বাড়ছে নাটক, কমছে বাজেট

নতুন স্বাভাবিকে তুলনামূলক নাটক নির্মাণ বেড়েছে, কিন্তু বাড়েনি নাটকের বাজেটকোলাজ

করোনার সংক্রমণের কারণে নাটক নির্মাণ কমে গিয়েছিল। নতুন স্বাভাবিকে তুলনামূলক নাটক নির্মাণ বেড়েছে, কিন্তু বাড়েনি নাটকের বাজেট। কম বাজেটে নাটক নির্মিত হলে দিন দিন নাটকের মান কমতে থাকবে বলে টেলিভিশন নাটক–সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।

প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পরে জুন মাস থেকে নতুন স্বাভাবিকে শুটিং শুরু হয়। দিন দিন বাড়তে থাকে নাটকে নির্মাণের সংখ্যা। কিন্তু বাজেট সে হিসাবে বাড়ছে না। বরং করোনার কারণে আরও কমেছে।

কোনো কোনো নির্মাতা মনে করছেন, কেবল গুটিকয় তারকাকে নিয়ে নাটক বানালে বাজেট ভালো পাওয়া যায়।
সংগৃহীত।
জুতসই কাজ করার জন্য নাটকের বাজেট বাড়াতে হবে। তা না হলে নাটক থেকে বৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে। সব কাজই মনোযোগ দিয়ে করি, কিন্তু কম বাজেটে চাপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কাজের মান ঠিক থাকে না।
মোশাররফ করিম

জানা গেছে, করোনার আগে বেশির ভাগ একক নাটকের বাজেট ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। নির্মাতা এবং বিভিন্ন উৎসবের ওপর নির্ভর করে বাজেট কিছুটা বাড়ত। সেই নাটক এখন নির্মাণ হচ্ছে ১ লাখ ৩০ থেকে ২ লাখের মধ্যে। আগে ধারাবাহিক নাটকের প্রতি পর্বে বাজেট ছিল ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা, এখন প্রতি পর্বে বাজেট কমে গেছে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

একটি একক নাটকের বাজেট ৫০ হাজার টাকার মতো কমে গেছে।
সংগৃহীত।

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির বলেন, কিছু অসৎ মানুষের কারণে এই শিল্প রুগ্‌ণ হয়ে যাচ্ছে। তা না হলে বাজেট এতটা কমার কথা না। একটি একক নাটকের বাজেট ৫০ হাজার টাকার মতো কমে গেছে। একটা ধারাবাহিক নাটকের প্রতি পর্বে কমেছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এই বাজেট দিয়ে নাটক বানানো অসম্ভব।

বিজ্ঞাপন কোম্পানিগুলো এখন অনলাইনের দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে ওয়েবের প্রযোজনাগুলোতে বাজেট বাড়ছে। সেই তুলনায় টেলিভিশন নাটকের বাজেট অনেক কম। টেলিভিশন নাটকের বাজেট নিয়ে কেউ গুরুত্বও দিচ্ছে না। ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘নাটকের বাজেট দিন দিন কমছেই। আগের তুলনায় এখন নাটক বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। তারপরও নতুন স্বাভাবিকে কেন বাজেট কমছে, তা বুঝতে পারছি না।’

‘নাটকের বাজেট দিন দিন কমছেই। আগের তুলনায় এখন নাটক বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। তারপরও নতুন স্বাভাবিকে কেন বাজেট কমছে, তা বুঝতে পারছি না।’
সালাউদ্দিন লাভলু

কোনো কোনো নির্মাতা মনে করছেন, কেবল গুটিকয় তারকাকে নিয়ে নাটক বানালে বাজেট ভালো পাওয়া যায়। নির্মাতা সাগর জাহান জানান, কিছু তারকাকে নিয়ে কাজ করলেই কেবল ভালো বাজেট পাওয়া যায়। এই তালিকায় আছেন অভিনেতা মোশাররফ করিম, তাহসান, আফরান নিশো, অপূর্ব, অভিনেত্রী মেহ্‌জাবীন চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা বাজেট। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাটকের বাজেট বাড়ছে। তবে গড়ে সব নাটকের জন্য বাজেট ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু শিল্পীর ওপর নির্ভর করে বাজেট কম–বেশি হয়।’

আগের তুলনায় এখন নাটক বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে।
সংগৃহীত।

ঈদুল আজহায় বেশ কিছু নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রের পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্রের দেখা মেলে। কিন্তু সম্প্রতি আবার নাটকগুলো কেন্দ্রীয় চরিত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ছোট পর্দার তরুণ অভিনেতা সৈয়দ শাওন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় পরিচালক, প্রযোজক, লেখক ভাইবোনদের কাছে আবেদন। বাজেটের দোহাই দিয়ে গল্প থেকে বাবা–মাকে মেরে ফেলবেন না বা গ্রামে পাঠাবেন না! আমরা টেস্টটিউব বেবি না ভাই।’

করোনার প্রভাব নাটকের বাজারে এখনো আছে। কয়েকটি বড় উৎসবের জন্য আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে পারিনি। বড় পরিসরে অনেক নির্মাতা কাজ করছেন না। পুরোদমে শুটিং শুরু হলেই বাজেট বাড়বে আশা করি।
তারেক আখন্দ, অনুষ্ঠান প্রধান, বাংলাভিশন

এই স্ট্যাটাস ধরে খবর নিয়ে জানা গেল, বাজেটের কারণে নাটকের পরিসর এবং বৈচিত্র্য কমেছে। অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘জুতসই কাজ করার জন্য নাটকের বাজেট বাড়াতে হবে। তা না হলে নাটক থেকে বৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে। সব কাজই মনোযোগ দিয়ে করি, কিন্তু কম বাজেটে চাপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কাজের মান ঠিক থাকে না। যে কারণে অনেক গল্পে প্রাণ প্রতিষ্ঠা পায় না।’

বাজেট কমার আরেকটি কারণ করোনায় দর্শক কমে যাওয়া। এ প্রসঙ্গে বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান তারেক আখন্দ বলেন, ‘করোনার প্রভাব নাটকের বাজারে এখনো আছে। কয়েকটি বড় উৎসবের জন্য আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে পারিনি। বড় পরিসরে অনেক নির্মাতা কাজ করছেন না। পুরোদমে শুটিং শুরু হলেই বাজেট বাড়বে আশা করি।

পুরোদমে শুটিং শুরু হলেই বাজেট বাড়বে আশা করছেন কেউ কেউ।
সংগৃহীত।