ফ্লপ থেকে হিট উপস্থাপক হওয়ার গল্প

একটা সময় অভিনয় করলেও এখন উপস্থাপক হিসেবেই আলোচিত শাহরিয়ার নাজিম জয়। এরই মধ্যে উপস্থাপনায় পাঁচ বছর পার করলেন তিনি। এই সময়ে তাঁর অতিথি হয়েছেন ১ হাজার ৫৬৭ জন। উপস্থাপনায় পাঁচ বছর পার করে দেওয়া জয় জানালেন, উপস্থাপনাটা জাস্ট ফাজলামি করেই করেছেন। এখানে কোনো নিয়ম তিনি মানেননি।
তবে তাঁর উপস্থাপক হয়ে ওঠাটা মোটেও সহজ ছিল না।

শাহরিয়ার নাজিম জয়

কথা প্রসঙ্গে জয় জানালেন, একটা সময় অভিনয়ে অনিয়মিত জয় পাঁচ বছর আগের একটি দিনে টেলিভিশন নাটক নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তিনি নাটক বানানোর চেয়ে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নির্মাণের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটি জয়ের কাছে ভিন্নরকম মনে হওয়ায় লুফেও নেন। এরপর তিনি নেমে পড়েন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নির্মাণের প্রস্তুতিতে। পাঁচ বছর কাটানো সেই জয়ের প্রথম দিককার সময়টা মোটেও সুখকর ছিল না বলে জানালেন তিনি।

শাহরিয়ার নাজিম জয়
ছবি : সংগৃহীত।

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে জয় বললেন, ‘নাটক নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া আমার কাছে এমন কথা শুনে হঠাৎ একটা ধাক্কা দিল। যাই হোক, ম্যাগাজিন নিয়ে ভাবা শুরু করলাম। কোনো কূলকিনারা পাইলাম না। ডা. এজাজকে ফোন দিলাম, তিনি শুটিং নিয়ে এখানে-ওখানে ব্যস্ত। তারপর ভাবলাম, এভাবে কীভাবে সম্ভব। তারপর চেষ্টা করলাম মীর সাব্বিরকে নিয়ে—দুই বন্ধুর একটা শো করা যায় কিনা। দুজন উপস্থাপনা করব। দেখলাম, সেও ব্যস্ত। এর মধ্যে আবার ডমিনেটিং ব্যাপার ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। যেহেতু অভিনেতা হিসেবে তার অবস্থান আমার চেয়ে শক্ত, পরিচিতি অনেক বেশি, তাই মনে হয়েছে আমাকে উপস্থাপনায় সে ডমিনেটও করবে। দু-একটা মিটিংয়ের পর এমন উপলব্ধি হয়েছে। এটা হয়তো তার মার্কেট ভ্যালুর কারণে। তখন যেহেতু আমি তার চেয়ে একটু নরম অবস্থানে আছি। তারপরও সেই সময় বিচ্ছিন্নভাবে সেন্স অব হিউমার শুরু হলো।’

শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হয় সেলিব্রেটি শো ‘সেন্স অব হিউমার’

‘সেন্স অব হিউমার’ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে শহীদুজ্জামান সেলিম, জিতু আহসান, হৃদি হক, সাজু খাদেম, ভাবনাসহ মোট সাতজন অতিথি ছিলেন বলে জানালেন জয়। তিনি জানান, শুরুর প্যাটার্নটাও ভিন্ন ছিল। তারপরও ফ্লপ করে অনুষ্ঠানটি। পাঁচটি পর্ব প্রচারের পর অত্যন্ত দুর্বল, মানহীন, নিম্নমানের অনুষ্ঠানে অভিযোগ এলে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয় এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হার মানার মানুষ নন জয়, আবারও দেখা করেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে। তিন মাসের সুযোগ চাইলেন। অনেক চেষ্টায় তা পেলেনও। তিন মাসে ছয়টি পর্ব তৈরির সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে যদি নিজেকে মেলে ধরতে পারেন, তবেই টিকে থাকবেন, না হয় চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো জয়ের। প্রথম পর্বে তিনি আলোচনায় আসেন। এই পর্বে অতিথি ছিলেন পূর্ণিমা ও জায়েদ খান।

‘সেন্স অব হিউমার’ অনুষ্ঠানে অপু বিশ্বাস ও শাহরিয়ার নাজিম জয়

জয় বললেন, ‘সেন্স অব হিউমারের প্রথম পর্বই ক্লিক করলে সবাই নড়েচড়ে বসল। এরপর অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া ও পপির তিনটি পর্বও হিট। আমি ডু অর ডাই বেসিসে খেলেছি। ধরেই নিয়েছি, তিন মাসে তো বন্ধ হয়ে যাবে। আমি আমার মতো করে যাই। যখন একেকটা পর্ব ধামাধাম হিট হয়ে গেল, এটিএন বাংলা চ্যানেলই টিআরপিতে এক নম্বর হয়ে গেল। প্রতিষ্ঠানটি আবার টিআরপি ভীষণ গুরুত্ব দিত। আমাকে বড় স্টুডিওতে ও যা যা সুবিধা দেওয়ার দিতে বললেন চ্যানেলের চেয়ারম্যান।’

জয় ভাষায়, ‘উপস্থাপনায় আমার সামনে কোনো অনুপ্রেরণা ছিল না। ভেবেই নিয়েছিলাম, বিনোদন অঙ্গনে আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। উপস্থাপনাটা জাস্ট ফাজলামি করেই করছি। আমি যা, যেভাবে কথা বলি, সেভাবেই করে গেছি শুধু। এখানে কোনো নিয়ম মানিনি, কোনো গ্রামার মানিনি। আমার মতো করে করতে করতে আমাকে চিনে গেছি। আমি কনফিডেন্ট ছিলাম না, আমার পর্বগুলো যখন দর্শক গ্রহণ করে ফেলেন, তখনই আমি কনফিডেন্ট হয়ে গেছি।’

‘সেন্স অব হিউমার’ অনুষ্ঠানে ভাবনা ও জয় শাহরিয়ার

শাহরিয়ার নাজিম জয় এখন চ্যানেল আইতে ‘৩০০ সেকেন্ড’, ‘৩০০০ সেকেন্ড’ ও ‘জীবনের গল্প’ নামে তিনটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন। জয় বললেন, ‘যখন চ্যানেল আইতে সাগর (ফরিদুর রেজা) ভাইয়ের কাছে এসেছিলাম, তখন ‍অন্য আরেকটি টেলিভিশনে আমার জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শুরুতে সাগর ভাই বিশ্বাস করেননি যে চ্যানেল আইয়ে আসার কারণে সেই অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ঘটনা যে সত্যি, সাগর ভাই যখন বুঝলেন তখন আমাকে বলেছিলেন, আমি যেন প্রতিদিন চ্যানেল আইয়ে শো করি। এখানেই তিনি তাঁর উদারতা দেখিয়েছেন। এরপর ৩০০ সেকেন্ড, ৩০০০ সেকেন্ড ও জীবনের গল্প শুরু করি। সাগর ভাই আমাকে যে সাপোর্ট দিয়েছেন, এটা আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’