নাটক–সিনেমা থেকে যথেচ্ছ শিল্পী বাদ, দায় কার?

নির্মাতাদের নিশ্চিত হয়ে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। কী কারণে বাদ দিচ্ছেন, সেটাও জানানো দরকারকোলাজ: আমিনুল ইসলাম

প্রায় এক বছর গল্পটার সঙ্গে ছিলেন। পরিচালকের সঙ্গে একাধিক সিটিং দিয়েছেন। গল্পে সৃজনশীল ইনপুটও দিয়েছিলেন অভিনেত্রী মৌসুমি হামিদ। চিত্রনাট্য, গ্রুমিং থেকে শুরু করে সবকিছুর পেছনে দিনের পর দিন সময় দিয়েছেন তিনি। প্রথমবার ১০ দিনের শিডিউল নিয়ে বাতিল করেন নির্মাতা। পরে আবারও তাঁর কাছ থেকে শিডিউল নেন। কিন্তু শুটিংয়ের দিন জানতে পারলেন, তাঁকে বাদ দিয়েই কাজ শুরু করেছেন নির্মাতা। অভিমানে এ ঘটনা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন মৌসুমি হামিদ।

মৌসুমী হামিদ
ছবি: ফেসবুক থেকে

তবে পোস্টে নির্মাতার নাম বলেননি মৌসুমি হামিদ। নাম কেন প্রকাশ করেননি? মৌসুমি হামিদ বলেন, ‘কতজনের নাম লিখব। গত কয়েক বছরে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। বাদ দেওয়াটা এখন মামুলি হয়ে গেছে। কষ্টের জায়গা হচ্ছে, বাদ যাওয়ার ঘটনা ফোন করে জানতে হয়। কিন্তু কখনোই জানতে পারি না কেন বাদ পড়লাম। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি থাকা দরকার।’

‘মা’ সিনেমা থেকে বাদ পড়ার পর ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অর্ষা। কারণ হিসেবে নির্মাতা জানিয়েছেন, অর্ষা পারিশ্রমিকের সম্পূর্ণ টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন, যা অযৌক্তিক।

৩০ সেপ্টেম্বর একটি ফেসবুক পোস্টে প্রথম ইস্যুটা তোলেন নাজিয়া হক অর্ষা। মা নামে একটি সিনেমা থেকে বাদ পড়ার পর ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এ অভিনেত্রী। তিনি জানান, তাঁর কাছ থেকে ছয় দিনের শিডিউল নিয়েছিলেন অরণ্য আনোয়ার। তাঁদের শেষ কথা ছিল, দু–তিন দিনের মধ্যে কাজটি নিয়ে বসবেন তাঁরা। এর মধ্যেই নির্মাতা তাঁকে জানান কাজটি হচ্ছে না। অথচ সেদিনই তিনি জানতে পারেন, সিনেমাটিতে পরীমনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অবশ্য ছবি থেকে অর্ষাকে বাদ দেওয়ার অন্য একটি কারণ দেখিয়েছেন এই নির্মাতা, পুরো পারিশ্রমিক অগ্রিম চাওয়ার কারণে অর্ষাকে বাদ দেওয়া হয়। অরণ্য আনোয়ার বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে এভাবে আমাকে কেউ কোনো দিন বলেননি। এর অর্থ অর্ষা আমাকে অবিশ্বাস করছেন। সম্মানীর টাকা সব সময় আমরা শুটিংয়ের পরে দিয়ে থাকি।’

নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি: সংগৃহীত

অর্ষার ফেসবুক স্ট্যাটাসের নিচে মন্তব্যের ঘরে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিনেত্রী আশনা হাবীব ভাবনা। তিনি বলেন, ‘এটা শিল্পীর প্রতি অসম্মান। অডিশন, কাস্টিং, গ্রুমিং করার পর অনেক নির্মাতা তাঁদের বাদ দিয়ে এমন একজনকে নিয়ে শুটিং শুরু করেন, যাঁরা অডিশনই দেননি, হঠাৎ করে যুক্ত হয়েছেন। আমার সঙ্গে এটা অনেকবার হয়েছে। এটা নিয়ে আর চুপ থাকার কোনো মানে হয় না।’ অর্ষার এই স্ট্যাটাসকে সমর্থন জানিয়েছেন অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী, দীপা খন্দকার, জ্যোতিকা জ্যোতিসহ অনেক শিল্পী।

