বাজেট যাচ্ছে বিশ্বকাপ খেলায়

আগামী ৩০ মে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। পবিত্র রমজানের শেষ দিকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের দর্শক, বিশেষ করে ক্রিকেটপ্রেমীদের উত্তেজনা অনেক। এদিকে বিশ্বকাপ শুরুর কদিন পরই ঈদুল ফিতর। সাধারণত টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দর্শকদের জন্য নানা ধরনের আয়োজন করে। কিন্তু এবার ঈদের জন্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ও নাটক নির্মাণে ভাগ বসাচ্ছে খেলা। শুধু ভাগই নয়, বাজেটের বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে খেলার আয়োজনের পেছনে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক টেলিভিশন কর্মকর্তা বলেন, ঈদের সময় ক্যাটাগরিভেদে টেলিভিশন চ্যানেলে প্রতি মিনিটে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা থাকে বিজ্ঞাপনের দর। আর খেলা প্রচারের সময় চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপন রেট হয়ে যায় প্রতি মিনিট দেড় লাখ টাকার ওপরে। এ কারণে অন্য টেলিভিশনগুলোর বাজেট ঘাটতি হচ্ছে।

আরটিভির অনুষ্ঠানপ্রধান দেওয়ান শামসুর রকিব বলেন, ‘নাটক-টেলিছবির জন্য ঈদের বাজেট কিছুটা কমে এসেছে। বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের মধ্যে বেশির ভাগ খেলাপ্রেমী। তাই বিজ্ঞাপনদাতা, স্পনসরকারী প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোর নজর খেলার দিকে।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এই সময়ের জন্য যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বাজেট ১০০ টাকা হয়, তার ৬০ টাকাই চলে যাচ্ছে খেলার পেছনে।

গত বছরও একই সমস্যায় পড়েছিল দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। গত বছর বিশ্বকাপ ফুটবল প্রচারিত হয় বিভিন্ন চ্যানেলে। বছর পেরোতেই ঈদের মতো বড় উৎসব সামনে রেখে এমন সমস্যা চ্যানেলগুলোর দুশ্চিন্তার বড় কারণ। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বেশির ভাগ খেলা শুরু হবে দুপুর বা সন্ধ্যায়। চলবে রাত বা মধ্যরাত অবধি। খেলা চলাকালীন এই সময়টা টেলিভিশনের ভাষায় ‘পিক টাইম’।

গত বুধবার কথা হয় টেলিভিশনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। জানা যায়, বিটিভির পাশাপাশি খেলা প্রচার করবে মাছরাঙা টেলিভিশন ও গাজী টিভি। মাছরাঙা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান আরিফুর রহমান বলেন, ‘খেলার জন্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে চ্যানেলগুলো, এটা সত্যি। কারণ, খেলার মধ্যে বিজ্ঞাপনের জন্য একটা বড় বাজেট সব প্রতিষ্ঠানেই থাকবে। তবে একটু কৌশলী হলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। দুপুরে ও রাতের সময়টা কাজে লাগালে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।’

খেলার সময়ের বাইরে ঈদের অনুষ্ঠান নিয়েও ভাবছে গাজী টিভি। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমান আশরাফ ফায়েজ বলেন, ‘আমরা খেলা তো প্রচার করবই। তবে এই সময়ের বাইরে ঈদের অনুষ্ঠানও প্রচার করব।’

একই কথা বলেন এনটিভির অনুষ্ঠানপ্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ। তিনি বলেন, ‘এবারের অনুষ্ঠানের দিকে দর্শকদের আগ্রহ একটু কম থাকতে পারে। কারণ, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে। তবে আমরা এরই মধ্যে আমাদের ঈদের বেশির ভাগ নাটক ও টেলিছবির চাংক বিক্রি করেছি। সেদিক থেকে আমরা একটু নিরাপদ আছি।’

তবে খেলার সঙ্গে ঈদের অনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন নাগরিক টিভির অনুষ্ঠানপ্রধান কামরুজ্জামান বাবু। তিনি বলেন, খেলার দর্শক এক রকম। টেলিভিশন অনুষ্ঠানের আরেক রকম। তাই কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না।

টিভি চ্যানেলগুলো এখন অনুষ্ঠান পরিকল্পনার পাশাপাশি স্পনসরের সঙ্গে আলোচনা করছে। সেরা ও ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান নির্মাণের চিন্তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বাজেটের চিন্তাও। খেলা প্রচারকারী চ্যানেলগুলো ছাড়া বাকি চ্যানেলগুলো নানা ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) ইবনে হাসান খান বলেন, ‘খেলা দেখাচ্ছে না, এমন চ্যানেলগুলোর বাজেটে ঘাটতি পড়বে ঠিক। কিন্তু চ্যানেলের উচিত হবে না অনুষ্ঠানের মান খারাপ করা। আমরা ইতিমধ্যে দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণ শুরু করেছি।’