট্যকার, নির্মাতা ও প্রযোজকের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ফলে প্রায় এক দশক একসঙ্গে কাজ করেননি তাঁরা। যদিও ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। এবার নতুন বছরে সবাইকে নিয়ে কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু।

‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকে জাপান ডাক্তার চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী।
ছবি: সংগৃহীত

সালাউদ্দিন লাভলু জানান, এই দলের সমন্বয়ে নির্মিত নাটকগুলো এখনো দর্শকের কাছে জনপ্রিয়। করোনাকালে তাদের ১০ বছর আগের নাটকগুলো আবার টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। তাতে ভালো সাড়া মিলেছে। টেলিভিশনগুলোও আগ্রহী এই দলকে নিয়ে নির্মিত নাটক প্রচারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ গল্পই ছিল গ্রামীণ পটভূমিতে। এবারও গ্রামের মানুষের জীবনকে প্রাধান্য দিয়েই গল্প লিখছেন বৃন্দাবন দাদা। যদিও এখন সময় বেশ বদলে গেছে, তারপরও দেশের বিশাল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে পর্দায় আনা যায়, সেই চেষ্টা নিয়েই ফিরছি। বিদেশ থেকেও প্রচুর ফোন পেয়েছি ওই ধরনের নাটক নির্মাণের জন্য।’

শামীম জামান, মোশাররফ ​করিম এবং আ খ ম হাসান

ধারাবাহিকটি দর্শকের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করবে, তা নিয়ে চিন্তিত রচয়িতা বৃন্দাবন দাস। তিনি জানান, এক দশক আগে লেখায় যে তারুণ্যের শক্তি ছিল, তা এখন আর আগের মতো নেই। দর্শকের রুচিও বদলে গেছে। নাটক দেখার মাধ্যম বেড়েছে। নতুন দর্শক তৈরি হয়েছে। নাটকটি নির্মাণে সবাই ঠিকমতো পরিশ্রম করলে দর্শক হতাশ হবেন না। বৃন্দাবন দাস বলেন, ‘কাজের মাধ্যমেই আমাদের পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। সবার সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো, কিন্তু একসঙ্গে কাজটা হতো না। দিন শেষে অস্বস্তি লাগত। দর্শকের একটা আগ্রহ আছে, সেই জায়গা থেকে লাভলুর উদ্যোগে ফিরছি।’

নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু ও অভিনেতা আ খ ম হাসান
ছবি : সংগৃহীত

নতুন এই ধারাবাহিক নিয়ে আশাবাদী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তিনি জানান, বর্তমান নাটকের মানের যে অবস্থা, সেখানে দর্শক আগের নাটকগুলোই বারবার দেখছেন। এখন ভালো মানের ধারাবাহিক নাটক সেভাবে তৈরি হয় না। নাটকের মধ্য দিয়ে দর্শকদের সুস্থ বিনোদন দিতেই তাঁরা ফিরছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সময় যে ধরনের নাটক করেছিলাম, সেটাই পরে ভাঁড়ামির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর অনুকরণ এখনো চলছে। সেখান থেকে বের হয়ে দর্শকদের কীভাবে বিনোদন দেওয়া যায়, সেই চেষ্টাই আমাদের থাকবে। আশা করছি ভালো কিছু হবে।’

বৃন্দাবন দাসের প্রায় ৮০ শতাংশ গল্প নিয়েই কাজ করতেন সালাউদ্দিন লাভলু। তিনি জানান, এই প্রজন্মের দর্শক যে ধরনের নাটক দেখতে পছন্দ করেন, সে ধরনের নাটক তিনি বানাবেন না। তিনি যে শিল্পচেতনা, বিশ্বাস ধারণ করেন, তা-ই উঠে আসবে তাঁর নাটকগুলোতে।
জানা গেছে, গল্প লেখার কাজ পুরোদমে চলছে। সবার শিডিউল মিললেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নাটকটির শুটিং শুরু হবে।

বৃন্দাবন দাস ও শাহনাজ খুশি দম্পতি
ছবি : সংগৃহীত