‘বেডরুম দেখিয়ে দর্শক ধরে রাখা যাবে না’

আশীষ খন্দকার
সংগৃহীত

ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করলেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা আশীষ খন্দকার। নাম চূড়ান্ত না হওয়া ছবিটির শুটিং হয়েছে ভৈরব-আশুগঞ্জ এলাকার মেঘনা নদীতে গভীর রাতে। ছবির গল্প ও চরিত্র নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাননি এই অভিনেতা। তবে জানিয়ে রাখলেন শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। বললেন ওটিটি ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আশীষ খন্দকার বলেন, ‘ছবিটিতে মজার কিছু বাস্তব দৃশ্য আছে। মাথার ওপরে শকুন ওড়ার একটা দৃশ্য ধারণের প্রয়োজন। কিন্তু এই দৃশ্য তো আয়োজন করা সম্ভব নয়। পরে একটি বার্জের ওপর অনেক সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করি। অবশেষে দেখা গেল, অনেকগুলো শকুন উড়ছে মাথার ওপর। এগুলো টাকা দিয়ে আয়োজন করা সম্ভব নয়। ভাগ্যবান নির্মাতারা প্রকৃতি থেকে অনেক কিছুই পেয়ে যান।’

ছবির শুটিংয়েও ছিল ডাকাতের আক্রমণের আশঙ্কা। ঝুঁকি নিয়ে রাতে মাঝনদীতে শুটিং করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক রুবেল আনুশ। তিনি বলেন, ‘মেঘনা নদীর ঠিক মাঝখানে আমরা শুটিং করছিলাম। এই এলাকায় মাঝেমধ্যেই ডাকাতি হয়। স্থানীয় লোকেরা আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন যে এলাকাটিতে ডাকাতের উৎপাত বেশি। যেকোনো সময় বিপদ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। ঝুঁকি নিয়েই আমাদের কাজটি করতে হয়েছে।’

আশীষ খন্দকার
সংগৃহীত

এই পরিচালক জানান, শিগগিরই ছবিটি অনলাইনে মুক্তি পাবে। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন রোকাইয়া জাহান, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’খ্যাত মামুন, ইকবাল প্রমুখ।
অনলাইন নিয়ে নিজের মতামতও ব্যক্ত করেছেন এই অভিনেতা ও মঞ্চনির্দেশক। তিনি মনে করেন, অনলাইনভিত্তিক সব কাজ মানসম্পন্ন হওয়া উচিত। এতে দেশের চলচ্চিত্রের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কনটেন্টের চাহিদা বাড়বে। এ জন্য যথার্থ বাজেট, গল্প ও কলাকুশলী দরকার। শুধু বেডরুম দেখিয়ে দর্শক ধরে রাখা যাবে না।

আশীষ খন্দকার বলেন, ‘আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যেভাবে প্রযুক্তিখাতে আউটসোর্সিং করে আয় করেন, এই অর্থ অনলাইনের জন্য চলচ্চিত্র বানিয়েও আয় করা সম্ভব। ওয়েব সিরিজ আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে আয়ের দ্বার খুলে দিচ্ছে।’
আশীষ খন্দকার আরও জানান, শুধু বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য অনলাইনভিত্তিক কোনো দায়সারা প্রোডাকশন নির্মাণ করা যাবে না। এসব কাজ দিয়ে দর্শক টানা কঠিন হবে। ভালো কাজের পাশাপাশি নতুন অভিনেতা, নির্মাতা, কলাকুশলী তৈরি করতে হবে। এ জন্য এখানে উন্নত মানের দরকার। আশীষ বলেন, ‘

যখন কোনো কনটেন্ট অনলাইনের জন্য বানানো হচ্ছে, তখন তা আর দেশি থাকছে না। তার পরিচয় বাংলাদেশি কনটেন্ট কিন্তু তার দর্শক আন্তর্জাতিক। সুতরাং আমাদের যখন ভালো কাজ হবে, সারা বিশ্বেই আমাদের দর্শক তৈরি হবে। তখন বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা আমাদের কাজের সুযোগ দেবে।
আশীষ খন্দকার, অভিনেতা

আশীষ খন্দকার মনে করেন, দিন দিন অনলাইনভিত্তিক কাজের বৈচিত্র্য তৈরি হচ্ছে। শৈল্পিক জায়গা থেকে কাজগুলো করতে হবে। তিনি বলেন, ‘বেডরুম দেখিয়ে দর্শক ধরে রাখা যাবে না। পৃথিবীর কোনো ভালো ওয়েব সিরিজ নির্মাতা অশ্লীলতাকে প্রাধান্য দেন না। এখন আমরা প্রযুক্তির যুগে বাস করছি। এই ধরনের দৃশ্যগুলো না দেখিয়েও কাজ করা যায়। এসবের থেকে বরং গল্প, চরিত্র, নির্মাণশৈলীর দিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে দেশের ওয়েব বাজার নষ্ট হবে। তথাকথিত টেলিভিশন প্রোডাকশনের মতো ওয়েব সিরিজ করা যাবে না। এটা করলে আমাদের দর্শক হারিয়ে যাবেন। টিভির দর্শক তখন ওয়েবে যাবেন না। দেশের ওয়েব সিরিজ গুরুত্ব হারাবে।’