বহু বছর পর সেলিমের ইচ্ছা পূরণ

নাটকের একটি দৃশ্যে শহীদুজ্জামান সেলিম ও আশনা হাবীব ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত

বছরের পর বছর অপেক্ষার পরে অভিনয়শিল্পী শহীদুজ্জামান সেলিমের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তাঁর ইচ্ছা ছিল, প্রিয় সহকর্মীদের অভিনয়ে একসঙ্গে পাওয়া। এই অভিনয়শিল্পীদের কারও সঙ্গে এক দশকের বেশি সময় দেখা হয় না। ব্যস্ততায় কারও সঙ্গে ছিল না নিয়মিত যোগাযোগ। দীর্ঘদিন পরে এমন একাধিক শিল্পীকে শুটিংয়ে পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই অভিনেতা।

একক ও ধারাবাহিক নাটক নিয়ে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় এই অভিনেতাকে। সেসব নাটকে দেখা যায় কিছু পরিচিত মুখ। এমন হয়েছে যে অনেক নতুন শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। তা ছাড়া ঘুরেফিরে একই মুখের অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু এই অভিনেতার একটা সময় কেটেছে পছন্দের অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে, যাঁদের মধ্যে আছেন মামুনুর রশীদ, ফারুক আহমেদ, অরুণা বিশ্বাস, জিতু আহসান, ইন্তেখাব দিনার, রোজী সিদ্দিকী, জেনি, রওনক হাসান, সাঈদ বাবু, ভাবনাসহ আরও অনেকে। সেলিম জানান, ভালো সহকর্মীদের সঙ্গে অভিনয়ের তৃষ্ণা সব সময়ই ছিল। কিন্তু নাটকের বাজেট কমে গিয়ে এখন সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া কঠিন। তাঁদের একসঙ্গে নিয়ে অনেকে কাজে আগ্রহ দেখান না। এসব মেধাবী অভিনয়শিল্পীদের কেউ বর্তমানে নাটকের অবস্থা দেখে কাজ করতে উৎসাহ বোধ করেন না। তিনি বলেন, ‘নব্বই দশক থেকে নাটকের আলাদা একটি জায়গা ছিল। সে সময় থেকে একাধিক শিল্পী তৈরি হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ভালো বোঝাপড়া হয়েছে। আমাদের দারুণ সিংক। তারা সবাই আমার পছন্দের মানুষ। কাজের সুবাদে তাঁদের অনেকের সঙ্গে বহু বছর পরে দেখা হয়েছে। খুব আনন্দে শুটিং ও আড্ডা চলছে। মনে হচ্ছে দুই যুগ আগে ফিরে গেছি।’

বছরের পর বছর অপেক্ষার পরে অভিনয়শিল্পী শহীদুজ্জামান সেলিমের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ১০ বছর পরে তিনি কাজ করছেন জিতু আহসানের সঙ্গে। দিনার, সাঈদ বাবু, বিজরীসহ আরও অনেকের সঙ্গে দীর্ঘদিন পরে শুটিংয়ে দেখা। ধারাবাহিকটির নাম ‘এখানে কেউ থাকে না’। সবাই মিলে তাঁরা আগে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। কিন্তু শেষ কবে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন, সেটা মনে করতে পারলেন না সেলিম। তাই সবাইকে পেয়ে শুটিংয়ের ফাঁকে চলছে জমিয়ে আড্ডা। কথা হচ্ছে বর্তমান নাটক নিয়ে। তিনি জানান, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে একটা চর্চার মাধ্যমে নাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন। সেসব নাটকে স্থান পেত সময়ের গল্প। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক নাটকে দেশের সংস্কৃতি সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। দিন দিন নাটক তার মান হারাচ্ছে। কীভাবে এই সংকট থেকে বের হওয়া যায়, সেসব নিয়েই কথা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জিতুর সঙ্গে কথা বললাম, সে বলল, “সেলিম ভাই, নাটক তো এখন ছন্দহীন। নাটক তার জায়গা থেকে হারিয়ে গেছে।” নাটক নিয়ে তার পর্যবেক্ষণকে সাধুবাদ জানালাম। তার সঙ্গে আমরা একমত।’

শুটিংয়ের ফাঁকে আড্ডায় ঘুরেফিরে এসেছে বর্তমান নাটকের অবস্থা
ছবি: সংগৃহীত

জিতু আহসান তাঁর সঙ্গে প্রথম ‘জোয়ার ভাটা’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছিলেন। সেই থেকে একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। সেলিম মনে করেন, ‘সেই সময়ের তুলনায় এখনকার বেশির ভাগ নাটক ভাঁড়ামি ছাড়া কিছুই হচ্ছে না। আমাদের অনেক গুণী অভিনয়শিল্পী আছেন। তাঁদের নিয়মিত নাটকে ফেরাতে পারলে আমরা আরও বেশি ভালো শিল্পী পাব।’

শুটিংয়ে নির্মাতা অনিমেষ আইচ ও সব অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে আড্ডায় ঘুরেফিরে এসেছে বর্তমান নাটকের অবস্থা। সেলিম জানান, দেশের নাটক যে জায়গায় যাওয়া কথা ছিল, সেখান থেকে বহু বছর পিছিয়ে গেছে। আজকের অনেক নাটক দেখে বোঝা যায় না, এগুলো কোন দেশের সংস্কৃতিকে বহন করে। তিনি বলেন, ‘আমরা কি এখনকার নাটকে নিজেদের গল্পকে তুলে ধরতে পারছি না। আমাদের পরিবার আছে, আত্মীয়স্বজন আছে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নিজেদের মতো সংকট আছে। সেগুলো নাটকে ফিরে না এলে আমরা নিজের সংস্কৃতিকে ভুলে যাব। দর্শক একটা সময় একেবারে নাটক দেখা বাদ দেবে।’

শহীদুজ্জামান সেলিম
ছবি: সংগৃহীত