ভালোবাসা-মন্দবাসার ২৭ বছর

রোজী সিদ্দিকীর ও শহীদুজ্জামান সেলিমের দাম্পত্যজীবনের ২৭ বছর পূর্ণ হলো গতকাল

‘ও খুবই রাগী। এমনও হয়েছে, রাগ করে আমাদের ১৯ দিন কথাই বন্ধ ছিল। এটাও দাম্পত্য জীবনের অন্য রকম সৌন্দর্য। মান–অভিমান, ভালোবাসা–মন্দবাসা, রাগ—এসব নিয়েই চলছি আমরা।’ কথাগুলো মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী রোজী সিদ্দিকীর। অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে তাঁদের দাম্পত্যজীবনের ২৭ বছর পূর্ণ হলো গতকাল। রোজী সিদ্দিকীর সঙ্গে বিকেলে প্রথম আলোর যখন কথা হয়, তখন পাশে ছিলেন জীবনসঙ্গী শহীদুজ্জামান সেলিমও।

শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সিদ্দিকী
ছবি : শহীদুজ্জামান সেলিমের সৌজন্যে

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজেদের বাসায় দিনটি কাটিয়েছেন তাঁরা। রোজীর কাছ থেকে এমন কথা শুনে হেসে ফেলেন শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি জানান, মানুষের দাম্পত্যজীবন বরাবরই বৈচিত্র্যে ভরপুর। তাই সব মিলিয়েই কাটছে তাঁদের জীবন। বিবাহবার্ষিকীতে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন রোজী। বললেন, ‘সকালে উঠেই চালের রুটি, গরুর মাংস রান্না করেছি। দুপুরে সেলিমের প্রিয় মাছ রান্না করেছি।’

মেয়ে সেঁজুতি খানের সঙ্গে বাবা শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সিদ্দিকী
ছবি : শহীদুজ্জামান সেলিমের সৌজন্যে

রাতে একটা ছোট আয়োজন ছিল। উপস্থিত ছিলেন কেবল তাঁদের বিয়ের সাক্ষীরা। সেলিম ও রোজী জানান, না বললেও তাঁরা আসতেন। কারণ, তাঁরা এই দম্পতির খুবই কাছের মানুষ। খাওয়া শেষে আড্ডায় কেটেছে সময়। ১৯৯৩ সালের ১৬ ডিসেম্বরে জুটি বাঁধেন তাঁরা। শহীদুজ্জামান সেলিমের বড় মেয়ে এখন বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন, স্বামীকে নিয়ে থাকেন ঢাকার আদাবরে। ছোট মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ছেন ক্রিমিনাল ল নিয়ে। কথায় কথায় রোজী জানালেন, ২৭তম বিবাহবার্ষিকীতে সবচেয়ে বড় উপহারটি পেয়েছেন ছোট মেয়ের কাছ থেকে। বড় মেয়ে সেঁজুতি খানকে নিয়ে কেক কাটার সময় অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন ছোট মেয়ে সানজানা খান। মা–বাবাকে জানালেন, তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষায় ভালো ফল করেছেন তিনি। ‘ এমন দিনে মেয়ের সাফল্যের খবরে আমরা ভীষণ আনন্দিত। আজকের দিনে এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছুই হতে পারে না। মেয়েও বলছিল, “আমার এই রেজাল্টই তোমাদের বিবাহবার্ষিকীর উপহার”’, বললেন রোজী সিদ্দিকী।

ছোট মেয়ে সানজানা খানকে নিয়ে বাবা শহীদুজ্জামান সেলিম ও মা রোজী সিদ্দকী
ছবি : শহীদুজ্জামান সেলিমের সৌজন্যে

সংসারে চড়াই–উতরাই থাকবে। সবকিছুর ওপরে এই দম্পতির কাছে পারিবারিক জীবনে সবচেয়ে বড় যে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—বিশ্বাস, আস্থা ও বন্ধন। এই তিনটি বিষয় যদি মানুষের মধ্যে থাকে, তাহলে সংসার সুন্দরভাবে এগিয়ে যায়।
অভিনয় ও সংসার—দুটোকে সমানতালে সমন্বয় করে কাজ করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সিদ্দিকী। সংসার গোছানো ও সন্তানদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অভিনয়ও কমিয়ে দেন। মেয়েরা বড়, তাই এখন মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে সমানতালে কাজ করছেন। রোজী জানান, এই মুহূর্তে তিনি চারটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছেন।

শিল্পীসংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম
ছবি : প্রথম আলো

‘পরাণ’ ও ‘সাইকো’ সিনেমার শুটিং শেষ হয়েছে। শহীদুজ্জামান সেলিমও ব্যস্ত অভিনয় নিয়ে। গতকাল ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত নতুন সিনেমা ‘নবাব এলএলবি’। এ মাসের শেষ দিকে নতুন একটি নাটকের শুটিংও শুরু করবেন, যার পরিচালক তিনি নিজেই। সেলিম বলেন, ‘চমৎকার একটি গল্প পেয়েছি। তাই আবার পরিচালনা করছি। ৯ মাস পর আবার কোনো নাটক পরিচালনা করব।’
অভিনয়ের বাইরে তিনি অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি হিসেবেও ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেলিম বলেন, ‘অভিনয় পেশাকে স্বীকৃতির বিষয়টা এখনো আমরা আদায় করতে পারিনি। কল্যাণ তহবিলেরও কাজও চলছে।’