হারানোর বেদনায় স্মৃতিকাতর চঞ্চল চৌধুরী

চঞ্চল চৌধুরী
খালেদ সরকার

১১ বছর আগের কথা। ২০০৯ সালে চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয় জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘সাকিন সারিসুরি’। সেখানে অভিনয় করেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। দীর্ঘদিন পর অনলাইনে নিজের এই নাটক দেখতে গিয়ে বেদনাসিক্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেতা। ইতিমধ্যে এই নাটকের প্রিয় তিন সহকর্মীকে হারিয়েছেন তিনি। অকালে তাঁদের হারানোর বেদনা ফেসবুকে শেয়ার করে স্মৃতিকাতর হয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী।
দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একটি পরিবারের মতো হয়ে উঠেছিলেন ওই ধারাবাহিকের অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। একটি টিনের ঘরে দুটি চোকি। শুটিংয়ের ফাঁকে সেটার ওপরেই গাদাগাদি করে বিশ্রাম নিতেন একঝাঁক অভিনয়শিল্পী। সেই পরিবার থেকে চির বিদায় নিয়েছেন অভিনেতা নাজমুল হুদা বাচ্চু, দিলীপ চক্রবর্তী ও গোলাম হাবিব মধু।

‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকে জাপান ডাক্তার চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

চঞ্চল চৌধুরী স্মরণ করে লিখেছেন, ‘আমাদের ভেতর থেকে অকালে হারিয়ে গেছে বন্ধু দিলীপ চক্রবর্তী, চির বিদায় নিয়েছেন শ্রদ্ধেয় অভিনেতা নাজমুল হুদা বাচ্চু ভাই ও গোলাম হাবিব মধুদা।

আজ নাটকটি দেখার সময় তাঁদের জন্য বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠল। আর ফিরে পাব না এই মানুষগুলোকে। সময় হয়তো অনেক বদলে গেছে, কিন্তু মায়া আর ভালোবাসা সবার জন্য এখনো জ্বলজ্বল করছে।’

প্রয়াত নাজমুল হুদা বাচ্চু ভাই

পুবাইলে চটের আগা গ্রামে ‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকের শুটিং হয়েছিল। শুটিংয়ের ফাঁকে আড্ডা ও গল্পে কেটে যেত তাঁদের সুন্দর সময়। সেসব স্মরণ করে চঞ্চল লিখেছেন, ‘তখনো ওই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। বর্ষার সময় প্রত্যন্ত ওই গ্রামে আমরা মাটির রাস্তায় কাদার মধ্যে, খালি পায়ে, হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে, প্রায়ই আছাড় খেয়ে শুটিংয়ে পৌঁছাতাম। বন্যার সময় ওই গ্রামের চারদিকে জল থইথই করত। তখন নৌকায় চড়ে শুটিংয়ে যেতাম। আহা রে চলে যাওয়া অতীত। প্রতিটা দিনের শুটিং ছিল এক একটা উৎসব। সবাই ছিল আন্তরিক।’

গোলাম হাবিব মধু
সংগৃহীত

‘মোশারফ (মোশাররফ করিম), মাসুম আজিজ ভাই, প্রয়াত মধুদা, প্রয়াত নাজমুল হুদা বাচ্চু ভাই, মহসিন ভাই, মামুন ভাই, আ খ ম হাসান, খুশি (শাহনাজ খুশি), রওনক হাসান, শতাব্দী ওয়াদুদ, মুনতাসির সাজু, খসরু, ছন্দা, সানু, সীমানা, শিখা, মিঠু, বরুন, প্রয়াত দিলীপ, শিরীন আপা, আজিজুর হাকিম ভাইসহ আরও অনেককে নিয়ে নাটকটির নির্মাতা লাভলু ভাই পেরেছিলেন একটি পরিবার বানাতে।’

চঞ্চল চৌধুরী

লিখেছেন চঞ্চল। তিনি লেখেন, ‘এখনো আমরা যারা বেঁচে আছি, ভালো কাজের জন্য, এই সম্পর্কটাকেই বেশি অনুভব করি আমি। যা আজকের সময়ে দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু এখনো স্বপ্ন দেখি, এই সব আত্মিক সম্পর্ক আর সততার স্পর্শেই এগিয়ে যাবে আমাদের নাটক।’‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকের একটি চরিত্র ছিল ‘জাপান ডাক্তার’। এত বছর পরও দর্শকের কাছে জনপ্রিয় এ চরিত্রটি।

নাটকটির ওই চরিত্রের সুবাদে, পথে দেখা হলে অনেক ভক্ত তাঁকে জাপান ডাক্তার বলেই ডাকেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দর্শকের কাছেও জনপ্রিয় এই নাটকটি। ফেসবুকের কল্যাণে সেটা জানতে পেরেছেন চঞ্চল। নাটকটির রচয়িতা এবং নির্মাতার উদ্দেশে চঞ্চল লিখেছেন, ‘স্যালুট বৃন্দাবন দাস, স্যালুট সালাউদ্দিন লাভলু।’‘জাপান ডাক্তার’ চরিত্র হয়ে কথা বলার জন্য ইরেশ যাকেরের উপস্থাপনায় সম্প্রতি ‘কেমন আছেন তাঁরা?’ নামে একটি অনলাইন অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ে অংশ নিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। ইরেশের ফেসবুক পেজ থেকে ওই অনুষ্ঠানটি দেখা যাবে।

মেরিল প্রথম আলো অনুষ্ঠানে চঞ্চল চৌধুরী
সংগৃহীত