শুভ না হলে, হয়তো সুশান্ত হয়ে যেতাম

সহশিল্পীদের সঙ্গে অভিনেতা শাহরিয়ার শুভসংগৃহীত
সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে ছোট পর্দার অভিনেতা শাহরিয়ার শুভর কিছু ছবি। সেসব ছবিতে দেখা গেছে, উদ্‌ভ্রান্তের মতো পথে পথে ঘুরছেন তিনি। যেন কোনো মাতাল বা মাদকাসক্ত ব্যক্তির চরিত্রে ঢুকে পড়েছিলেন। কী ঘটেছিল? সেসব জানালেন এই অভিনেতা।

প্রশ্ন :

কেমন আছেন?

এখন ভালো আছি। আগের চেয়ে সুস্থ বোধ করছি।

প্রশ্ন :

এখন কোথায় আছেন?

আমি এখনো জামালপুরের সরিষাবাড়িতেই আছি। আমার মুঠোফোন, মানিব্যাগ থেকে শুরু করে আরও অনেক জিনিসপত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করব।

শুভ অভিনয় করেছেন জয়ার সঙ্গেও
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো দেখে অনেকে বলেছেন, আপনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। কী ঘটেছিল?

গত মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে গিয়েছিলাম ‘অফিসার্স রিটার্ন’ নামের একটি ছবির লোকেশন দেখতে। পরদিন আমাদের কাজ ছিল জমি দেখার। সঙ্গে ছিলেন আমার বন্ধু, কাছের ছোট ভাই টুটুল, প্রযোজক বাহাদুর করিম। লোকেশন দেখা শেষ হলে প্রযোজক গাড়ি রেখে ঢাকায় ফেরেন। পরদিন তাঁর আসার কথা ছিল। আমি রাতে থাকার জন্য ধনবাড়ী কেন্দুয়া বাজারে টুটুলদের বাসায় যাই। বৃহস্পতিবার সকালে টুটুল ও সেখানকার কয়েকজন স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী পরিকল্পনা করে চা ও পানির সঙ্গে কিছু একটা মিশিয়ে আমাকে খাওয়ায়। মূলত আমার গাড়িটা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তাঁরা। পরে আমি বুঝতে পেরে সরে পড়ি। সেই ওষুধের প্রভাবে প্রায় ১২ ঘণ্টা অ্যাবনরমাল ছিলাম। এ সময়ে কী হয়েছে, আমি কিছুই জানি না। কোনোমতে গাড়ির চাবি নিয়ে নিজেকে বাঁচিয়েছি।

শুভ ও শহিদুজ্জামান সেলিম
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো কোত্থেকে তোলা?

জামালপুরের সরিষাবাড়ি। আমি ঘুরতে ঘুরতে এখানে আসি। পরে কিছু মানুষ আমাকে চিনতে পারে। তাঁরা আমার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে আমার পরিচিতজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। সরিষাবাড়ির মানুষ আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।

প্রশ্ন :

অনেকে বলছিলেন আপনি হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন?

ভারসাম্য হারানোর পরে কোথায় গেছি, কী করেছি, কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। পরে আমার সেন্স ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে। তখন আমার কাজগুলো শেষ করতে হাসপাতাল থেকে ভোর চারটার দিকে বের হয়ে যাই।

প্রশ্ন :

সরিষাবাড়ির মানুষ আপনাকে ঢাকার ট্রেনে তুলে দিলেও আপনি ঢাকায় আসেননি কেন?

ট্রেনে উঠেছিলাম। পরে জামালপুর শহরে নেমে পড়ি। এখানে আমার গাড়িসহ আরও বেশ কিছু জিনিসপত্র ছিল। এই কারণে আমি ঢাকা যাইনি।

প্রশ্ন :

আপনার কিছু সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধব বলছিলেন আপনি মাদকাসক্ত। যেটি ঘটেছে সেটি মাদকের প্রভাব।

এটা যাঁরা বলবেন, তাঁরা সহকর্মী নন। তাঁরা পেছন থেকে ক্ষতি করা লোক। তাঁদের কারণেই মিডিয়া থেকে দূরে ছিলাম। শুধু একটা কথা বলব, কে কী করল, সেটা কেউ ঘরে এসে দেখে না। গত তিন বছর আমি সবকিছু থেকে দূরে। সে জন্য আমাকে নিয়ে অনেকেই পজিটিভ–নেগেটিভ অনেক কথাই বলে। কেউ কেউ লিখেছে, আমি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলাম। আসলে সে রকম কিছু না। পেছনে কে কী বলল, সেগুলোয় আমি পাত্তা দিতে চাই না। একটা ঘটনা ঘটলে সেটার মধ্যে কেউ কেউ মসলা দিতে চায় আরকি।

অভিনেতা শোভন ও শুভ
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

কেউ লিখেছেন মাদকাসক্ত বলে আপনার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে?

এখনো আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা আলাদা থাকি। আমাদের বোঝাপড়ার সমস্যা থাকতেই পারে। এ নিয়ে কারও কথা বলার রাইট নেই। কিছু মানুষ সামনে আহা আহা বলবে, আর পেছনে গিয়ে সুর বদলাবে। এসব কারণেই আমি নাটকে কাজ করি না।

প্রশ্ন :

যারা পেছনে অনেক কিছু রটায়, তাদের উদ্দেশে কিছু বলেন তাহলে।

তাদের জন্য মেসেজ একটাই, না জেনে না বুঝে কারও সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করতে না পারলেও খারাপ মন্তব্য করাটা বোকামি। এসব কারণেই মানুষের পরিস্থিতি সুশান্তের মতো হয়। আজ আমি শুভ না হলে, হয়তো সুশান্ত (প্রয়াত বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুত) হয়ে যেতাম।

শুভর সেলফিতে সুইটি
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

বিনোদন অঙ্গন থেকে দূরে থাকার কারণ কী?

আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, টিভি মিডিয়াতে আর কাজ করব না। শুধু ফিল্ম করতে চেয়েছি। মাঝখানে আমি আমার ব্যবসা গোছাচ্ছিলাম। এর মধ্যে ভালো কোনো নাটকের গল্পও পাইনি। সামনে ফিল্মেই নিয়মিত হচ্ছি। পাশাপাশি একটি অনলাইন পত্রিকায় ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছি।

প্রশ্ন :

ঢাকায় ফিরবেন কবে?

আজ দিনের মধ্যে থানায় অভিযোগ এবং অন্যান্য কাজ শেষ করে সন্ধ্যার পর ঢাকা ফিরব।