যে কারণে মন খারাপ ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নাটকের শিল্পীদের

ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিক নাটকটি শেষ হচ্ছে আজছবি:সংগৃহীত

নাটক শেষ। কিন্তু রেশ থেকে যাবে বহুদিন। থেকে যাবে অনেক গল্প। সত্যিকারের গল্প। একে অপরের সঙ্গে  ঘনিষ্ঠতার গল্প, পারিবারিক সম্পর্কে জড়ানোর এবং শুটিং ইউনিট থেকে একটি পরিবার হয়ে ওঠার পেছনের গল্প। তারকা ও নির্মাতাদের মধ্যে এই সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিক নাটক থেকে। নাটকটি শেষ হচ্ছে আজ।

নাটকটি ছিল তারকাদের স্বপ্ন পূরণের গল্পও। আজ এই নাটকের সব শিল্পীর মন খারাপ।
প্রায় দুই বছর ধরে নাটকটির শুটিং চলে শেষ হচ্ছে গল্পটি। নাটকটি প্রচারের পর থেকেই জনপ্রিয়তা পায়। শুটিংয়ের শুরু থেকেই নির্মাতা, তারকা ও কলাকুশলীদের মধ্যে গড়ে ওঠে সুসম্পর্ক। এই সুসম্পর্ক গড়িয়েছে পারিবারিক বন্ধনে। নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ জানান, শুটিংয়ের সময় তাঁরা একটি পরিবার ছিলেন। অনেক দিন পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হলে যেমন খুশির আমেজ থাকে, ঠিক তেমনভাবেই নাটকটি থেকে গড়ে উঠেছিল তারকাদের সম্পর্ক। প্রতি মাসে শুটিং শুরু হলেই ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ শুটিং বাড়িতে জমত তারকাদের আড্ডা। শুটিং শেষ হওয়ার পর তারকাদের মন খারাপের ঘটনাও ঘটেছে। রাজ বলেন, শর্মিলী আন্টি, মনিরা মিঠু, রুনা খান, শবনম ফারিয়া, সারিকা সাবা থেকে শুরু করে অনেকের মধ্যেই ভালো ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তাঁরা শুটিংয়ে নিয়মিত একে অপরের জন্য উপহার, খাবার লেনদেন করতেন। শুটিং শেষ, তাঁরা এখনো নিয়মিত যোগাযোগ করেন। এসব সম্পর্ক দুই বছরের শুটিং থেকে গড়ে উঠেছে। নাটকের শুটিংয়ের শেষ দিনও সবার মন খারাপ হয়েছে। নাটক শেষ, কিন্তু ঘটনাগুলোর রেশ থেকে যাবে অনেক দিন।’

নাটকের গল্পে দেখা যায়, পরিবারের সবার বয়োজ্যেষ্ঠ শর্মিলী আহমেদ। শুটিং শেষের দিন মন খারাপ হয়েছিল তাঁর। তিনি জানান, নাটকে তাঁকে যাঁরা মা, বোন, দাদি বলে ডাকেন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কগুলো ছিল আপনের মতো। নাটকের পরিবারের মতোই তাঁরা এখনো আপন।

নাটকে তাঁকে যাঁরা শর্মিলী আহমেদকে মা, বোন, দাদি বলে ডাকতেন, তাঁদের সবার সঙ্গে এখন সম্পর্ক আপনের মতো
ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘মনিরা মিঠু আগে আমাকে আন্টি ডাকতেন। নাটকের শুটিং থেকে তিনি আপা ডাকেন। আমাদের মধ্যে এখন সম্পর্ক আপন বোনের মতো। আমার নাতি–নাতনি এবং অন্যান্য চরিত্রে রুনা খান, রাইসাসহ যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁরা প্রায় প্রতিদিনই ফোন দিয়ে খোঁজ নেন। দেখা হচ্ছে না বলে মন খারাপ করেন। এমন সম্পর্ক খুব বেশি নাটকের শুটিং থেকে হয় না। শুটিং থেকে মানুষকে আপন করে নেওয়া, অভিনয়জীবনে এগুলোই বড় পাওয়া। আমাদের এই পরিবারে কোনো ক্রাইসিস নেই।’

