ঘরে থাকার জন্য কেউ পে করলে আমি জবটি সবার আগে নিতাম
অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন নাজনীন হাসান চুমকি। কিন্তু নিজের অভিনীত কোনো নাটক বা সিনেমা কখনোই দেখেন না এই অভিনেত্রী। এবার হয়েছে তার ব্যতিক্রম। চরকিতে মুক্তি পাওয়া মরীচিকা দেখলেন।
‘মরীচিকা’র ‘জারা’ চরিত্রটি নিয়ে রেসপন্স কেমন?
প্রথমবারের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করলাম। প্রথম দিনই আমি মরীচিকা দেখেছি। পরে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। এতটা প্রশংসা পাব ভাবিনি।
প্রশ্ন :
নিজের অভিনীত চরিত্রটি দেখে কী মনে হলো?
নিজের অভিনীত কাজ দেখলে আমার প্রচণ্ড ভয় লাগে, নার্ভাস হয়ে ঘামতে থাকি। এই জন্য ভয়ে নিজের কোনো কাজ দেখি না। এবার ব্যতিক্রম। প্রথম দিকে দেখতে চাইনি। আমরা শুটিংয়ের সময় ভালো একটি টিম ছিলাম। দর্শক হয়ে অন্যদের অভিনয় দেখার জন্য দেখেছি। জোভান, আফরান নিশো, মাহি, সিয়াম—সবার অভিনয় দেখে মুগ্ধ। বিশেষ করে জোভানের এমন অভিনয় কখনোই দেখিনি।
প্রশ্ন :
দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘ধারাপাত’-এ অভিনয় করছেন। এই নাটকে আপনি সহজ-সরল, গুণী, শিক্ষিত একটি মেয়ে। বাস্তবে আপনি কেমন?
শিক্ষিত এবং কিছু গুণ আছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, বাস্তব জীবনে আমি অনেক বোকা। অনেক কিছুই না বুঝে করি।
প্রশ্ন :
করোনার কারণে বেশির ভাগ সময় বাসায় কাটে। আলসেমি পেয়ে বসে না?
আমি ভীষণ অলস, আবার অনেক পরিশ্রমী। মাঝেমধ্যে মনে হয়, ঘরে থাকার জন্য কেউ পে করলে জবটি সবার আগে নিতাম। কী যে মজা হতো!
প্রশ্ন :
একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঘানি’ সিনেমার শুটিং করার সময় আপনার চোখ ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল।
সিনেমায় একটি দৃশ্য ছিল ডান থেকে বাঁ দিকে তাকাব। ক্যামেরা ট্রলিতে, আমি ঘুরে তাকাচ্ছি। এমন সময় শুনলাম ‘কাট’। সবকিছু ঠিকমতোই হচ্ছিল। কাট শুনে ভয় হচ্ছিল। কারণ, ৩৫ মিলিমিটারের শুটিংয়ে অনেক খরচ। পরে ক্যামেরাম্যান আমার কানে কানে এসে বলল, ‘এভাবে বড় বড় করে তাকিয়ো না, তোমার চোখ ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তোমার চোখের সাদা অংশ অনেক বেশি। এভাবে তাকালে দর্শক ভয় পাবে। তোমাকে চরিত্র বুঝে তাকাতে হবে।’ সেদিন অনেক বড় শিক্ষা পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন :
‘ঘানি’তে কাজ করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, ‘একই বৃত্তে’র জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার। তারপরও সেভাবে আর সিনেমা করেননি কেন?
নির্মাতারা তাঁদের গল্পে আমাদের বয়সী অভিনেত্রীদের চরিত্র রাখেন না। তা ছাড়া আমার বয়সী অভিনেত্রী অনেক থাকায় হয়তো সুযোগটা কম পাই। সম্প্রতি গাঙকুমারীসহ আরও দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। মাশরাফি জুনিয়র ধারাবাহিকে ইন করেছি। অভিনয়টাই ভালোবেসে করতে চাই।
প্রশ্ন :
অনেকেই আপনার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করেন।
আমার সহকর্মী-সিনিয়ররা অনেকেই মনে করেন, আমি অনেক মুডি, আমার অনেক ভাব। আমি কীভাবে যেন কথা বলি, কীভাবে যেন তাকাই। আসলে এগুলো আমার নিজস্বতা। এটা অনেকেই বোঝে না।
প্রশ্ন :
ফেসবুকে লিখেছেন, কে দাম দিল না দিল, ভাবতে চাই না...
মানুষ জাজমেন্টাল। যাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয়, তাদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে কথা বলি। কিন্তু অনেকেই ফেসবুকে নোংরা বললে সেটা নিয়ে কখনো মাথা ঘামাই না। তারা আমাকে দাম না দিয়ে বাজে মন্তব্য করলে আমি কেয়ার করি না।
প্রশ্ন :
বললেন, অভিনয় করেও সহশিল্পীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন? এই শেখার কোনো ঘটনা কি শেয়ার করবেন?
ঘানির একটা দৃশ্যে কাঁদতে কাঁদতে আমি হাত দিয়ে মুখ ঢাকি। নির্মাতা কাজী মোরশেদ ওকে বলেন। শট শেষে আমার সহ-অভিনেতা মাসুম আজীজ ভাই কাছে ডেকে বললেন, ‘মনে রাখবা, গ্রামের মানুষ কাপড়ে মুখ ঢেকে কান্না লুকায় না। তারা দুঃখে কলিজা ফাটানো কান্নায় ভেঙে পড়ে। তোমার কান্না কিছুটা শহুরে।’ তখন আমার মনে খচখচ শুরু হয়। পরদিন নির্মাতাকে বলি, কান্নার দৃশ্যটা আবার করতে চাই। নির্মাতা বলেন, কেন? ‘এটা মাসুম আজীজ ভাই বলবেন,’ বলেই আমি দৌড় দিই। সেদিন দ্বিতীয়বার বুকফাটিয়ে কেঁদেছিলাম। অসংখ্য শিক্ষাই আমাকে অভিনয় শিখিয়েছে।
প্রশ্ন :
‘পেন্ডুলাম’-এর খবর কী? গত বছরই তো মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল?
করোনার কারণে নাটকটির মঞ্চায়নের তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। এখনো নিয়মিত অনলাইনে অনুশীলন করছি। আমাদের সহকর্মী আফজাল হোসেন ভাই, নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ ভাই, নাটকটির লেখক মাসুম রেজাসহ সব কলাকুশলী অনুশীলনে উপস্থিত থাকি। পরিস্থিতি ভালো হলে মঞ্চায়ন হবে।