শিল্পীরা কেউ খবর নিল না, আশার মায়ের আক্ষেপ
অভিনেত্রী আশা চৌধুরীর মৃত্যুর সাত দিন পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের কোনো নেতা বা অভিনয়শিল্পী আশার পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি। মৃত্যুর পরে আশার প্রিয় সংগঠনের মানুষদের এমন অবহেলার কথা বলেই কাঁদলেন আশার মা পারভিন আক্তার।
অভিনেত্রী আশা চৌধুরী ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’-এর প্রাথমিক সদস্য ছিলেন। ৩ জানুয়ারি ঢাকার দারুস সালাম এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এই অভিনেত্রী। তারপর থেকে আশার ছোট তিন বোন ও মা–বাবার কান্না থামছে না। শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আশার প্রিয় সংগঠন থেকে কেউ দেখতেও আসেনি। এমনকি এখন পর্যন্ত কেউ ফোন করেও খোঁজখবর নেননি।
আশার মা পারভিন আক্তার জানান, কত মানুষের সঙ্গে আশা অভিনয় করত, কিন্তু কেউ একটা ফোন দিলেন না। কথা বলতে বলতেই তিনি কাঁদতে থাকেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার আশা যে অভিনয় নিয়ে স্বপ্ন দেখত, সেখানকার কেউই ফোন দিল না। কেউ একবার এলও না। দুটো কথা বললেও তো আমরা একটু শান্তি পাইতাম। আমরা কি তাদের কাছে কিছু চাইতাম? মানুষটা এখন নাই, সেই পরিবারের খবর কেন তারা নিবে। আমার মেয়ে কি আর বড় কোনো অভিনয় করত। আমাগো মতো গরিব মানুষের খবর তারা কেন নেবে।’ কথা বলতে বলতে কাঁদছিলেন আশার মা।
আশার আয়েই চলত তাঁদের পরিবারের খরচ। আশা অভিনয়ের পাশাপাশি বনানীর একটি অফিসে চাকরি করতেন। পরিবার চালাতে আশা চিন্তাভাবনা করছিলেন অনলাইনে ব্যবসা করার। তিন বোন এবং মা–বাবাকে ঘিরেই ছিল আশার স্বপ্ন। তাঁর বাবার চাঁদনী চক বাজারে কাপড়ের ব্যবসা থাকলেও করোনায় সেটা অনেক আগেই বন্ধ করতে হয়েছে। মেয়েকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ এই পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আজ পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন করেছিলেন। তথ্যটি জানালেন আশার বাবা। তিনি জানান, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছে। কী কথা হয়েছে সেটা তাঁর স্ত্রী তাঁকে সকালেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি অনেক কিছুই ঠিকমতো মনে রাখতে পারছেন। তিনি আবারও ফোনটি ধরিয়ে দেন তাঁর স্ত্রীকে। আশার মা বলেন, ‘পুলিশ স্যার আমাদের খোঁজখবর নিলেন। আমাদের বললেন, পুলিশ ট্রাকচালককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। মামলার তদন্ত ঠিকমতো হচ্ছে কি না সেটা আমাদের জানাতে বলেছেন। আমরা বলেছি থানায় গেলে ফোন দেব।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম জানান, আশা তাঁদের সংগঠনের প্রাথমিক সদস্য ছিলেন। তাঁর মারা যাওয়ার খবর তিনি জানেন। এই অভিনেত্রীর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত যোগাযোগ করিনি। তবে সংগঠনের কেউ যোগাযোগ করেছে কি না আমি জানি না। আমি খবর নিয়ে জানাব।’
৩ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে আশার বাসায় ফেরার কথা ছিল। তিনি শামীম আহমেদ নামে পরিচিত একজনের বাইকে ফিরছিলেন। পরে রাত দুইটার দিকে এই অভিনেত্রী পরিবারকে শামীম জানান, আশা ট্রাকের ধাক্কায় মারা গেছেন। তাঁদের আড়াই ঘণ্টার হিসাব না মেলায় আশার পরিবার শামীমসহ অজ্ঞাতনামা চারজনের নামে মামলা করেন। শামীম এখন হাজতে রয়েছেন। তদন্ত হলেই শামীমের বিচার শুরু হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহান আহমেদ আজ প্রথম আলোকে জানান, মামলার পর থেকেই তাঁরা ঘাতক সেই ট্রাকটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। কল্যাণপুর থেকে শুরু করে ধামরাই পর্যন্ত বেশ কিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তাঁরা দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাকটিকে গতিবিধি সিসি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ট্রাকের নম্বর এখনো অস্পষ্ট। পরিষ্কার দেখা যায় এমন কোনো ফুটেজ পাচ্ছি না।’ তাদের সিসি ক্যামেরাগুলো দুর্বল ছিল। গাড়ির নম্বরপ্লেট পেছনে ছিল না। তারা ট্রাফিক কন্ট্রোল, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ ও রেল পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তদন্ত এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা নিচ্ছেন।