সাংস্কৃতিক লড়াই হারিয়ে ফেলেছি, এসব ফিরিয়ে আনতে হবে

কুমিল্লার ঘটনা কেন্দ্র করে শারদীয় দুর্গোৎসবে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার প্রতিবাদে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সোচ্চার। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মামুনুর রশীদ

রংপুরের পীরগঞ্জের যেখানে ঘটনা ঘটেছে, ওখানে আগে আমি গিয়েছি। কোনো প্রত্যন্ত জায়গা না, রীতিমতো থানা শহর। গত রোববার রাতে এতগুলো বাড়ি পুড়ল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাহলে কী করছিল?

মামুনুর রশীদ
প্রথম আলো

তারা কেন রক্ষা করতে পারল না? এটা খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এমন ঘটনা ঘটলে বুঝতে সমস্যা হয় না, দেশে কী পরিমাণে মৌলবাদী বেড়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীর সংখ্যা বেড়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি ঘাপটি মেরে বসে আছে।

আমি তো মনে করি, উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। সম্প্রীতিতে আমার দেশ ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে। এই ধরনের সহিংসতার মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রক্রিয়া চলছে। এখন যে দল ক্ষমতায় আছে, তাদের তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

মামুনুর রশীদ
ছবি : সংগৃহীত

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, থানা আওয়ামী লীগ—তারা কী এগুলো রোধ করতে পারছে না? এত সব ঘটনায় কোথাও তো তাদের অস্তিত্ব দেখতে পেলাম না। এসব ঘটনায় আমরা পুলিশের বক্তব্য শুনলাম, অন্য অনেকেই কথা বলছেন। কিন্তু তাদেরকে তো কিছু করতে দেখলাম না।

দেশের মানুষ উসকানির কারণে বিদ্বেষী হয়ে উঠছে। যারা সত্যিকারের ধর্মপ্রাণ মানুষ, তারা কিন্তু সহিংসতা করে না। এসব তো করে সুবিধাভোগীরা। সবচেয়ে বড় কথা, সাংস্কৃতিকভাবে তো আমরা দেশটা নষ্ট করে ফেলছি। সব মিলিয়ে আমি খুবই সংক্ষুব্ধ, কিছুটা হতাশও। এই পরিস্থিতি কী করে উদ্ভব হলো? তার মানে মানুষের মধ্যে যুক্তি কমে গেছে। আর্গুমেন্টিভ যে সমাজ সেটা তো তৈরি হচ্ছে না।

মামুনুর রশীদ
ছবি : প্রথম আলো

এসব দমন করার সামর্থ্য সরকারের আছে, জনগণেরও আছে। দুঃখজনক হচ্ছে, জনগণ থেকে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন। আমাদের দেশে প্রগতিশীল দলগুলোও বিবৃতি দিয়ে বাড়িতে শুয়ে থাকে। তাদের সবার তো পথে নামা উচিত।

আমরা দেখব, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে দোষারোপ করছে। কিন্তু জনগণ কোথায়? জনগণকে নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে, মহল্লায় নামুক না রাজনীতিবিদেরা। দেখা যাক না কোথায় থাকে দুষ্কৃতকারীরা। তারা ভালো করেই জানে যে কিছুই হবে না। দুই দিন কথাবার্তা হবে, এরপর যে যার মতো মিটমাট হয়ে যাবে।

মামুনুর রশীদ
ছবি : সংগৃহীত

শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এসব দমন সম্ভব নয়। জনগণকে নিয়ে লড়াই করতে হবে। সাংস্কৃতিক লড়াই হারিয়ে ফেলেছি, এসব ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারি সংস্থাগুলো ঢাকায় বসে যা করার করে যাচ্ছে, কিন্তু সারা দেশের কোনো খবর নিচ্ছে না। ফেডারেশন বা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরইবা কী কাজ। শুধু শহীদ মিনারের একটা প্রতিবাদ সমাবেশ করলে হবে, মোটেই না। এসব কিন্তু সারা দেশের বিষয়।