সবাই কিছুদিন নিয়ম মানেন। পরে গা ছাড়াভাবে কাজ করেন। চুক্তি ছাড়া আমাদের বলার কিছু থাকে না। চুক্তি করলে অভিযোগের প্রশ্নটা আসত। — সালাউদ্দিন লাভলু, সভাপতি ডিরেক্টরস গিল্ড

এই ইস্যুতে পরিচালকেরা অবশ্য বলছেন অন্য কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্মাতা বলেন, ‘অনেক সময় অভিনয়শিল্পীরা শিডিউল দিয়ে আর ফোন ধরেন না। পারিশ্রমিক নিয়ে ঝামেলা করেন, ডেট দিয়েও দোটানায় রাখেন। আবার অনেক সময় প্রোডিউসার বাদ দিতে বলেন। কিন্তু দোষটা এসে পড়ে নির্মাতাদের ওপর। তা ছাড়া একই গল্পের জন্য হয়তো বড় একজন তারকার সঙ্গে কথা বলা ছিল, তিনি কিছু জানাননি। অন্য একজনের শিডিউল নেওয়ার পরে সেই অভিনেতা বললেন গল্পটি করবেন, তাঁর চাহিদা বিবেচনা করে পছন্দমতো নায়িকা নিতে বলেন। অনেক অভিনয়শিল্পী শিডিউল দিয়ে এক দিন আগে বলেন শুটিং করতে পারবেন না। পরে দেখা যায় তিনি অন্য আরেকজনের শুটিং করছেন। সেটা নিয়ে কেউ কিছু বলেন না। দোষ শুধু নির্মাতাদের।’

সালাহউদ্দিন লাভলু
ছবি: সংগৃহীত

এ জন্য টেলিভিশন অভিনয় শিল্পীসংঘ ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিগুলো সব সময় শিল্পীদের চুক্তিপত্র করে কাজ করতে উৎসাহিত করে। অভিনয় শিল্পীসংঘ থেকে সেটে গিয়েও চুক্তিপত্রের বিষয়গুলো তদারকি করা হয়েছিল উল্লেখ করে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘সবাই কিছুদিন নিয়ম মানেন। পরে গা ছাড়াভাবে কাজ করেন। চুক্তি ছাড়া আমাদের বলার কিছু থাকে না। চুক্তি করলে অভিযোগের প্রশ্নটা আসত।’ কথা বলে জানা যায়, মৌসুমি হামিদ কিংবা অর্ষা—কেউই আগে চুক্তি করেননি। মৌসুমি হামিদ বলেন, ‘সব চূড়ান্ত হলে নির্মাতা এসএমএসে শিডিউল চূড়ান্ত করেন। আমরা ওকে লিখে সেন্ড করি। এভাবেই কাজ করতে গিয়ে আমরা ফেঁসে যাই।’

চুক্তি হলেই আমরা কথা বলতে পারি। তখন আইনগত ভিত্তি থাকে: শহীদুজ্জামান সেলিম
ছবি: সংগৃহীত

অভিনয় শিল্পীসংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘চুক্তি হলেই আমরা কথা বলতে পারি। তখন আইনগত ভিত্তি থাকে। তার পরেও চূড়ান্ত শিডিউল নিয়ে কাউকে বাদ দিলে শিল্পীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। নির্মাতাদের নিশ্চিত হয়ে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। কী কারণে বাদ দিচ্ছেন, সেটাও জানানো দরকার। পেশাগত জায়গায় সবার সৎ আচরণ করা উচিত।’