'প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক' পেলেন অর্থনীতিবিদ

বাংলার প্রকৃতি, জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদকে ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক ২০১৭’ প্রদান করেছে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং চ্যানেল আই। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এক জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁর হাতে এই পদক তুলে দেওয়া হয়।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের হাতে পদক তুলে দেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশতিয়াক আহমদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রইসুল আলম মণ্ডল এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক সফিউল আলম চৌধুরী, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর।
অনুষ্ঠানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষ থেকে থেকে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের হাতে এক লাখ টাকার সম্মাননা চেক তুলে দেন ইমপ্রেস গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ মজুমদার। জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ডা. সরদার এ নাঈম তাঁর হাতে আজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের সনদ তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের জীবন ও কর্ম নিয়ে তৈরি দুটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এই অনুষ্ঠানে মুকিত মজুমদার বাবুর লেখা ‘স্বপ্নে প্রকৃতি’ গ্রন্থ আর ‘প্রকৃতি ও জীবন’ অনুষ্ঠানের গত এক বছর চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত পর্বগুলো নিয়ে তৈরি ডিভিডির মোড়ক উন্মোচন করে অতিথিরা।
ইশতিয়াক আহমদ বলেন, বর্তমান সরকার সবুজ বাঁচাতে দেশজুড়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এই আন্দোলনে বাংলার মানুষ যুক্ত হয়েছেন। এখন মানুষের মনে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশেষ তাগিদ তৈরি হয়েছে। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও ব্যাপক সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে নতুন প্রজন্ম।
পদকপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘যে যার অবস্থান থেকে প্রকৃতি সংরক্ষণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ পদক আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
মুকিত মজুমদার বলেন, নিজের ঘর থেকে সচেতন হতে হবে। তবেই প্রকৃতি ও পরিবেশকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন আট বছর আগে যে পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, তা অব্যাহত আছে। আরও নতুন নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, যা পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখবে।
অনুষ্ঠানের শুরু হয় চ্যানেল আইয়ের বাংলা গানের শিল্পী খায়রুলের তুষার কান্তি সরকারের লেখা ‘সবার মাঝে ছড়িয়ে গেছে প্রকৃতি ও জীবন’ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এ সময় গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে একদল নৃত্যশিল্পী। দেশের গান পরিবেশন করেন রথীন্দ্রনাথ রায় ও শাহীন সামাদ। অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ও প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
২০১১ সালে ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক’ পেয়েছেন দ্বিজেন শর্মা, ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান, ২০১৩ সালে পাখিপ্রেমিক ইনাম আল হক, ২০১৪ সালে পানিসম্পদ গবেষণা ও ব্যবস্থাপনায় অবদানের জন্য ড. আইনুন নিশাত, ২০১৫ সালে বন্যপ্রাণীবিদ অধ্যাপক ড. নূর জাহান সরকার।
দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নানা ঝুঁকি নিয়ে মুকিত মজুমদার বাবুর নেতৃত্বে প্রকৃতি, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সব মহলে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। প্রকৃতি সংরক্ষণের অভিপ্রায়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। ২০১০ সালের ১ আগস্ট চ্যানেল আইয়ে শুরু হয় নতুন মাত্রার গবেষণা, তথ্যবহুল, সচেতনতা ও শিক্ষামূলক ধারাবাহিক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’।