বৃদ্ধাশ্রম থেকে ভাগনের বাড়িতে সেই মেকআপশিল্পী

রূপসজ্জাকারী আবদুর রহমান।
সংগৃহীত

‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া রূপসজ্জাকারী বৃদ্ধাশ্রমে’ শিরোনামে গত মাসের ১৫ আগস্ট একটি খবর প্রকাশিত হয় প্রথম আলো অনলাইনে। সেই মেকআপশিল্পী আবদুর রহমান বাড়ি ফিরেছেন। আশ্রম ছেড়ে তিনি গিয়ে উঠেছেন ভাগনে আবদুল হালিমের কামরাঙ্গীরচরের বাসায়।

গত জুলাই মাসে সাভারের একটি বৃদ্ধাশ্রম থেকে আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমার দেখাশোনা করার কেউ নেই। দুই বোন মারা গেছে। আগে টাকাপয়সা যা আয় করতাম, সেগুলো সবার জন্যই খরচ করতাম। পরে বাড়িভাড়া করে থাকতে হবে সেটা ভাবিনি, তাই সঞ্চয়ও করিনি। ইচ্ছা করে না, তবু এখন বৃদ্ধাশ্রমে থাকি।’ তিনি এটাও জানিয়েছেন, করোনার পর হয়তো ভাগনের বাড়িতে গিয়ে উঠবেন। করোনা মহামারি শেষ হওয়ার আগেই ভাগনের বাড়িতে গিয়ে খুব ভালো আছেন আবদুর রহমান। সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে থাকতে আমার সব সময়ই ভালো লাগত। এখন ভাগনের বাসায় খুব ভালো আছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। ভাগনে বলেছে, যত দিন ইচ্ছা তার বাসায় থাকতে পারব।’

মামাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বেশ খুশি ভাগনে আবদুল হালিম। তিনি জানান, আবদুর রহমান তাঁর একমাত্র মামা। মা মারা যাওয়ার পর থেকে মামার সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। মামাকে সঙ্গে রাখার অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি মিডিয়াজগৎ নিয়েই থাকতেন। তিনি বলেন, ‘মামা বৃদ্ধাশ্রমে আছেন, সেটা আমরা জানতাম না। পরে জানতে পেরে তাঁকে বাসায় নিয়ে এসেছি। মামাকে পেয়ে আমরা খুশি। তিনি অভিভাবক হিসেবেই আমাদের সঙ্গে আছেন। এভাবেই তাঁকে রেখে দিতে চাই।’

নাটকের শুটিংয়ে অভিনয়শিল্পী ও অন্যান্যদের সঙ্গে আবদুর রহমান।
সংগৃহীত

অসুস্থ থাকাকালে মেকআপশিল্পী আবদুর রহমানকে ৫ লাখ টাকা অনুদান দেয় সরকার। সেই টাকা নিজের শেষ জীবনের নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন তিনি। সেখান থেকে প্রতি মাসে চিকিৎসা এবং নিজের প্রয়োজনীয় খরচ মেটান তিনি। আবদুর রহমান জানান, তিনি কখনোই বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চাননি। চেয়েছিলেন ঢাকায় কোথাও বাসা ভাড়া করে থাকবেন। অনেককেই বলেছিলেন বাসা খুঁজে দিতে। কিন্তু কেউই সেইভাবে সহযোগিতা করেননি। তিনি বলেন, ‘ভাড়া থাকার মতো কোনো বাসা পাচ্ছিলাম না। যাকেই বলি, সেই–ই বলে বয়স্ক মানুষের জন্য কোনো বাসা পাওয়া যায় না। পরে বুঝতে পেরেছি, আমার টাকার ওপর কিছু মানুষের চোখ পড়েছিল।’

আবদুর রহমানের জন্ম ১৯৪৬ সালে। ১৯৬২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি মঞ্চনাটকের মেকআপশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। একসময় টিভিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কাজ শুরু করেন চলচ্চিত্রে। নির্মাতা নারায়ণ ঘোষ মিতা, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, কাজী জহির, হুমায়ূন আহমেদ, ভারতের কলকাতার গৌতম ঘোষ, বাসু চ্যাটার্জিসহ অনেক নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ভারতের শাবানা আজমি, সাবিত্রী চ্যাটার্জি, লাবণী সরকার, প্রসেনজিৎসহ অনেককেই মেকআপ করিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে রাজ্জাক, কবরী, শাবানা থেকে শুরু করে প্রায় সবার মেকআপ করেছেন এই শিল্পী। এখনো তাঁর কাজের কদর রয়েছে। তিনি জানান, ‘এখনো অনেকে কাজের জন্য আমাকে ফোন করেন। কিন্তু আমি কিছুটা অসুস্থ। করোনা পরিস্থিতির পর একটু ভালো অনুভব করলে কাজে ফিরব। কাজ ছাড়া আমার ভালো লাগে না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই।’

‘ঘুড্ডি’, ‘মাটির ময়না’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘নাগবউ’সহ দুই শতাধিক ছবির অভিনয়শিল্পীদের মেকআপ করিয়েছেন আবদুর রহমান। ২০১০ সালে ‘মনের মানুষ’ এবং ২০১৬ সালে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

‘ঘুড্ডি’, ‘মাটির ময়না’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘নাগবউ’সহ দুই শতাধিক ছবির অভিনয়শিল্পীদের মেকআপ করিয়েছেন আবদুর রহমান। ২০১০ সালে ‘মনের মানুষ’ এবং ২০১৬ সালে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। চারবার পেয়েছেন প্রযোজক সমিতির পুরস্কার। আবদুর রহমান সর্বশেষ ‘ভুবন মাঝি’ ছবিতে কাজ করেছেন। ছবির ফাঁকে ফাঁকে অনেক নাটকেও কাজ করেছেন।