প্রশংসিত হন ভাবনা, নিন্দিত হন আরও বেশি

আশনা হাবিব ভাবনা
ছবি: প্রথম আলো

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সহকর্মীদের কাছে নানা কটুকথা শুনতে হতো অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাকে। শুটিং সেটে তাঁকে নিয়ে অনেকে হাসাহাসিও করেছেন। তাঁর পোশাক, দেহভঙ্গি নিয়ে উপহাস করতেন অনেকে। এর বেশির ভাগই শুনতেন নারীদের কাছে। এই নারীরা কেউ অভিনয়শিল্পী, কেউ নৃত্যশিল্পী। ভাবনা মনে করেন, শারীরিকভাবে নারী হলেও মস্তিষ্কে তাঁরা পুরুষ!

অভিনয়ে যখন ভাবনার ক্যারিয়ার শুরু হয়, তখন অনেক জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রী তাঁর পোশাক নিয়ে নিন্দা করতেন। অনেকে আবার তাঁর সামনেই হাসাহাসি করতেন। করোনাকালে ফেসবুকে একটি নাচের ভিডিও আপলোড করেছিলেন ভাবনা। সেটা দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। আবার আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন অনেক নারী। বেদনাদায়ক সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ভাবনা বলেন, ‘সিনিয়ররা আমার নাচ দেখে কটূক্তি করেছেন। অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য আমি নাচ করি। আমার দেহভঙ্গি ভালো না, আমি দেহ দোলাচ্ছি, লাইক কুড়ানোর জন্য এসব করেছি।’

আশনা হাবিব ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত

শুটিংয়ে রূপসজ্জার কক্ষেও বিকৃত মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছে ভাবনাকে। এ নিয়ে আক্ষেপ করে ভাবনা বলেন, ‘যখন কাজ শুরু করি, তখন আমি স্কুলে পড়তাম। সেই সময় আমি গাড়ি নিয়ে শুটিংয়ে যেতাম, তখন মেকআপ রুমে অন্য অভিনেত্রীরা আমার পোশাক, গাড়ি, কথা বলার ধরন থেকে শুরু করে, আমার সবকিছুতে দোষ ধরতেন। কেউ আমাকে সহযোগিতা করতেন না। যে কিছু বলতেন না, তিনিও বলেছেন আমি কেন গাড়ি নিয়ে আসি। তাঁদের কথা শুনে খুব কষ্ট হতো।’

গত বছর ‘গুলনাহার’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন ভাবনা। এর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয় নাটক। সেই নাটকের শুটিংয়ে নারী সহকর্মীরা তাঁকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন। ‘আমার মুখের সামনে অনেকে বলেছেন, “তোকে দেখে মনেই হয় না তুই লিখতে পারিস। সত্যি কথা বলত কে লিখে দিয়েছে।” নারী হিসেবে তাঁরা আমাকে ছোট করে দেখতেন’, এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানান ভাবনা। তাঁর প্রথম সিনেমা ‘ভয়ংকর সুন্দর’–এ কোনো নারী সহকর্মী তাঁকে সাহায্য করেননি, বরং নানাভাবে তাঁরা বিরক্ত করেছেন। ভাবনা বলেন, ‘শুটিংয়ে আমার নারী সহকর্মীরা সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন, হাসাহাসি করেছেন। আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ করার চেষ্টা করেছেন অনেকে। এক অভিনেতার সন্তান বলেছিলেন, আমাকে নাকি প্রতিবন্ধীর মতো লাগছে।’

চরিত্রের অভিনেত্রী ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত

শুটিংয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হলেও কখনো কোনো উচ্চবাচ্য করেননি ভাবনা। এখন থেকে প্রতিবাদ করবেন তিনি। এত দিন পর তাঁর মনে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলে, সেসব আমি গুরুত্ব দিই না। প্রথম দিকে মেনে নিতে কষ্ট হতো, কান্না আসত। এখন এসব সহ্য করতে পারি। কিছু মানুষ আছে, তারা দোষ–গুণ উভয় নিয়েই সমালোচনা করে। তাদের আমি গুরুত্ব দিই। তাদের কাছ থেকে আমি শিখতে চাই।’

সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ভাবনা অভিনীত নাটক ‘মুখ আসমান’। নাটকটির রচনা ও পরিচালনা করেছেন অনিমেষ আইচ। লকডাউন, চোখের সামনে প্রিয় মানুষদের হারানো, অমানবিকতা, মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামসহ করোনাকালের আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নাটকে। সেখানে চিকিৎসকের চরিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।