অভিনেত্রী মনিরা মিঠু ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে যেখানেই যান, সেখানেই তাঁকে শুনতে হয়, শেফালি খালা। এটি এই অভিনেত্রীর ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিক নাটকের চরিত্রের নাম।

মনিরা মিঠু
ছবি: সংগৃহীত

তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলো মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই অভিনেত্রী জানালেন, চরিত্রটি প্রথম দিকে নেতিবাচক থাকায় তিনি অভিনয় করতে চাননি। পরে ভেবেছিলেন হয়তো কয়েক পর্ব পরই তাঁর চরিত্রটি বাদ পড়বে। কিন্তু শুটিংয়ের প্রথম দিনে ঘটল উল্টো ঘটনা। তিনি বলেন, ‘অভিনয় করেই আমার খুব ভালো লেগেছিল। নাটকটি দর্শক পছন্দ করে। আমার বয়সটা জনপ্রিয়তা হারানোর, কিন্তু নাটকটি আমাকে নতুন করে জনপ্রিয়তা এনে দিল। প্রথম দিকে চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে সম্পর্কগুলোর শুরু হয়েছিল। একসময় বুঝতে পারলাম, সহকর্মীরা অনেকেই আমার আপন হয়ে গেছেন। শর্মিলী আহমেদ, রুনা খান, শবনম ফারিয়া, সারিকা সাবা সবাই এখন আমার পরিবারের সদস্য।’

৯০ দশকে অভিনেত্রী রুনা খান বিটিভির নাটক দেখতেন। সেসব নাটকে বাকের ভাই, মুনাসহ অনেক চরিত্র জনপ্রিয়তা পায়। তাঁর ইচ্ছা ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। একদিন তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ধরে তাঁকে ডাকবেন ভক্তরা।

শবনম ফারিয়ার সঙ্গে রুনা খানের আগের চেয়ে বহু গুণ ভালো সম্পর্ক হয়েছে এই নাটকের শুটিংয়ের সময়
ছবি: সংগৃহীত

সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এই অভিনেত্রীর। তিনি এখন বাইরে বের হলেই শুনতে পান ভক্তরা তাঁকে ‘সালমা ভাবি’ বলে ডাকছে। নাটকটি তাঁর পরিচয় বদলে দিয়েছে। এতেই তিনি খুশি। ওয়েব সিরিজ, ওয়েব ফিল্মে, ইউটিউব নাটকের ভিড়ে একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক এতটা জনপ্রিয়তা দেবে, এটা ভাবেননি রুনা খান। তিনি বলেন, ‘শবনম ফারিয়ার সঙ্গে আগে যে সম্পর্ক ছিল, সেটা বহু গুণ বেড়ে গেছে এই নাটকের শুটিংয়ের সময়। আমাদের এখন প্রায়ই কথা হয়। এমন হয় যে কথা না বললে ভালো লাগে না। রাজ ভাই, সারিকা সাবাহর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। এখন তাঁরাসহ, শর্মিলী আহমেদ, মিঠু আপা, শামীম সরকার, টিমের সবাই আমার আপনজন। নাটক থেকে প্রশংসা ও পরিবার দুটোই পেয়েছি।’

পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ জানান, পরিবারকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মাণ করা এই নাটকের প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে দর্শক নিজেদের খুঁজে পেয়েছে, সেটাই হয়তো সফলতার কারণ।

পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ
ছবি: সংগৃহীত

নাটকটির শেষ নিয়েও ভাবতে হয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘ইমোশনাল একটি জায়গায় গল্প শেষ হবে। আমার নাটকের দর্শক যেমন হাসবে, তেমনি চোখও ভিজে যাবে। কিছু রহস্য রেখে শেষ হবে।’

‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ এনটিভিতে প্রতি মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে প্রচারিত হতো। এ নাটকের তারকারাই এখন পরিচিতি পাচ্ছেন চরিত্রের নামে। নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, সোহেল খান, মনিরা মিঠু, রুনা খান, মুকিত জাকারিয়া, শবনম ফারিয়া, সারিকা সাবাহ, শামীম হাসান সরকার, তামিম মৃধা, রাইসা প্রমুখ।

‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ এনটিভিতে প্রতি মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে প্রচারিত হতো
ছবি: সংগৃহীত